কোভিড রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহে ফ্লো মিটারের অপ্রতুলতা যাতে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, তাই নিজের কারখানায় তৈরি ২০০টি ফ্লো মিটার রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিলেন বেলুড়ের এক ব্যবসায়ী।
করোনা অতিমারির এই দুঃসহকালে অক্সিজেনের জন্য যখন প্রাণ যাচ্ছে মানুষের, কখনও বা সিলিন্ডার পাওয়া গেলেও ফ্লো মিটারের অভাবে দেওয়া যাচ্ছে না অক্সিজেন । অতিমারির এই সময়ে দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের আকাল। বহু জীবনহানির ঘটনা ঘটছে রোগীকে সময়মত অক্সিজেন দিতে না পারার কারণে। অক্সিজেনের আকালের পাশাপাশি,অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে রোগীকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের করতে ব্যাবহার করা হত ফ্লো মিটার নামক এক যন্ত্র। যা ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও অক্সিজেন রোগীকে দেওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে অনেক সময়েই ফ্লো মিটার না পাওয়ায় অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিছুদিন আগেই এক হাসপাতালে ফ্লো মিটার না থাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও অক্সিজেন না পেয়ে একই দিনে মৃত্যু হয় দুই রোগীর। এবারে সেই ফ্লো মিটারের সংকট কাটাতে এগিয়ে এলেন হাওড়ার এক ব্যবসায়ী। নিজের কারখানায় তৈরি ২০০টি ফ্লো মিটার বিনামূল্যে তিনি তুলে দিলেন রাজ্য সরকারের হাতে।
বুধবার ওই সংস্থার কর্ণধার উৎপল দাস রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় ও হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্যর হাতে এই ফ্লো মিটারগুলো তুলে দেন।
এদিন উৎপলবাবু জানান, আপাতত রাজ্য সরকারকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য ২০০টা ফ্লো মিটার দেওয়া হল। ভবিষ্যতে প্রয়োজনমতো তাঁর সংস্থার তরফে আরও সরবরাহ করা হবে। এমনকী, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো ভিনরাজ্যেও স্বল্পমূল্যে এই অক্সিজেন ফ্লো মিটার পাঠানো হবে বলে জানান তিনি । তাঁর কথায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে ফ্লো মিটার পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে এর ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বাজারে অল্প সংখ্যক ফ্লো মিটার থাকলেও তার অগ্নিমূল্য। নূন্যতম মূল্য প্রায় তিন হাজার টাকা। তাই একথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে যাতে এই অক্সিজেন ফ্লো মিটার সরবরাহ করা যায় সেই চিন্তা থেকেই তিনি এই কাজ করেন। সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন নলের মাধ্যমে সরবরাহ থেকে শুরু করে সিলিন্ডারে অক্সিজেনের পরিমাণ কত রয়েছে? তা শেষ হয়ে যাচ্ছে কি না , এসব কিছুর জন্যেই ফ্লো মিটারের প্রয়োজন। বেলুড়ের ওই ক্ষুদ্র শিল্পদ্যোগী তাঁর নিজের কারখানায় এই ফ্লো মিটার উৎপাদন করেন। ফ্লো মিটারগুলি নেওয়ার পর এদিন জেলাশাসকের দপ্তরে সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, 'অক্সিজেনের অভাবে মানুষ যাতে মারা না যায় সেজন্য রাজ্য সরকার ইতিপূর্বেই উদ্যোগী হয়েছে। বাজারে ফ্লো মিটারের ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি মেটাতেই বেলুড়ের শিল্পদ্যোগী এগিয়ে এসেছেন। ওনার দেওয়া ফ্লো মিটারগুলি হাওড়া জেলা হাসপাতাল, বালিটিকুরি হাসপাতাল ও টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালের মতো কোভিড হাসপাতালগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে ওনার কাছ থেকে রাজ্য সরকারের তরফে আরও সাহায্য নেওয়া হবে।' একই সঙ্গে ওই সংস্থার তরফে বেলুড়ে তিনটি জায়গায় অক্সিজেন হাব করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলেও জানান ওই সংস্থার কর্ণধার উৎপল দাস। সম্প্রতি কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যায় অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ফ্লোমিটারের অভাবে প্রাণবায়ু দেওয়া যায়নি অনেক রোগীকে। সেই ঘটনার কথা জানতে পেরেই তিনি কারখানায় উৎপাদিত ফ্লো মিটার রাজ্য সরকারের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেন বলেও জানান তিনি।
- More Stories On :
- Flow mitre
- Belur businessman
- Donates