নেতাজির স্মরণে রাজ্যে পৃথক যোজনা কমিশন গঠনের ঘোষণা মমতার
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর চিন্তাধারাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কেন্দ্রীয় যোজনা কমিশনেরর আদলে রাজ্যে পৃথক যোজনা কমিশন গড়ে তোলা হবে। রবিবার নেতাজি জয়ন্তীতে ময়দানে নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, নেতাজি যোজনা কমিশনের পরিকল্পনা করেছিলেন। মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ তৈরি করেছে। এই সিদ্ধান্ত লজ্জার । একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আজ ঘোষণা করেছেন, রাজ্যে নেতাজির নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হবে। তাঁর নামে বাঁকুড়াতে ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এনসিসির কায়দায় স্কুল-কলেজে তৈরি হবে জয় হিন্দ বাহিনী। মুখ্যমন্ত্রী জানান,আপাতত করোনা পরিস্থিতির জন্য এই বাহিনী গড়ার কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে।শুধু তাই নয়, নেতাজির স্মৃতিতে আলাদা সংগ্রহশালা করার কথা তিনি ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে রাজ্য সরকার একগুচ্ছ কর্মসূচি দিচ্ছে। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল ঋষি অরবিন্দ যে সেলে দীর্ঘদিন বন্দী ছিলেন, সেখানেও বিশেষ মিউজিয়াম তৈরি করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছে, স্বাধীনতা সংক্রান্ত, নেতাজির জীবন নিয়ে যা যা নথিপত্র রাজ্য সরকারের কাছে ছিল তা সমস্তই প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। সেই সমস্ত তথ্য ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং ১৫ থেকে ২১ আগস্ট রাজ্যের সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীর মূর্তি ফুল এবং আলো দিয়ে সাজানো হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন।মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলার যে সমস্ত এলাকা স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত, সেখানে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হবে। শোনানো হবে সেই ইতিহাস। পাশাপাশি, তাম্রলিপ্ত সরকার গঠনের দিনও উদযাপিত হবে তমলুকে। প্রকাশিত হবে বিশেষ পুস্তিকা। যেখানে স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত নারীদের নিয়ে তৈরি হবে বিশেষ পুস্তিকা। তৎকালীন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও বই প্রকাশ করা হবে।এদিন দুপুর ঠিক ১২ টা বেজে ১৫ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রী শঙ্খ বাজিয়ে নেতাজির জন্ম মুহূর্তে তাকে শ্রদ্ধা জানান। বেজে ওঠে সাইরেন। মঞ্চে নেতাজির গান গাইতে শোনা যায় নেতাজি পরিবারের সদস্য সুগত বসু ও সুমন্ত্র বসুকে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি নেতাজির পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অমর জওয়ান জ্যোতি নিভিয়ে দেওয়া এবং ইন্ডিয়া গেটে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি বসানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন।শুধুমাত্র মূর্তি বসিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা জানানো যায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নাম না করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন যাঁরা ধর্মের নামে দেশ ভাগ করতে চাইছেন, তাঁদের উচিত নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ পড়ে দেখা। ভাগাভাগি করে, দেশভাগ করে জাতীয়তাবাদ দেখানো যায় না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন তিনি চান,গান্ধীজি কাকে বেশি ভালবাসতেন, তা নিয়ে বিতর্ক হোক। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে পড়ানো হোক দেশপ্রেমের ইতিহাস। একটা অমর জ্যোতি নিভিয়ে দিয়ে, শুধু নেতাজির মূর্তি বসিয়ে সুভাষচন্দ্রকে শ্রদ্ধা জানানো যায় না।