রবীন্দ্রনাথের পুরাতন ভৃত্যের প্রতি একটি মমতা আছে--রাজা ও রাণী নাটকের শঙ্কর, খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন গল্পের রাইচরণ ইত্যাদি তাহার প্রমাণ।
এই কবিতায়-লেখা গল্পটির মধ্যে পুরাতন ভৃত্য কৃষ্ণকান্তের প্রতি প্রভুর কৃত্রিম-বিরক্তি-মিশ্রিত মমতার বর্ণনা এবং অনাড়ম্বর অথচ অব্যর্থ শব্দপ্রয়োগ লক্ষ্যযোগ্য। কথ্য ভাষায় অতিপরিচিত বিষয়ের বর্ণনা পাঠককে মুগ্ধ করে। সমস্ত কবিতাটি হাস্যরসে অভিসিক্ত করিয়া শেষের কলিতে করুণরসের অতর্কিত অকস্মাৎ অবতারণা, গল্পটিকে মর্মস্পর্শী করিয়াছে। দুইটি বিপরীত প্রকৃতির রসকে আশ্চর্য অপূর্বভাবে মিশ্রিত করা হইয়াছে এই কবিতায়।
এই রকম একটি কবিতাকে যখন নাটকের আকারে মঞ্চে দেখি।বাস্তবিক বিস্ময়ে অভিভূত হই। চন্ডীতলা প্রম্পটার তাঁর ২৩ তম জন্মদিনের প্রাক্কালে একাডেমিতে পুরাতন ভৃত্য নাটকের চৌষট্টি তম মঞ্চায়ন দেখে দর্শকদের উচ্ছাস, আবেগ ও ঘন ঘন হাততালির বহরে নিজেও আপ্লুত হয়ে যাই। শোনা যায় ভানু চট্টোপাধ্যায় নাট্যরূপ দিয়েছিলেন তথাপি নির্দেশক নিজের মুন্সিয়ানায়, সম্পাদনায় ও কেষ্ট চরিত্রের অভিনয়ের গুনে নাটক টির স্বার্থক রূপায়ন ঘটেছে। নাটকের প্রয়োজনে কয়েকটি চরিত্রের সৃষ্টি তা যে কতোটা দরকার ছিল সেটা বোঝা যায় টানটান উত্তেজনা চরমে পৌঁছানোর পর।
কর্তা অরূপ চৌধুরী ও গিন্নী তমসা ঘোষ প্রথম থেকেই ক্লাইমেক্স টিকে হাসির মোড়কে বেঁধে রেখেছিলেন।বাড়ির দুই চাকর নিবারণ ও কেষ্ট। একজনের প্রতি ভালোবাসা আর একজনের প্রতি বিরক্তি সুলভ আচরণ।সৌমিত্র ঘোষ ও প্রদীপ রায় ওঁদের এতোটাই স্বাভাবিক মঞ্চে আধিপত্য বিস্তারের অভিব্যক্তি ঘটিয়েছেন এককথায় অনবদ্য। তবে পুন্ডরী ও অনুকূল চরিত্রে সুরজিৎ কোলে ও কৌশিক মাল নির্দেশকের কথা ষোলোআনাই মেনে চলেন তা তাঁদের অভিনয়ে বোঝা যায়। তবে কুসুম চরিত্রে সপ্তবর্ণা আলু নাটকটি কে যে ভাবে অভিনয় দিয়ে মূল বিষয় সম্পর্কে আমাদের সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আঘাত হেনেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।ডাক্তার চরিত্রে অনিমেষ পাঁজার অভিনয় সাবলীল।
অয়ন রায়ের আবহ, তন্ময় চক্রবর্তী র আলো আর চঞ্চল আচার্য্য র মঞ্চ নাটকের পূর্ণতা পায়। প্রদীপ রায় এর নির্দেশনায় এই নাটকটি সকল দর্শকদের মন জয় করেছে।
- More Stories On :
- Puratan Bhritta
- New Drama
- Drama