বাংলা ভাগের কথা অস্বীকার করে রাজ্য সরকারের ’লক্ষীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প নিয়ে ফের অপ্রীতিকর মন্তব্য করলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলীয় কর্মসূচীতে যোগ দিতে মঙ্গলবার বর্ধমানে এসে দিলীপ ঘোষ বলেন, "৫০০ টাকা পাওয়ার জন্য দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে লাইনে দাঁড়ানো মহিলারা ’ভিখারি’ নয়তো কি?" একই সঙ্গে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, ১০ বছরের তৃণমূল সরকার মানুষকে ’ভিখারি’ বানিয়ে ৫০০ টাকার জন্য লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। দিলীপ ঘোষের এহেন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল নেতৃত্ব।
রাঢ় বঙ্গের কার্যকর্তাদের নিয়ে এদিন বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বর্ধমানের জেলা বিজেপি পার্টি অফিসে। সেই বৈঠকে দিলীপ ঘোষ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা শিবপ্রকাশ, বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ, সাংসদ এস এস আহলুওয়ালিয়া , রাজু বন্দোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শুরুর আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “১০ বছর সরকার চালানোর পর মানুষকে ’ভিখারি’ বানিয়ে দিয়ে ৫০০ টাকার জন্য রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে না। ভিড় করার জন্যেই এই সময়ে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প করা হচ্ছে।" যাঁরা ’লক্ষীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন পত্র জমা দিচ্ছেন তাঁদের ’ভিখারি’ বলছেন কেন? দিলীপ ঘোষের স্পষ্ট জবাব, “৫০০ টাকার জন্য যারা লাইনে দাড়াচ্ছেন তাঁরা ’ভিখারি’ নয় তো কি? এটাকে কি উন্নয়ন বলে? দেশের কোটি কোটি লোক বাড়িতে বসেই হাজার হাজার টাকা ভাতা-অনুদান পেয়ে যাচ্ছেন। মোদিজি কৃষকদের ৬০০০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন। বাড়িতে বসেই তিন কিস্তিতে কৃষকরা সেই টাকা নিচ্ছেন। তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন সবাইকে রাস্তায় দাঁড় করাচ্ছেন? বয়স্ক মানুষেরা চাপা পড়ে মরে যাচ্ছে।এই সব কোথাও শুনেছেন? মোদিজীকে দেখে ওঁরা শিখুক “। অশোকনগরের ঘটনা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “টিএমসি নেতারা সব জায়গায় দাদাগিরি করছে। সরকারি যোজনার সুবিধা পেতে এত ভিড় করার কি দরকার আছে। একাউন্টে দিলেই তো পারতো“।
বাংলা ভাগের প্রসঙ্গ নিয়ে দিলীপ ঘোষকে প্রশ্ন করা হলে এদিন ভিন্ন সুর শোনা যায় তাঁর গলায় । দিলীপ ঘোষ এদিন জানান, বিজেপি কখনই ’বঙ্গভঙ্গের’ কথা বলেনি। তাঁদের দলের প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তানকে ভাগ করে এই বাংলা নিয়ে এসেছে। সেই বাংলা যাতে সোনার বাংলা তৈরি হয় সেই চেষ্টাই তাঁরা করছেন বলে দিলীপ বাবু এদিন জানান।
জাতিভিত্তিক জনগণনা নিয়ে বিহার বিজেপি এবং বিরোধী দলগুলি যে মত দিয়েছে তার প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “সমাজের প্রতিটি লোকের নিজের মত বলার অধিকার আছে। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন, সেন্সাস বোর্ড ও সরকার আছে। তাঁরা সবার সঙ্গে কথা বলে সহমত হয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই হবে“।
আদালতের নির্দেশে ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার ঘটনার তদন্তে ’সিবিআই’ বিভিন্ন জেলায় যাবে ।এই বিষয়ে বিজেপির অবস্থান কি হবে তা জানতে চাওয়া হলে দিলীপ ঘোষ বলেন ,“আমাদের ডাকলে আমরা যাবো, সব তথ্য দেব“।
লক্ষীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে লাইনে দাঁড়ানো মহিলাদের ’ভিখারি’ বলা নিয়ে দিলীপ ঘোষকে ’বাংলা দ্রোহী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু । তিনি আরও বলেন, “এইসব খারাপ কথা বলে বাংলার মেয়েদের ও মায়েদের অপমান করছেন দিলীপ ঘোষ।বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মহিলারা ওঁদের যোগ্য জবাব দিয়ে দিয়েছে। দিলীপ ঘোষের এই কু-মন্তব্যের জবাব বাংলার মহিলারা আগামী লোকসভা নির্বাচনেও দিয়ে দেবে“।
- More Stories On :
- Dilip Ghosh
- BJP
- Bengali Women
- Lakshi Bhandar
- Beggars