বুধবার পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসক কার্যালয়ের বিবেকানন্দ মিটিং হলে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও স্যার রাসবিহারী ঘোষ স্মৃতি রক্ষা কমিটির যৌথ উদ্যোগে এক ঐতিহাসিক জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতা সংগ্রামী, আইনজ্ঞ, সমাজসংস্কারক স্যার রাসবিহারী ঘোষের পৈতৃক জমি আনুষ্ঠানিকভাবে পুর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের হাতে হস্তান্তর করা হল। এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসকের কার্যালয়ে বিবেকানন্দ মিটিং হলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্যার রাসবিহারী ঘোষ স্মৃতি রক্ষা কমিটি জমিটি জেলাশাসক ও কালেক্টরের হাতে তুলে দেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসক শ্রীমতী আয়েশা রানি এ., আইএএস এদিন বলেন— “এই জমি কেবল একটি সম্পত্তি নয়, এটি জাতি গঠনের এক জীবন্ত প্রতীক। আজকের এই হস্তান্তরের মাধ্যমে স্যার রাসবিহারী ঘোষের আদর্শ ও মূল্যবোধ আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”
এছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও রাসবিহারী ঘোষ স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক পঞ্চানন দত্ত ও সদস্যগণ। তাঁরা রাসবিহারী ঘোষের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা, শিক্ষার প্রসার ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করেন। উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের সুপার শ্রী সায়ক দাস (আই পি এস), পূর্ব বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (পর্যটন) শ্রী প্রতীক সিং আইএএস, বর্ধমান সদর দক্ষিণ-র মহকুমাশাসক শ্রী বুদ্ধদেব পান (ডাব্লু বি সি এস, এক্সি) ও পূর্ব বর্ধমান জেলা পর্যটন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারীক শ্রী মিলন তীর্থ সামন্ত (ডাব্লু বি সি এস, এক্সি)।
স্যার রাসবিহারী ঘোষ একজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। তাঁর জন্ম খণ্ডঘোষের তোরকোনা গ্রামে। অল্প বয়সেই অসাধারণ মেধার পরিচয় দিয়ে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে ১৯০৭ সালে সুরাট অধিবেশনে তিনি কংগ্রেস পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন— যা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এক ঐতিহাসিক স্বীকৃতি।
শুধু রাজনীতি নয়, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণেও তাঁর অবদান অনন্য। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি লক্ষাধিক টাকা দান করেছিলেন, যাতে আগামী প্রজন্ম জ্ঞান ও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারে। তাঁর জীবন তাই কেবল একজন আইনজ্ঞের কৃতিত্বে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এক দেশপ্রেমিক, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসংস্কারকের অমলিন উত্তরাধিকার হয়ে আজও সমুজ্জ্বল।
ইতিহাসবিদদের মতে, স্যার রাসবিহারী ঘোষ ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি ১৯০৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। আইনজীবী হিসেবে তাঁর মেধা ও শিক্ষা প্রসারে তাঁর অসামান্য ভূমিকা তাঁকে ভারতবর্ষের ইতিহাসে অনন্য আসন দিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা, হস্তান্তরিত জমিটি ব্যবহার করা হবে স্যার রাসবিহারী ঘোষের জন্মভিটে সংরক্ষণ ও সংস্কারের কাজে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জমিটিকে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এই অনুষ্ঠান কেবল একটি জমি হস্তান্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি সম্মান ও ঐতিহ্য রক্ষার এক প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্ধমান তথা সমগ্র বাংলার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে এ উদ্যোগ নতুন অধ্যায় রচনা করবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
আরও পড়ুনঃ প্রাক শারদীয়া বস্ত্র উপহার কর্মসূচি বেঙ্গল প্রেস ক্লাবের
- More Stories On :
- Sir Rashbihari Ghosh
- Freedom Fighter
- Advocate
- Bardhaman
- Purba Bardhaman
- Ayesha Rani A
- Sayak Das
- Khandaghosh