দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রায় অন্তিম লগ্নে ভারত পৌছে গেছে। সরকারি হিসাবে এখনও অবধি প্রথম ঢেউ ও দ্বিতীয় ঢেউ মিলিয়ে ৩,৮৮,১৩৫ জনের কোভিড মহামারীতে মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৩ কোটি মানুষ আক্রান্ত এই অতিমারী তে।
চিকিৎসা মহলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগাম সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি উদাসীনতা থাকায় এর ধাক্কায় বেসামাল সারা দেশ। অক্সিজেন, সেফ হোম, ভেন্টিলেটর, পর্যাপ্ত বেডসহ সব কিছুতেই যেন একটা নেই নেই রব উঠেছিল।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের অতিমারি পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, সমাজসেবী সংগঠন, চিকিৎসক মহলের তরফ থেকে এখনই তৃতীয় ঢেউয়ের সতর্কনিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম বন্দর পরিচালিত "গোল্ডেন জুবিলি হাসপাতাল" কতৃপক্ষ তৃতীয় ঢেউয়ের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু সতর্ক বার্তা প্রচার করছেন। বার্তায় প্রধানত শিশুদের নিয়েই কিছু নির্দেশিকা পালন করার কথা বলা হয়েছে।
কিছুদিন ধরেই তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার এক সম্ভবনা কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যারফলে মানুষের মধ্যে নয়া আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেই আতঙ্ক থেকেই এই নির্দেশিকা জারি বলে মনে করা হচ্ছে।
কি করবেন কি করবেন না (২০ বছর অবধি)
১। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাচ্ছাদের বাইরে বেরতে দেবেন না।
২। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে বাচ্ছাদের নিয়ে যাবেন না।
৪। দিনে দুবার পরিষ্কার করে সাবান দিয়ে স্নান করান।
৫। নিয়মিত ব্যবধানে হাত সাবান দিয়ে ধোয়ান বা স্যানিটাইজ করান।
৬। অপরিস্কার হাত চোখে ও মুখে দিতে দেবেন না।
৭। বয়স্করাও বাইরে থেকে ফিরে নিজেদের স্যানিটাইজ না করে বাচ্ছাদের কাছে আসবেন না।
৮। ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেটস যেমন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, হেডফোন ও খেলার সরঞ্জাম নিয়মিত স্যানিটাইজ করুন।
৯। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হালকা রোদে বাচ্ছাদের খেলতে নিয়ে যান।
১০। স্নানঘর ও বাড়ি প্রতিদিন স্যানিটাইজ করুন।
১১। নির্দিষ্ট দিন অন্তর মাথার বালিস ও তার কভার কাচতে দিন।
১২। গরম জলে গার্গেল করান।
১৩। সকলের দাঁত মাজার ব্রাশ পৃথক রাখুন।
১৪। একান্তই বাইরে বেরলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন, মাস্ক পড়ুন, হাত স্যানিটাইজ করুন।
১৫। বাচ্ছাদের সাথে করমর্দণ, চুম্বন ও আলিঙ্গন করবেন না।
বাচ্ছাদের খাওয়া দাওয়া সংক্রান্ত কিছু উপদেশ দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের তরফেঃ
১। বেশী মাত্রায় প্রোটিন ডায়েট দেওয়া উচিত
ক। দিনে দূটি ডিম।
খ। সিদ্ধ ডাল যেমন- ছোলা, সবুজ ছোলা, রাজমা, মটরশুঁটি
গ। ১০০ মিলি দুধ প্রত্যেকদিন।
২। টাটকা সব্জি, আমলকী, লেবু, মরসুমি সব্জি, শুকনো ফল (আমন্ড, কাজু, পেস্তা, আখরোট, কিসমিস, খেজুর)। এগুলি রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৩। বাড়ির রান্না খাবারই খান।
৪। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন, জাঙ্ক ফুড খাবেন না।
লক্ষণ দেখে প্রাথমিক স্তরেই রোগের পরীক্ষা করুন ও চিকিৎসা করান। লক্ষণগুলি হলঃ
১। জ্বর ও মাথা যন্ত্রণা।
২। গায়ে, হাতে ও পায়ে ব্যাথা।
৩। গলায় ব্যাথা।
৪। শুকনো কাশি
৫। ক্ষুদা-মন্দ, দুর্বলতা।
৬। পাতলা পায়খানা।
৭। ঘাড়ে ও চোখে যন্ত্রণা।
৮। আরও কিছু শারীরিক অস্বস্থি।
এই ধরনের কিছু অসুবিধা বুঝতে পারলেই চিকিৎসকের কাছে যান, পরীক্ষা করান, রোগ নির্ণয় হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা শুরু করে দিন। প্রাথমিক স্তরে রোগ নির্ণয় হলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভবনা অনেক বেশী।
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়