ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অশ্লীল ছবি নাবালিকার, মালদায় গ্রেফতার চারজন
নাবালিকাকে খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অশ্লীল ছবি তোলার অভিযোগে পুরাতন মালদা থানা এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেফতার করলো ঝাড়খণ্ডের রাঁচি জেলার পুলিশ। সোমবার পুরাতন মালদার কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেফতার করেছে রাঁচি জেলার পুলিশ। যদিও এই ঘটনায় আরও একজন গা ঢাকা দেওয়াই তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে দুইজন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া এবং বাকি দুইজন একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিন ধৃত চারজনকে মালদা আদালতের মাধ্যমে সাত দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন জানাই রাঁচি পুলিশ। ঝাড়খন্ডের রাঁচি জেলার নাগরি থানার অন্তর্গত আঙ্গোর রোড এলাকার একটি হোটেলেই পুরাতন মালদার ওই নাবালিকার ছবি তোলার পর ব্ল্যাকমেলের অভিযোগের ওঠে পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে। ওই নাবালিকার পরিবার পরবর্তীতে মালদায় এসে সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জিরো এফআইআর-এর ভিত্তিতে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ রাঁচি জেলা পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র পাঠিয়ে দেয়। তারপরেই ওই জেলার পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয় রাঁচি পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরাতন মালদা থানার মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নারায়ণপুর এলাকার এক চিকিৎসক তার ১৪ বছরের নাবালিকা মেয়েকে গত বছর নভেম্বর মাসে রাঁচিতে নিয়ে যান একটি স্কুলে ভর্তির বিষয়ের জন্য। সেই সময় রাঁচির যে হোটেলে ওই চিকিৎসক তার মেয়েকে নিয়ে উঠেছিলেন, সেই হোটেলে পুরাতন মালদা পুরসভা এলাকার ওই পাঁচজন যুবক ছিল। তারাও নিজেদের কাজে রাঁচিতে গিয়েছিল। সেই সুবাদে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর সেই সময় রাতে ওই চিকিৎসক তার মেয়েকে হোটেল রুমে রেখে, বাইরে খাবার আনতে যান। তখন এই পাঁচ যুবক ফন্দি এঁটে ওই নাবালিকাকে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। অচৈতন্য অবস্থায় ওই নাবালিকার অশ্লীল ছবি মোবাইলে তোলা হয়। পরে ওই নাবালিকাকে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেওয়া হয়। ৮ নভেম্বর এই ঘটনার পর ওই নাবালিকা রাঁচির হোটেলে অসুস্থ বোধ করে। তড়িঘড়ি চিকিৎসক বাবা মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে মালদায় চলে আসেন। এরপর থেকে শুরু হয় ওই পাঁচ যুবকের ব্ল্যাকমেলের কর্মকাণ্ড। ঘটনার পর থেকেই কয়েকদিন ধরেই পুরাতন মালদার ওই পাঁচ যুবক ওই নাবালিকাকে ফোন করে মোটা টাকার দাবি করে। এরপরই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ওই নাবালিকা। মেয়ের মানসিক পরিস্থিতির বিষয়ে সন্দেহ হতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন চিকিৎসকের পরিবার। এরপরই গোটা ঘটনার কথা বলে ফেলেন ওই নাবালিকা। বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের লোকেরা গত ১১ নভেম্বর পুরাতন মালদা থানায় এলাকার পাঁচজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পরবর্তীতে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ জিরো এফআইআর-এর মাধ্যমে রাঁচি জেলার নাগরি থানায় সেই অভিযোগপত্র পাঠিয়ে দেয়। শুরু হয় তদন্ত। দুই মাস কেটে যাওয়ার পর জানুয়ারির মাসেই অভিযুক্তদের নামে ওয়ারেন্ট জারি করে রাঁচি আদালত। তারপরেই এদিন রাঁচি জেলার পুলিশ পুরাতন মালদা থানার সহযোগিতা নিয়ে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে। একজন পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ধৃতদের নাম, অভিষেক দত্ত, সোমনাথ শর্মা, শান্তনু মন্ডল এবং অর্কপ্রভ দত্ত। এদের বাড়ি পুরাতন মালদা পুরসভার চিতোরপুর এবং তৈলমুন্ডাই এলাকায়। এদিকে ওই নাবালিকার পরিবার জানিয়েছেন, মেয়েকে যখন রাঁচিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই সময় পুরাতন মালদার এই পাঁচ যুবক একই হোটেলে উঠেছিল। নিজেদের এলাকার বলেই পরিচয় হয়। এরপরে ওই চারজন এরকম কাণ্ড ঘটবে ভাবতেই পারা যায়নি। নাবালিকাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য মোটা টাকা দাবিও করেছিল অভিযুক্তরা। ওই নাবালিকা যদি রাঁচিতে ঘটনার কথা বলতো, তাহলে হয়তো সেখানে পুলিশকে অভিযোগ জানাতে যেত। পরবর্তীতে মালদায় ফিরে আসার পর বিষয়টি জানতে পারা যায়। এরপরই পুলিশের দ্বারস্থ হই। যদিও এদিন মালদা আদালতে যাওয়ার পথে এক অভিযুক্ত অর্কপ্রভু দত্ত জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। এরকম কোনও ঘটনায় ঘটেনি। পুরাতন মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, এক নাবালিকাকে মোবাইলে অশ্লীল ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে রাঁচি জেলার পুলিশ মালদায় এসেছিল। সংশ্লিষ্ট থানার সহযোগিতা নিয়ে চারজন যুবককে গ্রেফতার করে ট্রানজি রিমান্ডে রাঁচিতে নিয়ে গেছে ঝাড়খণ্ডের পুলিশ।