দিল্লির বিস্ফোরণের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। তার মধ্যেই রাজধানীতে ফের বড় সাফল্যের দাবি করল দিল্লি পুলিশ। তদন্তকারীদের হাতে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অস্ত্র পাচারের এক ভয়ংকর চক্রের হদিশ। চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, এই চক্র শুধু দেশীয় নয়—এর শিকড় গভীরভাবে ছড়ানো ছিল চিন, তুরস্ক আর পাকিস্তান পর্যন্ত।
তদন্তে উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য। লরেন্স বিষ্ণোই, বাম্বিহা গ্যাং, গোগি-হিমাংশু ভাইদের মতো কুখ্যাত অপরাধচক্র এই নেটওয়ার্কের নিয়মিত ক্রেতা ছিল। তাদের হাতে পৌঁছনো অস্ত্রগুলির উৎস ছিল চিন ও তুরস্ক। সেগুলি প্রথমে পাকিস্তানে ঢুকত, পরে আইএসআইয়ের সাহায্যে পাঞ্জাব সীমান্ত পেরিয়ে ড্রোনের মাধ্যমে চলে আসত ভারতে। এরপরে তা ছড়িয়ে পড়ত দিল্লিসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে।
গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে রোহিনী এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে মনদীপ ও দলবিন্দর নামে দুই ব্যক্তিকে প্রথমে ধরে ফেলে পুলিশ। তাদের কাছে অস্ত্র লেনদেন চলাকালীনই হানা দেয় ক্রাইম ব্রাঞ্চ। পরে সেই জিজ্ঞাসাবাদ থেকেই খুলতে শুরু করে আরও অন্ধকার দিক। জানা যায়, পিস্তলের বড় চালান এসেছে পাকিস্তান-পাঞ্জাব সীমান্ত দিয়ে। এর সূত্র ধরে উত্তরপ্রদেশের বাগপতের রোহন তোমরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি অজয় নামে আরেকজনের নাম উঠে এসেছে, যার খোঁজে তল্লাশি চলেছে। এই চারজনের ঘাঁটি ছিল পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ জুড়ে।
পুরো ঘটনায় ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১০টি অত্যাধুনিক পিস্তল। এর মধ্যে পাঁচটি তুরস্কে তৈরি, তিনটি চিনের—যেগুলি সাধারণত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের অস্ত্রভাণ্ডারে দেখা যায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, যে ড্রোন রুট দিয়ে অস্ত্র ঢুকত, সেটি ব্যবহার করা হত একাধিকবার। প্রতিবার ২-৩ কেজি ওজন বহন করত সেই ড্রোন। সন্দেহ, আরও বহু চালান আগেই দেশে ঢুকে পড়েছে।
এই সাফল্যকে অত্যন্ত বড় বলে দাবি করছে দিল্লি পুলিশ। কারণ, নভেম্বরের ১০ তারিখ লালকেল্লার কাছে ভয়ংকর বিস্ফোরণে ১৩ জন প্রাণ হারানোর পর থেকেই রাজধানী জুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি রয়েছে। সেই ঘটনার পর অস্ত্র পাচার, নাশকতা এবং আন্তর্জাতিক গ্যাং যুক্ত থাকার সন্দেহ আরও জোরালো হয়েছিল। নতুন তথ্য উঠে আসায় রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফের আঁটসাঁট করা হচ্ছে।
দিল্লি পুলিশের বক্তব্য, এই চক্র শুধু অপরাধ নয়, বরং পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে চলছিল। তদন্তকারীরা মনে করছেন, বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে এই নেটওয়ার্কের কোনও যোগাযোগ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
রাজধানীতে যখন আতঙ্ক চরমে, ঠিক তখনই এই আন্তর্জাতিক অস্ত্র চক্র ভেঙে দেওয়া নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—দেশের ভেতরে এত বড় অস্ত্র নেটওয়ার্ক এতদিন কীভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল?
- More Stories On :
- Delhi
- Arms Smugglers
- Tukey
- Pakistan
- China

