এতদিন আমরা শাক, সব্জী, চাল, গম, ফল, পোলট্রি মুরগী, ছাগল গরু এইসবের চাষ শুনেছি। কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন এক জায়গা আছে যেখানে শুধু বিষধর সাপের চাষ হয়। যে সমস্ত সাপের নাম শুনলে আম জনতার হৃদকম্পন শুরু হয়ে যায়, সেই সাপের নাকি আবার পালন করা হয় ব্যাবসায়ীক কাজে!

আজও গ্রাম বাংলায় মানুষজন রাতের অন্ধকারে হাল্কা বন-জঙ্গলের মধ্যে পায়ে হেঁটে কোথাও গেলে, 'লতা' 'লতা' বলে আওয়াজ করেন। তাতে নাকি যাত্রাপথের কাছাকাছি সাপের আনাগোনা বন্ধ হবে। এর কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমরা খুঁজে পাইনি। প্রসঙ্গের উত্থাপন শুধুমাত্র আমাদের সাপ আতঙ্ক বোঝানোর উদ্দেশ্যে। আমাদের বাংলা তথা ভারতে অনেক দেব-দেবী-র দেখা মেলে যাঁদের আমরা সাপের দেবী নামেই চিনি জানি,সে রকমই কয়েকটি হল 'মনসা', জগতগৈড়ি, 'শীতলা' ইত্যাদি।

চীনের এক প্রদেশ, যেখানে সাপ থেকে প্রাপ্ত সামগ্রী কে ব্যবসায়ীক ভাবে ব্যবহার করা হয়। জিনশি টাউন, ডেকিং কাউন্টি, ঝেজিয়াং প্রদেশে জিসিকিয়াও বলে একটি গ্রাম রয়েছে যেটা "সর্প গ্রাম"(Snake Village) নামে পরিচিত। এই গ্রামে ১৭০ টি পরিবার বাস করে। অক্টোবর ২০১০-র গননা অনুযায়ী আনুমানিক প্রায় ৪০০ জন মানুষ বসবাস করেন এই গ্রামে। সেখানে ভাইপার এবং কোবরা সহ ছোট বড় ৩০ লক্ষেরও বেশি সাপ বসবাস করেন।

আপনি কখনো যদি এই গ্রামে যান তাহলে ভয়াল ভয়ঙ্কর সাপের জাদুকরী পরিবেশ উপলব্ধি করতে পারবেন, "সর্প গ্রাম"(Snake Village) যাবার জন্য আপনাকে প্রথমেই সাপের রাজা 'ইয়াং-হং-চাং' এর সাথে দেখা করতে হবে ৫৬ বছর বয়সী ইয়াং-হং-চাং জিসিকিয়াও স্নেক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ওখানকার বসবাসকারী মানুষজন তাঁকে সাপের রাজা বলে অভিহিত করেন। কারণ, তাঁর কুড়ি বছর বেশী সাপের প্রজননের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এবং তিনিই এই গ্রামের প্রথম সাপ পালনকারী, তাঁর উদ্যোগেই এই "সর্প গ্রাম"(Snake Village) গড়ে ওঠে।

এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ি, বসার ঘর, উঠান ও তার আনাচে-কানাচে পুকুরে,মাঠে সর্বত্র সাপ থাকার মতন অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে এমনকি গ্রামের গাছগুলিও এমন ভাবে লাগানো হয়, যাতে সাপেদের থাকতে যে কোনও অসুবিধা না হয়। এত কিছু শোনার পরে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এই গ্রামে ৩০ লক্ষেরও বেশি বিষধর সাপ থাকা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ জন বেঁচে আছেন কিভাবে? শুধুমাত্র সাপ চাষ থেকে কত রোজগার সম্ভব? এবং কিভাবে?

জিসিকিয়াও গ্রামের বাসিন্দারা জানান যে, তাঁরা বহুবার সাপের ছোবল খেয়েছেন, ওটাকে তাঁরা সেরকম আমল দিতে নারাজ, এবং তাঁরা জানান আমরা গ্রামবাসীরা এই বেপারে বিন্দুমাত্র ভয় পায় না। তাঁরা আরোও জানান যে তাঁদের সাপ চাষের অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভেষজ ওষুধ তৈরি করা, যা বড় কোন বিষধর সাপের কামড়ে প্রাণসংশয় থেকে বাঁচতে অ্যান্টিডোট (Antidote) হিসাবে ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়। অ্যান্টিডোট তৈরি হয় বিষধর সাপের বিষ থেকেই। যা বিষধর সাপের উপরের চোয়ালের সামনের দিকের দুটি বড় দাঁতের গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়।

এছাড়াও সাপের বিষ থেকে বিভিন্ন রকমের সিরাম তৈরি হয়, যা বিভিন্ন রকমের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হইয়ে থাকে। লাও ইয়াং দ্বারা উত্মিথ সাপ গুলির মধ্যে একটিকে বলা হয় ভাইপার, এটি একটি অত্যন্ত বিষাক্ত সাপ।এই ধরনের সাপে যদি কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায়, তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা না করা হলে তা প্রাণঘাতী হবে।

কিন্তু এত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও গ্রামের মানুষ নির্ভয়ে সাপ চাষ করে চলেছেন, বড় বড় ঔশধ কোম্পানি কে তাঁরা সাপের বিষ বিক্রি করে থাকেন, এ ছাড়াও বিষাক্ত সাপের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ গুলি বের করার পর সাপের পিত্ত কেটে একটি পাত্রে ডুবিয়ে রেখে দেয়, বাকি শরীরের অংশ মশার কয়েলের মতো ভিসরেটেড সাপগুলিকে রোদে শুকিয়ে ওষধি উপাদান ব্যাবসায়ী সমিতি কে চড়া দামেবিক্রি করে দেন। আর অবিষাক্ত সাপ গুলির মাংস, পিত্ত, সাপের ছাল বেশ চড়া দামে আলাদা আলাদা বিক্রি করে রোজগার করে জীবন যাপন করেন।