বাংলা গানে নিষেধাজ্ঞা, বাংলা পক্ষের বিক্ষোভে পিছু হটল কলকাতার নামীদামী রেস্তোরাঁ
শহর কলকাতার রেস্তোঁরাতে বাংলা গান চালাতে অস্বীকার করার প্রতিবাদে মুখর সঙ্গীত জগত থেকে শুরে করে সাধারন মানুষজন। বাংলা পক্ষও এই ব্যবস্থার চরম প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সংস্থার মুখ্য পারিষদ কৌশিক মাইতি জনতার কথা কে জানান বাংলার রাজধানী বাঙালির রাজধানী কলকাতায় সেহগালের মালিকানাধীন ব্রডওয়ে রেস্তোঁরাতে বাংলা ভাষার গান প্রোহিবিটেড, নিষিদ্ধ। বাংলায় বহিরাগত যত বাড়বে তত কোনঠাসা হব আমরা আমাদের মাটিতে। আজ বাংলার রেস্তোরাঁয় বাংলা ভাষায় গান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, একদিন তোমার মুখে তোমার ভাষার গান, শব্দ নিষিদ্ধ করবে।রবিবার সন্ধায় বাংলা পক্ষের সদস্যরা গণেশ চন্দ্র এভিনিউতে চাঁদনীচক মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন ওই বার কাম রেস্তোঁরাতে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। তাঁদের অভিযোগ, ওই বারে বারাসত থেকে শ্রীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পরিবার নিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারতে এসে টানা হিন্দী গান চলছে বলে একটা বাংলা গান শোনানোর অনুরোধ জানান। তাঁকে কতৃপক্ষ জানান এখানে বাংলা গান বাজানো নিষেধ আছে। মালিকের নির্দেশ ছাড়া তাঁরা এখানে বাংলা গান চালাতে পারবেন না।বাংলা পক্ষ তাঁদের প্রতিবাদ সভা থেকে আওয়াজ তোলেন ওই রেস্তোঁরাতে বাংলা গান নিষিদ্ধ হলে বাংলার বুকে ওই রেস্তোঁরাকেও নিষিদ্ধ করা হোক। এরপর তাঁরা ওই রেস্তোঁরাতে প্রবেশ করে দ্বীজেন্দ্রলাল রায়ের ধন ধান্য পুষ্পে ভরা গানটি সমবেত ভাবে গান এবং ওই রেস্তোঁরাতে উপস্থিত সকল বাঙালিকে অনুরোধ করেন গানটি তাঁদের সঙ্গে সমবেত ভাবে গাওয়ার জন্য। এর পর তাঁরা মুক্তির মন্দির সোপান তলে, আমি বাংলায় গান গাই- গেয়ে আরও জোরালো প্রতিবাদ তোলে বাংলা পক্ষ। বাংলাপক্ষ-র প্রতিবাদের ঝড়ে পিছু হঠে সেই রেস্তোঁরাতে বেজে ওঠে এই পথ যদি না শেষ হয়...... কৌশিক মাইতি আরও জানান, তাঁদের প্রতিবাদে পিছু হঠে রেস্তোঁরা মালিকপক্ষ ক্ষমা চেয়ে নেন। কতৃপক্ষ কথা দিয়েছে সেখানে বাংলা গান বাজবে। তিনি বলেন, বাঙালি এক হলে বাংলার শত্রুরা লেজ গুটিয়ে পালাবে। তিনি বলেন এই জয় প্রতিটা বাঙালি শিল্পী, প্রতিবাদী বাঙালির জয়। এভাবেই আমরা জিতব, বাঙালি জিতবে। প্রতিবাদ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন বাংলা পক্ষর শীর্ষ পরিষদ সদস্য কৌশিক মাইতি, সোয়েব আমিন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সম্পাদক প্রবাল চক্রবর্তী, উত্তর চব্বিশ পরগনা শিল্পাঞ্চলের সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ, বাংলা পক্ষর সামাজিক মাধ্যম সমন্বায়ক সায়ন মিত্র প্রমুখ।এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে সঙ্গীত শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায় বলেন বাংলা ভাষা আমাদের নিজেদের ভাষা, আমাদের বাংলায় আমরা বাংলায় কথা বলি, বাংলায় গান গাই, আবশ্যই অনান্য ভাষা যেমন হিন্দী, ইংরাজি এবং উর্দুর প্রতি আমাদের সমান শ্রদ্ধা আছে, সব ভাষাকেই সম্মান করি। বিশেষ করে নিজের মাতৃ ভাষাকে তো অবশ্যই সম্মান করি। তাই বাংলায় বসবাসকারী সকলকে আমার অনুরোধ আপনারা বাংলা গান, কবিতা, সাহিত্য, নাটক ও সিনেমাকে শ্রদ্ধা করুন ভালোবাসুন এবং আমাদের বাংলাকে আরও অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে চলুন। আরও এক সঙ্গীত শিল্পী ভুমী ব্যন্ডের সৌমিত্র রায় বলেন, আজ ওখানকার ঘটনা শুনলাম মনটা খারাপ হয়ে গেলো, আমি বিশ্বাস করি গানবাজনায় কোনও জাতি বা কোনও ভাষা থাকে না। যে ভাষায় হোক সেটা উপভোগ করি। আমরা বিদেশে মন্টেরিয় জ্যাজ ফেস্টিভ্যাল মত অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষায় গান গেয়েছি, ইউনাইটেড নেশন মত যায়গায় ভুমী বাংলায় গান করেছে, যেখানে কোনও বাঙ্গালি ছিলো না। ব্রডওয়ের মত একটা যায়গায় একটা দুটো বাংলা গান গাইলে ক্ষতিটা কি হত?এই ঘটনার প্রতিবাদ কি ভাবে করব আমি জানি না। আমার প্রতিবাদের ভাষা হচ্ছে গানকে গানের মত থাকতে দাও। ওদের গাইতে দাও। বাংলায় থেকে বাংলায় কথা বলতে দাও। বলতে দাও নয়, আপনারাও বলুন।সঙ্গীত শিল্পী ইমন সেন বলেন, বাংলায় থেকে যদি বাংলা গান না নিশিদ্ধ করা হয়ে থাকে, তাহলে ওই রেস্তোরাঁ কেই বাংলায় নিশি করা হোক। আর যদি পাব খোলা রাখতে হয় তাহলে বাংলা গান চালাতে হবে। এই প্রতিবাদ কর্মসুচীর জন্য বাংলা পক্ষ কে ধন্যবাদ জানান। জয় হৃদয় বলে তাঁদের জয় কামনা করেন।