“অনেক শহর গ্রাম ছাড়িয়ে অনেক দূর সে গ্রাম,
কেউ জানো কি তার নাম?
সে গ্রামের আজব খবর কানে আসে;
সেখানে মানুষ নাকি মানুষ পেলেই ভালোবাসে…”
— এমন আজব এক গ্রামেই ঢুকে পড়েছিলাম বছর দশেক আগে; রবাহুত… অনভ্যস্ত পায়ে… থমকে, থেমে… দ্বিধান্বিত চোখে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে। সে এক ভুবনভরা গ্রাম… বিশ্বজোড়া ফাঁদ পাতা তার… কেমনে দিই ফাঁকি!
সেই ফেসবুক-গ্রামে এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে খুঁজে পেলাম কত গ্রামছাড়া রাঙামাটির পথ… পায়ে পায়ে সন্ধ্যার ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরে আসার কত শহুরে সড়ক… কত স্থিতপ্রজ্ঞ জীবন রসিকের সুললিত কলম… কত বরাননা-র মায়াবী মন-উদ্ভাস… এত আলো… এত আকাশ — যা আগে বোধ হয় কখনও দেখি নি, চোখেও পড়ে নি! আমার ফেসবুকীয় বান্ধবসমাজ কখনো 'ট্রোলিং' শব্দটি জানতে দেন নি আমায়, বরং ভালোবাসা-সমাদর-প্রেরণার জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছেন বরাবর!
সেই প্রীতি ও শুভেচ্ছার বাঁধভাঙা ঢেউ প্রতি বছর সুনামি হয়ে আছড়ে পড়ে আজ, এই আঠাশে আগস্টের ভাদ্রবাসরে। এডিলেড থেকে এডিনবরা, আটলান্টা থেকে আগরতলা ছুঁয়ে অনুরণিত হয় মনহারানো খুশির গুঞ্জন— “ভালো আছি , ভালো থেকো / আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো!”
প্রতিবার ভাবি, ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাবো এই আশীর্বাদ-শুভকামনার প্রাপ্তি স্বীকার করে। শুরুও করে দিই সকাল থেকেই; কিন্তু ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জার মিলে হাজারখানেক বার্তার অমিত প্রাচুর্য রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য করে অচিরেই। বুক ভরে নিই হৃদয়ছোঁয়া প্রীতি বার্তার সুগন্ধী বাতাস; মনে ভাবি— এই সর্বপ্লাবী ভালবাসাই আগলে রাখবে চিরকাল, সব দুর্দৈব-দুঃখ-দীনতা থেকে।
জানি, এ’ ভুল! ফাগুনের ফুল ঝরে যাবে; একদিন পথের মতো হারিয়ে যাব আমিও, নদীর মতো আর আসবো না ফিরে। এ’ পায়ের চিহ্ন আর পড়বে না পৃথিবীর পথে। সেদিনও ফুল্লকুসুমিত হবে তরুশাখা… দুঃসাহসের ডানা মেলে দূরে দূরে উড়ে যাবে চঞ্চল পাখিরা … ভাদ্রের নীলাকাশে ভাসবে সাদা মেঘের ভেলা… ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলবে অনাগত দিন…
সেই আগামীর স্বপ্ন বুকে নিয়ে পেরিয়ে যাই আরো এক আঠাশে আগস্ট… বন্ধুদের শুভেচ্ছা-ভালোবাসা শারদ শিশিরের মতো মৃদু মোলায়েম মায়ায় অভিসিঞ্চিত করে রাখে সেই উজ্জ্বল দিন!
ভালো থেকো বন্ধুরা— কাছে.. দূরে.. যে যেখানে আছো। আমার মনোজগৎ প্রসারিত করো আরো, তোমাদের স্মৃতি-সত্ত্বা-ভবিষ্যতের মায়াজাল বুনে। প্রৌঢ়ত্ব পীড়াদায়ক না হয় যেন, ক্ষুদ্রতা যেন স্পর্শ না করে হৃদয়-চেতন-মননকে!
“কাছে থাকো। ভয় করছে। মনে হচ্ছে
এ’ মুহূর্ত বুঝি সত্য নয়। ছুঁয়ে থাকো।
শ্মশানে যেমন থাকেন দেহ ছুঁয়ে একান্ত
স্বজন। এই হাত, এই নাও হাত।
এই হাত ছুঁয়ে থাকো, যতক্ষণ
কাছাকাছি আছো, অস্পৃষ্ট রেখো না।
ভয় করে, মনে হয়, এ’ মূহূর্ত বুঝি সত্য নয়।
যেমন অসত্য ছিল দীর্ঘ গতকাল।
যেমন অসত্য হবে অনন্ত আগামী।”
—পাণিগ্রহণ (নবনীতা দেবসেন )।
আরও পড়ুনঃ র্যাগিংয়ে মৃত ছাত্রের মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ মমতার, একগুচ্ছ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
- More Stories On :
- Birthday Messages
- Feature
- Literature