U-19: সংসারে চরম অভাব–অনটন, দেশের হয়ে খেলার লক্ষ্যে পূর্ব বর্ধমানের তরুণীর অদম্য লড়াই
দীর্ঘদিন আগেই বাবা মারা গেছেন। মায়ের কাছে বেড়ে ওঠা। সেই মেয়ের চোখে একরাশ স্বপ্ন বড় ক্রিকেটার হওয়া। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের বড়বেলুন গ্রামের মেয়ে শ্রীলেখা রায়। স্বপ্নপূরণ হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে বাংলার এই মহিলা ক্রিকেটার।ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ই স্ত্রী ও কন্যাকে ছেড়ে চলে যান শ্রীলেখা রায়ের বাবা। মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন তিনি। ৮ বছর আগে মারা গিয়েছেন। ছোট থেকেই মায়ের কাছে মানুষ হয়েছে শ্রীলেখা। বাবাকে হারানোর পর রাস্তার ধারে ঘুঘনি বিক্রি করে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। তবু খেলার নেশা তাকে কখনও ছাড়েনি। বাড়ির কাছে ছেলেদের ক্রিকেট খেলা দেখেই উৎসাহিত হয়েছিল ছোট্ট শ্রীলেখা। একদিন হাজির হয় অগ্রগামী ক্লাবে অনির্বান হাজরা ও নীলকন্ঠ পাঁজার কাছে। সেখানেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি শ্রীলেখা রায়ের। জেলা ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরমেন্সের পর জায়গা হয় দমদম বিডব্লুসিসি ক্লাবে। এখানেই শ্রীলেখা রায়কে ঘষে মেজে তৈরি করেন বাংলা মহিলা ক্রিকেটের দুই মুখ মিঠু মুখার্জি ও বিনীতা রায় মৌলিক। ২০১৫ সাল থেকেই এই কোচিং সেন্টারে প্রথাগত ক্রিকেট শিক্ষা শুরু।বাংলার বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ না পেয়ে ২০১৭ সালে শ্রীলেখা পাড়ি দেয় মিজোরামে। দুটি মরশুম সেখানে কাটিয়ে আবার ফিরে আসে বাংলায়। এই মরশুমে বাংলার জার্সি গায়ে খেলছে শ্রীলেখা। তার নজরকাড়া পারফরমেন্সের সুবাদে এবছর মহিলাদের অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে খেলার সুযোগ পায়। চ্যালেঞ্জারে মোট চারটি দল অংশ নিয়েছিল। ভারত এ, বি, সি এবং ডি। ভারত এ দলে ছিল শ্রীলেখা। দুটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। একটা ম্যাচে ৩ ওভার এবং অন্য ম্যাচে ৫ ওভার বোলিং করার সুযোগ এসেছিল। ব্যাট হাতে দ্বিতীয় ম্যাচে ১৭ রান করেছিল বাংলার এই অলরাউন্ডার।মা কলকাতায় বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে। সামান্য আয় দিয়েই মেয়ের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। শ্রীলেখা রায় বলছিল, যেদিন সিনিয়র জাতীয় দলে সুযোগ পাব, সেদিনই আমার স্বপ্ন পূরণ হবে। অর্থের অভাবে খেলার সরঞ্জাম কিনতে পারে না শ্রীলেখা। চ্যালেঞ্জার্স ট্রফি খেলে ফিরে আসার পর শ্রীলেখার বাড়িতে ছুটে গেছেন ভাতার থানার ওসি। তুলে দিয়েছেন খেলার সরঞ্জাম। ভবিষ্যতে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। শ্রীলেখার জন্য গর্বিত ভাতারের বড়বেলুন গ্রামের মানুষ। গ্রামের মানুষকে আরও গর্বিত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চায় শ্রীলেখা।