২০১৯২০ মরশুমে রনজি ট্রফি জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেছিল বাংলা। দুরন্ত লড়াই করেও শেষরক্ষা হয়নি। সৌরাষ্ট্রর কাছে ফাইনালে হেরে রনজি জয়ের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গিয়েছিল বাংলার। এই মরশুমেও স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন অভিমন্যু ঈশ্বরণরা। মধ্যপ্রদেশের কাছে সেমিফাইনালে হেরে স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল। কেন বারবার ব্যর্থতার মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাকে? পর্যালোচনা করতে বসে উঠে আসছে একাধিক কারণ। কখনও ব্যাটিং ব্যর্থতা, কখনও আবার বোলারদের ব্যর্থতার জন্যই ডুবতে হচ্ছে বাংলাকে। এবছর মধ্যপ্রদেশের কাছে হারের জন্য বিশেষজ্ঞরা ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখছেন। দলের ব্যাটারদের ওপর স্বয়ং কোচ অরুণলালেরই তেমন আস্থা নেই। ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে ৯ জন ব্যাটারের হাফ সেঞ্চুরির বেশি রানের সুবাদে রানের পাহাড় গড়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধেও ব্যাটাররা জ্বলে উঠবেন। কিন্তু ল অফ অ্যাভারেজ বলে একটা কথা আছে। আর ঝাড়খণ্ডের বোলিং শক্তির সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের বোলিং শক্তির আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে। ভাল বোলিংয়ের সামনে পড়তেই বাংলার ব্যাটিংয়ের কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে আসে। তাড়াছা মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগেই কুমার কার্তিকেয়ার আতঙ্কে ভুগছিল বাংলা শিবির। ম্যাচে সেই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি অভিষেক রমণ, সুদীপ ঘরামিরা। কোচ অরুণলালের মুখেও শোনা গেছে ব্যাটারদের আতঙ্কের কথা। বাংলার কোচ বলছিলেন, শুরু থেকেই যদি ব্যাটাররা ভয় পেয়ে যায়, তাহলে রান করবে কীভাবে? শুধু কি ব্যাটারদের ব্যর্থতার জন্যই এবার সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যেতে হয়েছে বাংলাকে? বোলারদের ব্যর্থতার কথাও উঠে আসছে। নিজেদের পছন্দমতো পরিবেশ না পেলে জ্বলে উঠতে পারছেন না মুকেশ কুমার, আকাশ দীপরা। ইডেনের মতো ঘাসে ভরা উইকেট না পেলে ভাল বল করতে পারছে না। সব জায়গায় তো আর পছন্দমতো উইকেট পাওয়া যাবে না। সব ধরণের উইকেটেই মানিয়ে নিতে হবে। ভাল মানের স্পিনারের অভাবেও ভুগতে হচ্ছে বাংলাকে। উৎপল চ্যাটার্জি, শরদিন্দু মুখার্জি, সৌরাশিস লাহিড়ীর মতো স্পিনার কোথায় বাংলায়? একজন ভাল মানের অফ স্পিনার এখনও তুলে নিয়ে আসতে পারল না বাংলা। সবেধন নীলমনি একজন রয়েছেন। ঋত্বিক চ্যাটার্জি। অথচ তাঁকে খেলানোর সাহস দেখাতে পারে না টিম ম্যানেজমেন্ট। আলুরের মাঠে মধ্যপ্রদেশের স্পিনাররা দুরন্ত বোলিং করে গেল। আর বাংলার স্পিনাররা প্রথম ইনিংসে জ্বলে উঠতেই পারেননি। কোচ অরুণলালের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আধুনিক কোচিংয়ের ধারণার সঙ্গে সড়গড় নন অরুণলাল। তাঁর কোচিং পদ্ধতি নিয়ে দলের অনেকেই অসন্তুষ্ট। ম্যাচের আগে টিম মিটিংয়ে স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নাকি কোনও আলোচনাই হয় না। দল কীভাবে খেলবে, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কীভাবে পরিকল্পনা বদলাবে, সেসব বিষয় নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামান না বাংলার কোচ। টিম মিটিংয়ে নাকি শুধু অতীতের প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসেন। অধিনায়ক কী চাইছেন, প্রথম একাদশে কোন কোন ক্রিকেটারকে নিয়ে অধিনায়কের কী পরিকল্পনা, সেসব বিষয় নিয়ে একেবারেই আলোচনা করেন না। পুরনো পদ্ধতিকেই দিনের পর দন আঁকড়ে ধরে থেকেছেন। প্রশ্ন উঠছে প্রথম একাদশ নির্বাচন নিয়েও। বিপক্ষ দলে যখন একাধিক বাঁহাতি ব্যাটার, তখন কেন একসঙ্গে দুজন বাঁহাতি স্পিনার খেলানো হয়েছিল সেমিফাইনালে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনায়াসে খেলানো যেত অফস্পিনার ঋত্বিক চ্যাটার্জিকে। শাহবাজ আমেদের সঙ্গে প্রদীপ্ত প্রামানিককে খেলানোর কোনও যুক্তি ছিল না। ঈশান পোড়েলকে বসিয়ে রাখাটাও অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর পরিবর্তে সায়নশেখর মণ্ডল বল হাতে একেবারেই দাগ কাটতে পারেননি। গতি ও বাউন্স দিয়ে ঈশান পোড়েল হয়তো সমস্যায় ফেলতে পারতেন মধ্যপ্রদেশের ব্যাটারদের। টিম ম্যানেজমেন্ট ভেবেছিল, সায়নশেখরের ব্যাট থেকে কিছু রান পাওয়া যেতে পারে। ৬ জন ব্যাটার ব্যর্থ হলে ৭ নম্বর ব্যাটারের কাছ থেকে ভাল কিছু প্রত্যাশা করাটাই বোকামি। সুদীপ চ্যাটার্জির মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারকেও প্রথম একাদশের বাইরে রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শুরুতে উইকেট হারালে যেখানে দল চাপে পড়ে যাচ্ছে, সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে অভিষেক পোড়েলকে তিন নম্বরে পাঠানোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।