সুদর্শন পট্টানায়েক, ১৯৭৭ এ পুরি জেলার এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণকরেন। তাঁকে ভারত সরকার দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সন্মান পদ্মশ্রী প্রদান করেন ২০১৪ তে। এছাড়াও তিনি ২০১৯ এ প্রথম ভারতীয় হিসাবে 'ইতালি স্যান্ড পুরস্কার' এ পুরস্কৃত হয়। তিনি ২০১৭ তে বিশ্বের বৃহত্তম বালির দুর্গ নির্মান করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেন।

ওডিশা-র মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টানায়ক'র ক্রীড়া ও বিভিন্ন কালচারাল বিষয়ে উৎসাহ এক প্রকার জনশ্রুতি। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী সুদর্শন পট্টানায়েক তাঁর অত্যন্ত স্নেহভাজন।

কোনও বিশেষ ফেস্টিভ্যাল-এ যাঁরা সৈকত শহর পুরি বেড়াতে গেছেন তাঁদের অনেকেরেই সৌভাগ্য হয়েছে সমুদ্র সৈকতে সুদর্শন পট্টানায়েক-র বালি ভাস্কর্য চাক্ষুষ করার।

বালি নিয়ে বিশ্ব সাহিত্য ও বাংলা সাহিত্যে প্রচুর কবিতা গদ্য উপন্যাস লেখা হয়েছে। যেমন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'চোখের বালি'। সুদর্শন পট্টানায়েকের ভাস্কর্যে যেরকম নানাবিধ বিষয় যেমন উঠে এসেছে, ঠিক সেরকমই ভারতীয় দেবদেবীর বহু ভাস্কর্য তাঁর বালি ভাস্কর্যে স্থান পেয়েছে।

'চোখে বালি' পরা কোনও ভাবেই কাঙ্খিত নয়, কিন্তু চোখে দেখা 'বালির ভাস্কর্য' সত্যিই মনোরম। বিশ্ব শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তিব্বতি 'দলাই লামা' সহচর্য লাভ করার সৌভাগ্য হয়েছে সুদর্শনের তাঁর বালি ভাস্কর্যের মাধ্যমে।

বাংলা সাহিত্যে কোনও কিছুকে ক্ষনস্থায়ী বোঝাতে 'বালির প্রাসাদ' বলে কটাক্ষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ক্ষনস্থায়ী বস্তুই যে এত মনোরম হতে পারে তা সুদর্শন পট্টানায়েকের বালি'র ভাস্কর্য না দেখলে বোঝা যেতো না।

সুদর্শন-র বালি'র ভাস্কর্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল, কোনও বর্তমান ঘটনা-ই তাঁর নজর এড়াই না। তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-র জন্মদিন হতে পারে। বা মাতৃ দিবসে প্রধান মন্ত্রীর মায়ের আশীর্বাদ নেওয়া।

প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে বেলাভূমির ভাস্কর্যের মাধ্যমে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

ওডিশা'র তথা দেশের এক জনপ্রিয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পুরি রথযাত্রা'র দিনেও তিনি সমুদ্র সৈকতে তাঁর ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে ব্যস্ত দেবতা জগ্ননাথ ও তাঁর সহদেবতা বলরাম ও সুভদ্রা'র বালির রথ বানাতে।

জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিঞ্জো আবের অকস্মাৎ মৃত্যু র পরের দিনেই পুরি'র সৈকতে তাঁর প্রয়াণের শ্রদ্ধা জানালেন বালি শিল্পী সুদর্শন।

তাঁর ভাস্কর্যে কোনও এক নির্দিষ্ট গন্ডী-র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। কখনও রাজনৈতিক বক্তিত্ব, রাষ্ট্র প্রধান, খেলোয়াড়, গায়ক বা বিশেষ দিবস পালন বা বিভিন দেবদেবী'র মুর্তী তৈরি।

সুদর্শন-র বালি ভাস্কর্য বিভিন্ন সময়ে সামাজিক বার্তাও দিয়েছে। কখনও তিনি 'মাদক' দ্রব্য বর্জন-র বার্তা দিচ্ছেন বা কখনও বিশ্ব সবচেয়ে বড় সমস্যা প্লাস্টিক বর্জনের অনুরোধ রাখছেন তাঁর ভাস্কর্যের মাধ্যমে।

সামাজিক বার্তার সাথে সাথে তিনি শরীর চর্চা'র উৎসাহ দিতে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে পুরি সৈকতে বালি ভাস্কর্যের সাথে সাথে যোগ অভ্যাসের আয়োজন করেন।

সুদর্শন পট্টানায়েক আন্তর্জাতিক পিতৃ দিবসে এক অনন্য ভাস্কর্য নির্মান করেন। যা দেখে মুগ্ধ জনসাধরণ।

ভরতের স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তী তে পট্টানায়েক'র বালির বানানো শ্রদ্ধার্ঘ মন ছুঁয়ে যায়।

শিশু শ্রমিক নিয়ে তাঁর প্রতিবাদ বালি ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটে ওঠে আন্তর্জাতিক 'শিশু শ্রম বিরোধী দিবসে'।

ওড়িশা'র মানুষ রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে আর সুদর্শন পট্টানায়েক বাড়িতে বসে থাকবেন, একথা তাঁর চরম শ্রত্রুও ভাবতে পারেন না। না তিনি বসে থাকেননি। দ্রৌপদী মুর্মু-কে শুভেচ্ছা জানিয়ে পুরির সমুদ্র সৈকতে তাঁর মুরাল তৈরি করে তাঁকে শুভেচ্ছা জানালেন তাঁর নিজস্ব স্টাইলে।

সুদর্শন পট্টানায়ক ২০১৭ তে বিশ্বের বৃহত্তম বালির দুর্গ নির্মাণ করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেন। ওড়িশার পুরী সৈকতে বানানো বালির দুর্গ-টির উচ্চতা ছিল ৪৮.৮ ফুট। সে সময় অবধি ওই ভাস্কর্যটি-ই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বালির দুর্গ। ওই দুর্গের ভাস্কর্যে বিশ্ব শান্তির বার্তা দেওয়া হয়েছিলো। সেখানে মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলা এবং গৌতম বুদ্ধের মতো কিংবদন্তি নেতা এবং শান্তির প্রচারকদের ভাস্কর্য রয়েছে। মাত্র চার দিনেই বিশাল বালির দুর্গটি বানান তিনি। সুদর্শন পট্টানায়ক তার ৪৫ জন ছাত্রের সাথে ৭ ফেব্রুয়ারি ভাস্কর্যের কাজ শুরু করেন। তারা দিনে প্রায় ১২ ঘন্টা ধরে কাজ করে শেষ করেন।