বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মায়ের ঘট উত্তোলন ও প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে মহালয়ার পরদিন থেকে শারদ উৎসবের সূচনা হয়ে গেল রাঢ়বঙ্গে। বৃহস্পতিবার থেকে নবমী পর্যন্ত চলবে পুজো। তবে রাজ আমলের রীতি মেনে পুজো হলেও কোভিড বিধি মেনে এবারও সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ভক্তদের ভিড় জমানোয় নিষেধাঞ্জা বলবৎ রেখেছে সর্বঙ্গলা ট্রাস্টি বোর্ড।
বৃহস্পতিবার রীতি মেনে বর্ধমান শহরের কৃষ্ণসায়র থেকে রুপোর ঘটে জল ভরে সেই ঘট ঘোড়ার গাড়িতে চাপিয়ে শোভাযাত্রা ও বাদ্যযন্ত্র সহযোগে নিয়ে যাওয়া হয় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। মন্দিরের পুরোহিত অরুণ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদে দেবী সর্বমঙ্গলার জন্য ঘটে জল ভরে আনার নিয়ম রয়েছে। কৃষ্ণসায়রের চাঁদনী ঘাট থেকে ঘটে জল ভরে সেই ঘট মন্দিরে নিয়ে গিয়ে এদিন প্রতিষ্ঠা করা হল। কৃষ্ণসায়র থেকে ঘট আনার জন্য শোভাযাত্রা করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরোহিত জানান, ঘটস্থাপনের পর থেকে নবমী পর্যন্ত পুজো চলবে। সঙ্গে হবে চণ্ডীপাঠ ও দেবীকে ভোগ নিবেদন।
সর্বমঙ্গলা মায়ের পুজো শুরু নিয়ে বর্ধমানে নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। প্রচলিত কাহিনী অনুসারে জানা যায়, বহুকাল পূর্বে বর্ধমানের বাহিরসর্বমঙ্গলা অঞ্চলে জেলেদের জালে একটি অদ্ভূত দর্শন পাথর উঠে আসে। কিছুটা শিলার মত দেখতে ওই পাথর দিয়েই তখনকার দিনে গুগলি, শামুক থেঁতো করতেন এলাকার বাসিন্দারা। সেই শিলা যে আদতে দেবী মূর্তি, তা পরে বুঝতে পারেন এলাকার এক পুরোহিত। কাহিনী অনুসারে আরও জানা যায়, সেই সময় দামোদর নদ লাগোয়া চুন তৈরির কারখানার জন্য শামুকের খোলা নেওয়ার সময় শিলামূর্তিটি চলে যায় চুন ভাটায়। তখন শামুকের খোলের সঙ্গে শিলামূর্তিটি পোড়ানো হলেও মূর্তির কোনো ক্ষতি হয়নি। সেই রাতে দেবীর স্বপ্নাদেশ পাওয়া মাত্রই বর্ধমানের তৎকালীন রাজা শিলামূর্তিটিকে নিয়ে এসে সর্বমঙ্গলা নামে পুজো শুরু করেন।
ঐতিহাসিক মতে বর্ধমানের মহারাজা শ্রী কীর্তিচাঁদ ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে সর্বমঙ্গলা মায়ের পুজোর জন্য মন্দিরটি নির্মাণ করান। কিন্তু এই মন্দিরে থাকা মাতা সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি মন্দিরের থেকেও বেশি প্রাচীন। অনেকের মতে মূর্তিটি ১০০০ বছর পুরোনো, আবার কারও মতে ২০০০ বছরের পুরনো। এই মূর্তিটি হল কষ্টিপাথরের অষ্টাদশভূজা সিংহবাহিনী ‘মহিষমর্দিনী’। যাঁর দৈর্ঘ্যে বারো ইঞ্চি, প্রস্থে আট ইঞ্চি। মন্দিরে রুপের সিংহাসনে দেবী আসীন থাকেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হবার পরে বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজা উদয় চাঁদ ১৯৫৯-তে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন, তাঁদের হাতে এই প্রাচীন মন্দিরটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন ও তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত সেই ট্রাস্টি বোর্ডই এই মন্দিরের দেখাশোনা করে। আগে সন্ধি পুজোয় কামান দাগা হতো, মেষ, মহিষ ও ছাগ বলি হতো। এখন আর হয় না। পূর্বে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে সন্ধিপুজোয় কামানের আওয়াজ শুনে আশেপাশের সমস্ত জমিদার বাড়িতে সন্ধিপুজো শুরু হতো। নবমীতে নব কুমারি মায়ের পুজোর রীতি আজও চালু রয়েছে।
- More Stories On :
- Sarbamangala Temple
- Sarbamangala mandir
- East burdawn
- Burdwan
- Durga puja