হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছিল এক মহিলার। কিন্তু মৃত্যুর পরই ঘটল এমন কাণ্ড, যা দেখে হতবাক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিচয় যাচাইয়ের জন্য পরিবারের কাছে আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড চাওয়া মাত্রই উধাও হয়ে গেলেন মৃতার পরিবারের সদস্যরা! ফোনেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ফলে মৃতদেহ এখনো পড়ে আছে আলিপুরদুয়ার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে — দাবিদারহীন অবস্থায়।
জানা গিয়েছে, গত ৫ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ৪২ বছর বয়সী এক মহিলা— নাম সঞ্জিতা বিবি—কে ভর্তি করা হয় আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। ভর্তি করার সময় তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা দমনপুর এলাকার বাসিন্দা। এক আত্মীয়ের নাম দেওয়া হয়েছিল জাবেদ আলি। হাসপাতালের নথিতে সেই নাম ও মোবাইল নম্বর নথিভুক্ত করা হয়।
রোগীর অবস্থা শুরু থেকেই আশঙ্কাজনক ছিল। তাঁকে আইসিসিইউ-তে রাখা হয়। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিয়মমতো ডেথ সার্টিফিকেট তৈরির জন্য পরিবারের কাছে আধার বা ভোটার কার্ড চাওয়া হলে হঠাৎই গা-ঢাকা দেন তাঁরা। হাসপাতালের সুপার ডাঃ পরিতোষ মণ্ডল বলেন, “মৃতা হার্ট অ্যাটাকে ভর্তি হয়েছিলেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য পরিচয়পত্র চাইতেই পরিবারের সদস্যরা উধাও হয়ে যান। এরপর আর তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। দু’দিন ধরে একজন পুরুষ রোগীর সঙ্গে ছিলেন, তিনিও গায়েব।”
ফোনে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের হদিশ মেলেনি। ফলে হাসপাতাল মৃতদেহকে “দাবিদারহীন” হিসেবে মর্গে সংরক্ষণ করেছে। ঘটনাটি ইতিমধ্যে স্থানীয় থানায় জানানো হয়েছে।
এরপরই উঠেছে বড় প্রশ্ন — ওই মহিলার কোনও বৈধ পরিচয়পত্র ছিল না কেন? যিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন, তিনি আসলে আত্মীয় না অন্য কেউ? নাকি পুরো ঘটনাটির পেছনে রয়েছে অন্য রহস্য?
এসআইআর (Special Investigation of Residents) চলাকালীন এমন ঘটনায় জল্পনা আরও গভীর। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, মৃতা কি আদৌ ভারতীয় নাগরিক ছিলেন, নাকি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী?
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আলিপুরদুয়ার জুড়ে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, পরিবারের কেউ যদি পরিচয়পত্র ও প্রমাণপত্র নিয়ে হাজির না হন, তবে আইনি প্রক্রিয়া মেনে মৃতদেহ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সমাধিস্থ করা হবে।
স্থানীয় এক চিকিৎসক বলেন, “এমন ঘটনা বিরল। সাধারণত মৃতের পরিবারের সদস্যরা দেহ নিতে আসেন। এখানে উল্টোটা হয়েছে। তাই বিষয়টি সত্যিই সন্দেহজনক।” ঘটনার তদন্তে নামতে চলেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কারা মৃতাকে ভর্তি করেছিল, কখন উধাও হয়েছে তারা।
- More Stories On :
- Alipurduar
- Death woman

