প্রযুক্তিগত ত্রুটি, বিমানবন্দরের অতিরিক্ত ভিড় এবং বিভিন্ন পরিচালনাগত সমস্যার জেরে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ইন্ডিগো। গত দু’দিন ধরে দেশজুড়ে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল ও দীর্ঘ বিলম্বে বিমানবন্দরে আটকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।
বুধবার দুপুর পর্যন্ত একাধিক বড় বিমানবন্দরে শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে অন্তত ৩৩টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বাতিল হয়েছে ৫১টিরও বেশি বিমান। হায়দরাবাদেও আগমন ও প্রস্থান মিলিয়ে ১৯টি ইন্ডিগো ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিশাখাপত্তনম, গোয়া, আমদাবাদ, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, মাদুরাই, হুবলি, ভোপাল ও ভুবনেশ্বর থেকে হায়দরাবাদের উড়ানও বাতিল করা হয়েছে।
বেঙ্গালুরুর কেমপেগওডা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বুধবার একদিনেই ৪২টি ঘরোয়া ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি ছিল আগমন এবং ২০টি ছিল প্রস্থান। দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, গোয়া, কলকাতা ও লখনউগামী একাধিক ফ্লাইট এই বিপর্যয়ের তালিকায় রয়েছে। গত কয়েক দিনে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে ইন্ডিগোর বহু যাত্রী এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত দেরির অভিযোগ তুলেছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২ ডিসেম্বর ইন্ডিগোর মাত্র ৩৫ শতাংশ ফ্লাইট সময়মতো উড়তে পেরেছিল এবং ১ ডিসেম্বর সেই হার ছিল ৪৯.৫ শতাংশ। এই অবস্থায় যাত্রীদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিগো এক বিবৃতিতে জানায়, গত দু’দিন ধরে তাদের পরিষেবা সারা দেশজুড়ে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে এবং এর জন্য তারা যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চায়। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রযুক্তিগত ছোটখাটো সমস্যার পাশাপাশি শীতকালীন সময়সূচির পরিবর্তন, খারাপ আবহাওয়া, বিমান চলাচলে অতিরিক্ত চাপ এবং ক্রুদের নতুন কাজের সময়সীমার নিয়ম চালু হওয়ায় একসঙ্গে বহু সমস্যা তৈরি হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাময়িকভাবে কিছু ফ্লাইটের সময়সূচি বদলানো হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। সংস্থা জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের বিকল্প ব্যবস্থা বা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যাত্রীদের বিমানবন্দরে রওনা হওয়ার আগে অনলাইনে নিজেদের ফ্লাইটের অবস্থা দেখে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, নতুন ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকেই ইন্ডিগো তীব্র পাইলট সংকটে ভুগছে। এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে ক্রুদের বিশ্রামের সময় বেড়েছে, রাতের কাজের সময় বদল হয়েছে এবং রাতে অবতরণের সংখ্যাও কমানো হয়েছে। এই নিয়ম চালু করেছে DGCA Delhi High Court-এর নির্দেশ অনুসারে। এর আগে এই নিয়মের বিরোধিতা করেছিল ইন্ডিগো ও এয়ার ইন্ডিয়া।
বর্তমানে এই বিমানসংস্থা প্রতিদিন প্রায় ২১০০টি ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালায়। তার বড় অংশই রাতে পরিচালিত হয়। ফলে ক্রু সংকটের প্রভাব আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

