লর্ডস টেস্টের শেষ দিনে নতুন বলে দ্রুত ভারতের শেষ ৪ উইকেট তুলে নেওয়া লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের। অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালেন মহম্মদ সামি ও যশপ্রীত বুমরা। দুজনের অবিস্মরনীয় ইনিংস ভারতকে শুধু সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে বার করে নিয়ে আসেনি, পৌঁছে দিয়েছিল জয়ের দোরগোড়ায়। সামিবুমরা জুটি শুধু দেশের মান বাঁচায় নি, কেড়ে নিয়েছিল রুটের মুখের গ্রাস। দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ঐতিহাসিক লর্ডসে অবিস্মরনীয় জয়। ইংল্যান্ডকে ১৫১ রানে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।আরও পড়ুনঃ খেলা হবে দিবসে ডিজে বাজিয়ে চিয়ার লিডারদের মাঠে নাচানো নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্কটি২০ যুগে টেস্ট ক্রিকেট নাকি হারিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস ঘাটলে কথাটার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। একদিন আগেই টানটান উত্তেজনার ম্যাচে পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ভারতইংল্যান্ড টেস্টও পৌঁছে গিয়ে চূড়ান্ত ক্লাইম্যাক্সে। প্রথম দিন থেকেই পেন্ডুলামের মতো দৌদুল্যমান। কখনও ভারতের দিকে, কখনও আবার ইংল্যান্ডের দিকে। পঞ্চম দিন তো একসময় মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ডের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেখান থেকে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন টিম ইন্ডিয়ার। নায়ক অবশ্যই মহম্মদ সামিযশপ্রীত বুমরা। ব্যাট হাতে এই দুজন পৌঁছে দিয়েছিল লড়াই করার জায়গায়। ক্রিকেট দেবতাও নিশ্চিতভাবে কুর্নিশ করবে সামিবুমরার প্রাইসলেস ইনিংস।আরও পড়ুনঃ এএফসি কাপের প্রথম প্রতিপক্ষ নিয়ে কেন সতর্ক হাবাস?তৃতীয় দিল শেষ বেলা থেকেই উত্তপ্ত লর্ডস। জিমি অ্যান্ডারসনকে একের পর এক বুমরার বাউন্সার দেওয়াকে কেন্দ্র করে। অ্যান্ডারসনের সঙ্গে বুমরার বাকযুদ্ধ। পরে বাটলারের সঙ্গে, যোগ দেন মার্ক উডও। উডের বাউন্সার হেলমেটে লাগতেই অন্য চেহারায় বুমরা। মুখে নয়, জবাব দিয়ে গেলেন ব্যাটে। লর্ডসেই ব্রিটিশ রাজের পতন ঘটাতে যেন বদ্ধপরিকর।ভারতের লড়াইয়ে ফেরার ভিত গড়ে দিয়েছিলেন চেতেশ্বর পুজারা ও অজিঙ্কা রাহানে। চাপে পড়লেই জ্বলে ওঠা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। চতুর্থ দিন ভারত যখন ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল, রুখে দাঁড়ান পুজারারাহানে। দুজনে মিলে জুটিতে ১০০ রান তুলে দলকে প্রাথমিক বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। দুই ওপেনার রাহুল (৫), রোহিত (২১) দ্বিতীয় ইনিংসে দলকে ভরসা দিতে পারেননি। কোহলিও (২০)। দলের সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে রুখে দাঁড়ান পুজারা ও রাহনে। দুর্ভাগ্যের শিকার না হলে বড় রান পেতেন পুজারা (৪৫)। মার্ক উডের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বল ব্যাটের কানায় লেগে রুটের হাতে। রাহানে (৬১) অবশ্য অর্ধশতরান হাতছাড়া করেননি।আরও পড়ুনঃ অবশেষে ইস্টবেঙ্গলকে চূড়ান্ত চুক্তিপত্রের সংশোধিত খসড়া পাঠাল শ্রী সিমেন্টচতুর্থ দিনের শেষে ভারতের রান ছিল ১৮১/৬। ক্রিজে ছিলেন ঋষভ পন্থ (১৪) ও ইশান্ত শর্মা (৪)। ঋষভের (২২) ওপর দায়িত্ব ছিলে দলকে টেনে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু পঞ্চম দিন সকালে দলকে বেশি টানতে পারেননি। ইশান্ত মূল্যবান ১৬ রান যোগ করেন। তিনি যখন ফিরে যান, দলের রান ২০৯। সকলেই ধরে নিয়েছিলেন, ভারতের প্রথম ইনিংসের সমাপ্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা। এরপরই শুরু সামি (অপরাজিত ৫৬) ও বুমরার (৩৪) সেই অবিস্মরনীয় লড়াই। ইশান্ত ১৬ রানে লেগ বিফোর হতে ভারতের অষ্টম উইকেট পড়ে ২০৯ রানে। লিড তখন ১৮২। ইংল্যান্ড যখন জয়ের স্বপ্ন দেখছে, তখনই রুখে দাঁড়ান সামি ও বুমরা। শেষ পর্যন্ত তাঁদের জুটি ভাঙতে পারেননি ইংল্যান্ডের বোলাররা। অসমাপ্ত নবম উইকেট জুটিতে সামি ও বুমরা যোগ করেন রেকর্ড ৮৯ রান। লাঞ্চের পর ৮ উইকেটে ২৯৮ তুলে যখন ইংল্যান্ডকে জেতার জন্য ২৭২ রানের টার্গেট ছুড়ে দিতে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেন কোহলি, তখন সামি অপরাজিত ৫৬ রানে।আরও পড়ুনঃ ১২ ঘন্টার দীর্ঘ লড়াই শেষে ১২ তম ইন্ডিয়ান আইডল স্নিগ্ধ হাওয়া পবনদীপসামিবুমরা জুটি ব্যাট করার সময় বারবার মাথায় হাত দিচ্ছিলেন রুট। দেওয়াল লিখনটা তখনই হয়তো চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। চতুর্থ ইনিংসে ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে ভেঙে পড়ার ঐতিহ্য রয়েছে রুটের ইংল্যান্ডের। লর্ডসেও তার ব্যাতিক্রম নয়। ২৭১ রানে এগিয়ে থাকাটাই আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল কোহলি ব্রিগেডকে। রুটদের ওপর শুরু থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ার রসদ ছিল ওই ২৭১র মধ্যে। প্রথম দুই ওভারে সামিবুমরা জুটি যেভাবে ইংল্যান্ডের ওপর আঘাত হেনেছিলেন, তা থেকে বেরিয়ে আসার মতো দক্ষতা নেই এই ইংল্যান্ড দলের। রুট (৩৩), বাটলার (২৫) কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছিলেন বুমরা (৩/৩৩), সিরাজরা (৪/৩২)। শেষ পর্যন্ত ৫১.৫ ওভারে ১২০ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস।