• ২৭ বৈশাখ ১৪৩২, রবিবার ১১ মে ২০২৫ ই-পোর্টাল

Janatar Katha

Banner Add
  • কলকাতা
  • রাজ্য
  • দেশ
  • বিদেশ
  • রাজনীতি
  • খেলার দুনিয়া
  • বিনোদুনিয়া
  • সম্পাদকীয়
  • নিবন্ধ
  • ভ্রমণ
  • রাশিফল
  • টুকিটাকি
  • চিত্রহার
  • বিবিধ
  • ভিডিও
  • এছাড়াও
    • উৎসব
    • ব্যবসা
    • স্বাস্থ্য
    • শিক্ষা
    • প্রযুক্তি
    • হেঁসেল

Story

নিবন্ধ

গল্প হলেও সত্যি কি? (অন্তিম পর্ব )

ঐশী নিজের গল্প শেষ করলো, সৈকত এতক্ষন মন্ত্র মুগ্ধের মত গল্পটি শুনছিল, এবার সে বললো, ব্যাপারে, এবারের সফরটা মনে থেকে যাবে, যা একটা গল্প শোনালেন। একই গল্পে এই ধরণের অসুখ আর নরখাদক, এখনো ভাবতে পারছিনা আমি ঠিক কি শুনে নিলাম ,সেরা লেখেন আপনি। এই গল্প বেস্ট সেলার হবেই মিলিয়ে নেবেন আপনি।ঐশী: ধন্যবাদ।সৈকত: আচ্ছা । গল্পটা বই আকারে কবে পাবো ?ঐশী: আসা করি খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন।দেখতে দেখতে কেটে গেলো সেদিনের রাত, পরেরদিন বিকালে দুরন্ত এক্সপ্রেস এসে থামলো যশবন্তপুর স্টেশনে। সবার মতোই সৈকত আর ঐশীও নিজেদের লাগেজ নিয়ে ট্রেন থেকে বেরিয়ে এলো। সৈকত: আচ্ছা আপনার বোন কই ?ঐশী: চলুন দেখা করিয়ে দি, বাইরে আছে ওরা।সৈকত ঐশী স্টেশন এর বাইরে বেরোতেই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ঐশীকে। ঐশী সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললো, এই যে তিথি।সৈকত: Hi তিথি ! Nice to meet you.তিথি সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললো, same to you, আপনি ?ঐশী: আমার নতুন বন্ধু। ট্রেনে দেখা হলো, তোর গল্প বলতে বলতে এতদূর চলে এলাম।তিথি: oo wow. New friend ! নাম কি এই নতুন বন্ধুর ?সৈকত: সৈকত সেন, পেশায় সাংবাদিক।তিথি: আমি তিথি পেশায় নার্স।সৈকত: great তিথি ম্যাম।তিথি: আমাদের বাড়ি পর্যন্ত যেতে হবে কিন্তু।সৈকত কিছু একটা বলতেই যাবে এমন সময় কেও একজন বলে উঠল, আজকে হবেনা, ওনাকে অন্যদিন আসতে বলিস।সৈকত দেখলো তিথির পিছনে বছর ৩৫ এর এক মহিলা, চেহারা দেখে মনে হচ্ছে হয় তিনি খেলাধুলার সাথে যুক্ত নাহলে পুলিশ। তিথি বললো: কিন্তু দিদি কেনো?মহিলাটি বললেন: আজকে বাড়িতে একটু অসুবিধা আছে রে।সৈকত: আচ্ছা তিথি অন্য কোনো একদিন আসা যাবে নাহয়।ঐশী: ও আমাদের তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় বোন প্রিয়া। তিথির সাথে ও চলে এসেছিল এখানে। আগে পুলিশ ছিল, এখন সেচ্ছাবসর নিয়েছে।সৈকত: আচ্ছা তাহলে এবার আমি আসি, দেখি ট্যাক্সি কোথায় পাই!ঐশী: বাই।তিথি: বাই দাদা।সৈকত: বাই ঐশী, বাই তিথি।সৈকত দেখলো প্রিয়ার চোখে যেনো তার প্রতি এক রাশ অবিশ্বাস, সৈকত অবশ্য বেশি ভাবলনা, পুলিশ ছিল হয়ত সেই জন্যই শুরুতেই কাওকে বিশ্বাস করতে পারেন না নিজেকে এই সান্তনা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো সে।সৈকত বাইরে বেরিয়ে একটা টাক্সি করে নিল। একটা হোটেল আগেই বুক করে রাখা আছে, ওখানেই গিয়ে উঠবে সে। টাক্সিতে যেতে যেতে ঐশীর বলা গল্পটা তার মনে পড়তে থাকলো। কি সুন্দর গল্প লেখে আর বলে মেয়েটা, সত্যিই সে ফ্যান হয়ে গেছে ঐশীর। হটাৎ তার মনে একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো, আচ্ছা তিথী মানসিক রোগী ছিল, তিথী অনেক বছর ছিলনা এদের সাথে, সেখানে খেতেও নাকি পেতোনা ঠিক করে..... এদিকে ওর বড়দিদি একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন যিনি শ্রেয়ার মতই সেচ্চাবসর নিয়েছেন। ঐশী নিজেই গার্গীর মতই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। আজ থেকে কয়েক বছর আগে মালদায় একটা এইরকম সিরিয়াল কিলিং এর ঘটনাও ঘটেছিল, তাহলে কি ঐশী নিজের জীবনের গল্পই এইভাবে তাকে বলে দিলো?সৈকত ফোন করলো নিজের বন্ধু এবং বর্তমান লালবাজারের ACP সুবীরকে । সুবীর ফোন ধরতেই সৈকত প্রথম প্রশ্ন করলো, আচ্ছা সুবীর , মালদায় আজ থেকে ৫ বছর আগে যে মানুষ গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, সেখানে কি ACP সুদীপ সেন নিখোঁজ হয়েছিলেন না মারা গিয়েছিলেন ?সুবীর: জানা যায়নি , তবে যতদূর শুনেছি উনিও গায়েব হয়েছিলেন বডি পাওয়া যায়নি বলেই তোদের ফ্যামিলির হাতে দাদাকে তুলে দেওয়া যায়নি। আর অস্বাভাবিক ভাবেই তোর দাদার পর আর কেও গায়েব হয়নি।সৈকত: আমি জানতে পেরে গেছি সুবীর, কে ছিলো আসলে এইসব মানুষ দের গায়েব হওয়ার পিছনে?সুবীর: কি বলছিস ?সৈকত: যা বলছি ঠিক বলছি। আমি পেয়ে গেছি ওই রাক্ষুসী তার ঠিকানা, ও মানুষ নয়, নরখাদক যে বেচেঁ গেছে তার দুই বোনের জন্য কিন্তু আমার দাদার মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি নেবোই।হটাৎ এইসময় সৈকতের ট্যাক্সি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গিয়ে ধাক্কা মারে আর একটা গাড়িকে, সৈকত বুঝে ওঠার আগেই গাড়ির ফ্রন্ট সিটে সজোরে ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে।২ মাস পর:আদ্রিতা: ডক্টর কি বুঝছেন ? ও ঠিক হয়ে যাবে তো?ডক্টর চৌধুরী: দেখুন ম্যাম সৈকতের শারীরিক সমস্যা সমাধান তো ডক্টর উদয়ন দাস করেই দিয়েছেন কিন্তু সৈকতের মানসিক সমস্যার সমাধান হতে আরো সময় লাগবে।আদ্রিতা: ওর schizophrenia আবার ফিরে এসেছে?ডক্টর চৌধুরী: ফিরে আসার জন্য কোনোদিন সে যায়নি এইরোগ থেকে মুক্তি নেই আদ্রিতা । সে থেকেই গিয়েছিল সবার অজান্তে শুধু সময় পেতেই আবার নিজের খেলা দেখিয়েছে।আদ্রিতা: কিছু কি করা যায়না? ওকে যে এই কষ্টে আর দেখতে পারিনা আমি।ডক্টর চৌধুরী: ওর দাদাই ছিল ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, ওর জীবনের যেকোনো সমস্যা ওর দাদাই সমাধান করে দিত, সুদীপ এর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থেকেই ও নানারকম গল্প ভাবতে থাকে নিজের মাথায়, ভেবে নিতে থাকে সেই সমস্ত চরিত্র যারা হয়ত সত্যি নেই এই দুনিয়ায় কোথাও । ও সেই চরিত্রগুলোকে মেরে নিজের দাদার মৃত্যুর প্রতিশোধ তোলে। এর আগেও বহুবার ও এইরকম করেছে, এবারেও একই কাজ করলো আর ওর মধ্যে এই জিনিষ তখনই দেখা যায় যখন ও নিজেকে একা মনে করে। যেমন এবারের ট্রেন জার্নি র সময় ওই বার্থে যার আসার কথা ছিল সে আসেইনি, পুরো রাস্তা সৈকত একা একা কাটিয়েছে আর ভেবে নিয়েছে একটা গল্প। এখন ও আবার ঠিক আছে কিন্তু যখনই ও আবার নিজেকে একা মনে করবে তখনই আবার এই রোগ জাকিয়ে বসবে, আদ্রিতা, তুমি ওর স্ত্রী তোমাকেই দায়িত্ত্ব নিতে হবে যাতে ও কোনোদিন নিজেকে একা অনুভব না করে, সবসময় ওর সাথে থাকতে হবে তোমাকে। পারলে তুমিই পারবে ওকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে।আদ্রিতা: আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো স্যার, আমি চেষ্টা করবো যাতে সৈকতের মনে বেড়ে ওঠা এই মিথ্যা গল্প গুলো দূর হয়ে যায় আর ও সত্যি দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে পারে।এমনসময় কেবিনে এলো সৈকত, আদ্রিতা, তুমি আমায় যে এখানে কেন আনো, সেই সিডেটিভ দিয়ে কি কি বলিয়ে নেয় আমাকে দিয়ে।সৈকত আরো কিছু বলতেই যাচ্ছিলো, কিন্তু আদ্রিতা সুযোগ দিলো, উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে আর কানের মধ্যে বললো, শান্ত হও সৈকত, আমি আছি তো তোমার সাথে সবসময়, তোমার বেস্টফ্রেন্ড। ~সমাপ্ত~লেখকঃ সায়ন্তন গোস্বামী। (Sayantan Goswami)

মে ০৯, ২০২৫
নিবন্ধ

গল্প হলেও সত্যি কি? (তৃতীয় পর্ব )

তন্ময় থানায় ঢুকলো আর সোজাসুজি শ্রেয়ার কেবিনে এসে ঢুকলো, তখনও শ্রেয়া মন দিয়ে ওই কানের দুলটা দেখছিলো, তন্ময় ঢুকতেই সে সেটা টেবিলের উপরেই রেখে দিলো আর উঠে দাঁড়ালো সম্মানের খাতিরে।তন্ময়: আরে বসে পড়ো, এই মুহূর্তে তুমি লিডার।শ্রেয়া: কিন্তু স্যার আপনি তো আমার সিনিয়র।তন্ময়: সেসব পরে হবে, আগে আমার কিছু কথা আছে। বসো বলছি। শ্রেয়া চেয়ারে বসলো আর সামনেরটায় তন্ময়, তুমি হয়তো জানো না আমি তোমার দিদিকে ভালোবাসি। শ্রেয়া: জানি স্যার। ও আমায় সবই বলে।তন্ময়: জানো? তবে বলোনি কেন?শ্রেয়া: কারণ আমি চেয়েছিলাম দিদিই আমার পরিচয় দিক।তন্ময়: সব যখন জানাজানি হয়েই গেছে তখন আমি কি তোমাদের ওই দুজনের পরিবারে তৃতীয় সদস্য হতে পারি?শ্রেয়া: আমি আপনাকে নিজেই দাদার মতোই দেখি। তন্ময়: এদিকে আপনি বলে যাচ্চো। আজ থেকে তুমি বলবে আমায়।শ্রেয়া: আচ্ছা তাই হবে।তন্ময়: আর শ্রেয়া আর একটা ব্যাপার, নাহ থাক কাল বলবো, আগে আমি নিজে শিওর হই। চলো এবার নিজের ঘরে যাও, রাত হয়েছে অনেক।শ্রেয়া: আজ স্যার আবার পাহারায় বসেছে, আমি কি করে বাড়ি যাই। তন্ময়: বিগত দুদিন আমি বিশ্রাম নিয়েছি আজ তুমি নাও, বাড়ি যাও দিদির সাথে সময় কাটাও। কথা দিচ্ছি আমি ওই রাস্কেলকে ধরেই ছাড়বো।তন্ময় রাতের ডিনারটা সেরে নিলো থানার পাশের হোটেলটায়, এবার ওকে বেরোতে হবে রাতের এই শহরে টহল দিতে। ঠান্ডাটাও বেশ বেড়ে গেছে, বাইরে এখন ৬ ডিগ্রী। রাস্তায় বেরিয়ে একবার ভাবলো গার্গীকে ফোন করবে, এমন সময় তন্ময়ের ফোন নিজেই বেজে উঠলো, মৃদুল ফোন করেছে।তন্ময় ফোন ধরতেই শুনতে পেলো, স্যার বাঁচান আমায়! স্যার আমাকে মেরে ফেলবে..... স্যার!একটা প্রবল আর্তনাদে ফোন টা কেটে গেলো। তন্ময়ের বুক কাপছে, তাহলে কি মৃদুল আজকে শিকার হলো। তন্ময়ের আর ভাবার সময় নেই সে নিজের পিস্তল হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়লো। রাতের অন্ধকার আর নিঃস্তব্ধ হাড় হিম করা পরিবেশ যে কোনো কারোর বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে বাধ্য। কিন্তু আজকে তন্ময়কে ওই অপরাধীর শেষ দেখতেই হবে ,আর নয়। তন্ময়ের জীপ রাতের অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে চলেছে, কিন্তু কই ? কোথাও কিছু নেই। তন্ময় নিজের জীবনে এত জটিল কেস কোনোদিন দেখেনি। এই কেস টার উপর সে জীবনের সবচেয়ে সময় খরচ করে ফেলেছে। এইসব ভাবতে ভাবতে সে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল হটাৎ তার গাড়ির সামনে এসে পড়ল গার্গী। সে সজোরে ব্রেক কষে গাড়িটা কোনমতে থামলো। গার্গী প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে, সে তন্ময়কে দেখতেই তার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো। তন্ময় জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে?গার্গী: একটা বিভৎস দেখতে জন্তু আমার সামনে একটা লোককে মেরে খেয়ে ফেললো, এখন এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলো নাহলে আমিও মরে যাবো।তন্ময়: আমি আছি তো। চলো আমিও দেখতে চাই পশুটাকে।গার্গী: প্লিজ তন্ময় চলো এখান থেকে।তন্ময়: গার্গী আমি এই কেসটার জন্য নিজের সম্মান হারিয়েছি আমি ওই জন্তুটাকে ছাড়বোনা। কোনো মতেই না।গার্গী: তন্ময় , প্লিজ তুমি পরেও তদন্ত করতে পারবে কিন্তু আজকে না। আমি দেখেছি কিরকম ভয়ানক ছিল ওর চোখ গুলো ।তন্ময়: এই জীপ টা নিয়ে এখান থেকে চলে যাও।আমি ওই পশুটাকে না দেখে যাবো না কোনোভাবেই।গার্গী: আমি তোমাকে একা ফেলে এখন থেকে কোনো ভাবেই যেতে পারিনা।তন্ময়: এটা আমার অর্ডার গার্গী। তুমি এখনই বেরিয়ে যাও এখান থেকে। আজকে আমি কোনোভাবেই যেতে পারবনা এখান থেকে।এই বলে তন্ময় এগিয়ে যেতে থাকলো সামনের দিকে, হাতে স্রেফ একটা পিস্তল। পিছনে না দেখলেও সে বুঝতে পারলো তার পিছনে পিছনে গার্গী আসছে। সে আবার বললো, গার্গী যাও এখান থেকে।কিন্তু কোনো সাড়া পেলনা। সে আবার বললো, গার্গী আমার কথা কি তুমি বুঝতে পারছনা? যাও এখান থেকে। তুমি থাকলে আমার কাজের অসুবিধা হবে। এবারেও কোনো উত্তর এলোনা। তোমার সাথে সাথে আমারও বিপদ বাড়বে, প্লিজ যাও।কিন্তু এবারেও কোনো উত্তর এলোনা।তন্ময় বিরক্ত হয়ে পিছন ফিরে তাকালো, কিন্তু যা দেখলো সেটা সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। হতবাক হয়ে সে শুধু দাড়িয়ে রইলো, যেনো নিজের সমস্ত শক্তি এক মুহুর্তের মধ্যে সে হারিয়ে ফেলেছে।তন্ময় দেখছে তার সামনে দাড়িয়ে শ্রেয়া, মুখে রক্ত, হাতেও রক্ত লেগে। তন্ময় বুঝতে পারলনা ব্যাপারটা। প্রথমে ভাবলো হয়তো শ্রেয়া কোনোভাবে আহত হয়েছে কিন্তু তারপরেই মনে হলো এই রক্ত শ্রেয়ার শরীরের নয় বরং এই রক্ত অন্যকারোর । তন্ময় বলে উঠলো, শ্রেয়া এটা কি?? তুমি এই অবস্থায়?? কি করেছ তুমি?শ্রেয়া বড়ই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তন্ময়ের দিকে,কোনো কথা বলছেনা। শুধু মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ হচ্ছে। হটাৎ শ্রেয়া জাপিয়ে পড়লো তন্ময়ের উপর। বড়ই হিংস্র তার দৃষ্টি, সে তন্ময়ের ঘাড়ে কামড় বসানোর চেষ্টায় রয়েছে সে, শুরু হলো ধস্তাধস্তি। দুজনেই দুজনকে সমানে সমানে পাল্লা দিয়ে চলেছে, সবে আজকের শ্রেয়াকে দেখলে চেনার উপায় নেই এই শ্রেয়াই সেই পুলিশ অফিসার যে দিনেরবেলায় সবার রক্ষাকর্তী আর রাতের অন্ধকারে আজ সে হয়ে উঠেছে এক পিশাচিনী । তন্ময় বহু কষ্টে শ্রেয়া লাথ মেরে দূরে ফেলে দিলো আর হাতড়ে নিজের পিস্তলটা মাটি থেকে হাতে তুলে নিল । আর তারপরেই সোজা উঠে দাঁড়িয়ে পিস্তল তাক করলো শ্রেয়ার দিকে, শ্রেয়া হিংস্র গর্জন করেই চলেছে।এখন শ্রেয়া তন্ময়ের গান পয়েন্টে। তন্ময় গুলি চালাতে যাবে এমন সময় কেও একজন সজোরে তন্ময়ের মাথায় পিছন থেকে মারলো কোনো রড জাতীয় পদার্থ দিয়ে। তন্ময় জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে ।যখন তন্ময়ের জ্ঞান ফিরলো তখন সে একটা ঘরে আধ শোয়া অবস্থায় পড়ে আছে। সে বুঝল তার হাত পা বাঁধা। সে চিৎকার করে উঠলো, শ্রেয়া এইগুলো কি ধরনের অসভ্যতা। তুমি জানো না আমি কে! আমি কি করতে পারি তোমার সাথেএমন সময় তন্ময়কে অবাক করে দিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকলো গার্গী।তন্ময়: গার্গী তুমি?? শ্রেয়া কি তোমার সাথেও কিছু করেছে?? উত্তর দাও গার্গী। কোথায় সেই বিশ্বাসঘাতক? আমার হাত পা টা খুলে দাও একবার তারপর ওকে দেখছি আমি।গার্গী: তন্ময় ক্ষমা করো কিন্তু শ্রেয়া বিশ্বাসঘাতক নয়।তন্ময়: মানে? কি বলছো কি তুমি ?গার্গী: তোমার সাথে বিশ্বাসঘাকতায় আমি জড়িত।তন্ময় হতবাক হয়ে গেলো, তার মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। এদিকে গার্গী বলে চললো, শ্রেয়া মানসিক ভারসম্যহীন। ওর মধ্যে একধরণের অদ্ভুত অসুখ আছে যেটা দেখা দেয় কয়েক বছর আগে একটা কেস সল্ভ করতে গিয়ে।তন্ময়: তুমি কি বলতে চাইছো ? কোন কেস?গার্গী: দাড়াও আমাকে শেষ করতে দাও। আমার কথা শেষ হলেই তুমি সব বুঝে যাবে। ওটা ছিল দুর্গাপুরের কেস। ওটা সল্ভ করার পর থেকেই ওর মধ্যে একটা পরিবর্তন আমি লক্ষ্য করেছিলাম। ধীরে ধীরে পরিস্থতি এমন হয় যে ওর মধ্যে দুটো সত্তা জেগে ওঠে, ১. সারাদিন সবার চোখের সামনে একজন কর্তব্যরতা পুলিশ কর্মী যে মানুষের সেবা করে, মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করে আর ২. রাত বাড়লেই সেই পুলিশ কর্মী হয়ে যায় একজন নরখাদক। হ্যাঁ তন্ময় তুমি ঠিকই শুনছো ওই সেই নরখাদক, সেই জন্তু। আমি জানতাম না গোটা ঘটনাটা , এই মাত্র কয়েকদিন আগেই সমস্ত জানতে পারি আর ভাবতে থাকি কিভাবে শ্রেয়া কে না জানিয়ে শ্রেয়ার মধ্যে থেকে সেই নরখাদক কে শেষ করবো। শ্রেয়া যে আমার নিজের বোন, ওকে আমি মরতে দিতে পারিনা।তন্ময়: কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?গার্গী: সেটা আমিও বুঝিনি তন্ময়। কয়েকমাস আগে আমাদের গুদাম ঘরে যখন একটা লোকের আধ খাওয়া দেহ পেলাম তখন বুঝলাম আমার বোন রাতে পাহাড়া নয় বরং শিকারের খোঁজে বেরিয়ে যায়। আমি খোঁজ নিলাম, ডক্টর মাথুরের সাথে কনসাল্ট করলাম আর উনিই শ্রেয়ার অজান্তেই ওর অবচেতন মনের সব কথা বের করে এনে। শ্রেয়া একজন সৎ পুলিশ অফিসার কিন্তু ওর মনের কোনো এক গভীরে লুকিয়ে আছে ওই নরখাদক সত্ত্বা। ও এখনো ট্রিটমেন্টে রয়েছে। আর অবাক বিষয় গার্গী নিজেই জানেনা ও রাতের অন্ধকারে এইসব করে বেড়ায়। ও আমার কানের দুল পর্যন্ত খুঁজে পেয়েছে খুনের জায়গায় আর ভাবছে আমি নাকি খুন গুলো করছি।তন্ময়: কিছুই মাথায় ঢুকছেনা আমার ঠিক। এসব কি হচ্ছে কেন হচ্ছে? এসব সত্যিই হচ্ছে?গার্গী: হচ্ছে তন্ময়, হচ্ছে। ডক্টর মাথুর বলেছেন ওই দুর্গাপুরের কেস সলভ করতে গিয়ে যখন প্রায় ১৫ দিন শ্রেয়া ওদের হাতে বন্দি হয়েছিল তখন ওকে প্রতিরাতে এই মানুষের মাংস খেতে দেওয়া হতো। পেটের খিদে মেটাতে ওকে খেতেও হয়েছে সেসব আর অবশেষে যখন ওকে খুঁজতে খুঁজতে পুলিশ মূল অপরাধী পর্যন্ত পৌছালো ততদিনে বোন আমার মানুষের মাংসের স্বাদ পেয়ে গেছে।তন্ময়: গার্গী আমকে খুলে দাও। আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমায় সাহায্য করবো। আর এই কথা তুমি আর আমি ছাড়া কেও জানবে না। ট্রাস্ট মি!গার্গী: আমি তোমায় বিশ্বাস করি তন্ময়, ভালোবাসি, প্লিজ আমার আর আমার বোনের পাশে থেকো। গার্গী তন্ময়ের সমস্ত বাঁধন খুলে দেয়, কিন্তু তন্ময় নিজেই ছিল বিশ্বাসঘাতক, সে নিজের সাফল্যের জন্য সব করতে পারে, নিজে বাঁধন মুক্ত হতেই সে পাশে পরে থাকা লাঠি দিয়ে গার্গীর মাথায় সজোরে আঘাত করে। গার্গী লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।তন্ময় বলে, সরি গার্গী, আমি তোমায় ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু এই কেসটায় আমায় জিততেই হবে।তন্ময় ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে আর মূল বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই গুদাম ঘরটায় যায়, ঘরে ঢুকে দেখে সামনে দাড়িয়ে শ্রেয়া। তন্ময় বলে ওঠে, শ্রেয়া সারেন্ডার করো, নাহলে এখনই আমি কিন্তু.... এক্ষুনি ফায়ার করবো।শ্রেয়া অতি ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তন্ময়ের দিকে আর ক্রমাগত গর্জন করতেই থাকে। এরপরের শ্রেয়া ছুটে আসে তন্ময়ের দিকে, তন্ময় একটা গুলি চালায় শ্রেয়ার হাতকে লক্ষ্য করে, কিন্তু সেটা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়। শ্রেয়া দৌড়ে এসে তন্ময়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। শুরু হয় আবার লড়াই, তন্ময় আপ্রাণ চেষ্টা করে শ্রেয়াকে বাগে আনার কিন্তু শ্রেয়া যেন আরো বেশি শক্তিশালী এবারে। তাও তন্ময় কোনোভাবে শ্রেয়াকে দূরে ছুড়ে ফেলে আর পিস্তল তুলে নিয়ে গুলি চালাতে যায়, কিন্তু একি গুলি কোই?শ্রেয়া আবারো উঠে ওর দিকে দৌড়ে আসে, বিপদ বুঝে তন্ময় পালাতে যায় কিন্তু পা পিছলে মাটিতে পরে যায়, সাথে সাথেই শ্রেয়া ওর উপর ঝাঁপিয়ে পরে, তবে এবার আর তন্ময় কোনো প্রতিরোধের সুযোগটুকু পায়না, শ্রেয়া তন্ময়ের নুলি ছিঁড়ে ফেলে।২ মাস পর: তন্ময়ের মৃত্যুর পর গোটা ডিপার্টমেন্ট হাল ছেড়ে দেয়, শ্রেয়া নিজের ব্যার্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয় আর চলে যায় মুম্বাই, সেখানে তার কোনো এক কাকা আছেন। অবশ্য তাকে জোর করেই মুম্বাই পাঠায় গার্গী, সেখানে শ্রেয়ার ট্রিটমেন্ট করায় তার কাকা। গার্গী চাইলে নিজের বোনের ট্রিটমেন্ট করতেই পারতো কিন্তু সে চায়নি পুলিশ কোনোভাবে তার বোনকে সন্দেহ করুক। প্রায় ৬ মাসের ট্রিটমেন্টের পর শ্রেয়ার ভিতরের নরখাদক সত্তা সম্পূর্ণরূপে লোপ পায় শ্রেয়ার অজান্তেই আর এইভাবেই শেষ হয় জলপাইগুঁড়ির আতঙ্ক।ক্রমশ...... (পরের পর্বে)লেখকঃ সায়ন্তন গোস্বামী। (Sayantan Goswami)

এপ্রিল ২৭, ২০২৫
নিবন্ধ

গল্প হলেও সত্যি কি? (দ্বিতীয় পর্ব )

প্রতিদিনের মতোই আজও তন্ময় এসে বসেছে নিজের চেয়ারে আর দেখে চলেছে একের পর এক ফাইল, তার ভিতরে একই সাথে অস্বস্তি আর রাগের অনুভূতি হচ্ছে।অস্বস্তি এটা ভেবে যে সে কিছুতেই কোনো সন্দেহভাজন ধরতেই পারছেনা আর রাগ এটা ভেবে এই শ্রেয়ার আগে তার মাথায় এই গোটা এক সপ্তাহ রাত ৮টা -ভোর ৫টা কারফিউ জারি রাখার কথা। মেয়েটা এই রাতের অন্ধকারে ফাঁকা রাস্তায় নিজেরই লোক সাজিয়ে রেখেছে চারিদিকে। অপরাধী শিকার দেখে যদি লোভে পরে এগিয়ে আসে তো কিস্তিমাত।এমনসময় প্রায় হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে এসে অমিত বাবু বললেন, ম্যাম, কাল রাত থেকে সুবীর বাবুকে পাওয়া যাচ্ছিলোনা, আজ সকালে মনিস্ট্রির সামনে ওনার জামা কাপড় আর আধ খাওয়া শরীর পাওয়া গেছে।কথা বলতে গিয়ে অমিত বাবু যেন হাপিয়ে উঠছেন, ভয় তার চোখে মুখে স্পষ্ট। ম্যাম এটা কোনো মানুষের কাজ হতেই পারেনা, এটা কোনো না কোনো জন্তুর কাজ।শ্রেয়া: জন্তু? এই শহরের মাঝে? কি করে আসবে? আর আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা কি বলছে?অমিত: ম্যাম কোনো সিসিটিভিতে কিছু ধরা পড়েনি, শুধু দেখা যাচ্ছে সুধীর একটু এগিয়ে গেলো সামনে একটা কফি সপের দিকে, তারপর হটাৎ ওর চিৎকার, ব্যাস, তারপর আর কোনো ফুটেজ নেই ম্যাম।শ্রেয়া: কোনো সিরিয়াল কিলার? কিন্তু সে মানুষের মাংস কেন খাবে?তন্ময় এবার বলে উঠলো, খেতেই পারে, হতে পারে সে ক্যানিব্যাল, বা হতে পারে তার কোনো পোষা জন্তু আছে যে মানুষের মাংস খায় রাতের অন্ধকারে।শ্রেয়া: মানে স্যার আপনি বলছেন আমাদের শহরে নরখাদক ঘুরে বেড়াচ্ছে?তন্ময়: শুধু নড়খাদক বলিনি শ্রেয়া, কোনো মানুষের পোষা হিংস্র জন্তুও হতে পারে, তুমি বোধহয় পুরোটা শুনলেনা, এভাবে কিন্তু নিজের জায়গা বেশিদিন ধরে রাখা চাপ।শ্রেয়া আর কথা বাড়ালোনা তন্ময়ের সাথে, সে জানে তন্ময় মেনেই নিতে পারেনা তার জুনিয়র তাকে লিড করছে এই কেসে, আর তাই মুহূর্তে মুহূর্তে তাকে ক্ষত বিক্ষত করে কথার বানে।তন্ময় আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লো ক্যাফেটেরিয়ার উদ্দেশ্যে, আজ সে ঠিক করে নিয়েছে গার্গীকে সে প্রপোজ করবে। একমাত্র গার্গীই পারে তাকে ভালোবাসতে আর ভালো রাখতে।শ্রেয়া বেরিয়ে পড়লো নিজের তদন্তের খোঁজে, সে তন্ময়কে বেরিয়ে যেতে দেখে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো, এই লোকটা থাকলে তার তদন্তের কোনো কাজই করা সম্ভব হবেনা। শ্রেয়া সুমন্তকে বললো, জিপ বের করো, ঘটনাস্থলে যাওয়া দরকার আগে।প্রায় ২০ মিনিট পর মনিস্ট্রির সামনে এসে থামলো জিপ, শ্রেয়া নেমে এলো, বডি নিয়ে যাওয়া হয়েছে পোস্টমর্টেম করতে। শ্রেয়া চারিদিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলেছে, এগিয়ে যাচ্ছে সামনের সেই কফিসপের দিকে। নাহ খুনি যেন কোনো প্রমান ছেড়েই রাখেনি। এতো সুন্দরভাবে গুছিয়ে ক্রাইম কি একজনের পক্ষে সম্ভব?সুমন্ত: ম্যাম ইনি কিছু বলতে চান।শ্রেয়া নিজের খেয়াল থেকে বেরিয়ে এলো, তার সামনে দাঁড়িয়ে একজন বেশ বয়স্ক লোক এই ঠান্ডায় কেঁপে চলেছেন, শ্রেয়া, কিছু দেখেছেন?লোকটা ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না, শুধু পকেট থেকে বের করে দিলেন একটা কানের দুল আর কাপা স্বরে বলে উঠলো, কাল রাতে ওই পুলিশ অফিসারকে......নাহ আর পারলোনা লোকটা, বোধহয় ওই ভয়ানক দৃশ্যটা মনে পরে গেলো, শ্রেয়া , সুমন্ত এনাকে নজর রেখো, আর আপনি আমার অর্ডার ছাড়া এই জায়গা ছাড়বেন না।শ্রেয়া এবার কানের দুলটা আরো ভালো করে দেখলো, চোখের মুখে একটা অন্যরকম যেন ভয়ের আভাস স্পষ্ট, তাহলে কি স্যার যেটা বললেন সেটাই ঠিক?তন্ময়ের অনেক অনুরোধে শেষমেষ নিজের কাজ শেষ করে ক্যাফেটেরিয়ায় এসেছে আজ গার্গী, কিন্তু তার মন যেন এখানে নেই। তন্ময় অবশ্য প্রতিদিনের মতোই গার্গীকে নিজের মনের কথা, ভালোবাসার কথা বলেই চলেছে, তবে একটা সময়ের পর তন্ময়ের মনে হলো সে যেন কেবলই দেয়ালের সাথে কথা বলে যাচ্ছে কারণ গার্গী তো পাত্তাই দিচ্ছেনা তার মনের অবস্থাকে।তন্ময়: গার্গী তোমাকে আজকে কিরকম আনমনা মনে হচ্ছে ! সব ঠিক আছে তো ?গার্গী: কি?তন্ময়: তুমি ঠিক আছো?গার্গী: ঠিক না থাকার কি আছে?তন্ময়: তাহলে এইরকম লাগছে কেনো তোমায় ??গার্গী: কিরকম লাগছে?তন্ময়: পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেওয়া এত সহজ নয় ম্যাম। আপনি কিছু একটা লুকাচ্ছেন মিস ডক্টর।গার্গী: এই পুলিশগিরি বাইরে করবে আমার সাথে করতে এসো না, আর তাছাড়াও আমার অনেক কাজ আছে তন্ময়, তোমার জন্য চেম্বার ছেড়ে এসেছি।তন্ময়: আহা রেগে যাও কেন, তুমি ছাড়া আর কে আছে বলো যার কাছে একটু সময় চাইতে পারি।গার্গী: দেখো তন্ময়, তোমায় আমি অবশ্যই পছন্দ করি, তুমি তোমার বাবা মা, ভাই বোন, তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড সবার ব্যাপারে নিজেই বলেছো কিন্তু আমায় জিজ্ঞেস করেছো কোনোদিনও আমার পরিবারে কে থাকে? আমি কিভাবে বড়ো হয়েছি? আমায় কি কি সহ্য করতে হয়েছে? তন্ময় তুমি বলো তুমি আমায় ভালোবাসো অথচ তুমি তোমার ভালোবাসার কোনো খবর রাখো না উল্টে তুমি এমন ব্যবহার করো যেন মনে হয় চেম্বারের বাইরেও আমি কারোর কাউন্সেলিং করছি।তন্ময়: সরি গার্গী, আমি এর আগে কখনো প্রেম করিনি, তাই আমি অনেক ভুল করেছি, কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমায় ভালোবাসি। আজ তুমি বলো তোমার পরিবারের ব্যাপারে, তোমায় বিয়ে করতে হলে তো তাদেরকে আগে চিনতে হবে, তবে না গিয়ে বলতে পারবো আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি, ওকে নিজের করতে চাই।গার্গী: আমার বাবা মা কেও নেই, আজ থেকে ৫ বছর আগে একটা এক্সিডেন্টে দুজনেই....!তন্ময়: সো সরি, তাহলে তোমার পরিবার?গার্গী: আমার পরিবার একজনকে নিয়েই আমার বোন। আর আমার বোন হলো শ্রেয়া, ইন্সপেক্টর শ্রেয়া, যাকে তুমি একদমই সহ্য করতে পারোনা।তন্ময় চমকে গেলো এই কথাটা শুনে, শ্রেয়া তোমার বোন?গার্গী: আজ্ঞে হ্যাঁ, ও আমারই বোন, যতবার তোমায় বলতে গেছি তুমি কথা ঘুরিয়ে দিয়েছো। এবার বলো, শ্রেয়ার দিদির সাথে প্রেম করবে? ও ছাড়া কিন্তু আমার কেও নেই, আমি ওর কেও নেই তাই আমরা কিন্তু যেখানেই থাকবো একসাথে থাকবো। তন্ময়: আজ থেকে আছে তো, আমি আছি তোমাদের দুজনের জন্য আর তোমরা দুজন আমার জন্য।গার্গী: সত্যি বলছো তন্ময়?তন্ময়: সত্যি সত্যি সত্যি, তিন সত্যি। এবার তো একটু হাসুন ম্যাম, আপনার ওই হাসি দেখার জন্য যে আমি প্রাণও দিতে পারি। গার্গী: থাক অনেক হয়েছে, এবার যাও নিজের কাজে আর আমাকেও যেতে দাও।তন্ময়: গার্গী, তুমি আমায় যতটা খারাপ ভাবো আমি কিন্তু ততটা নয়।গার্গী: তুমি খারাপ মানুষ নয় তন্ময়, কিন্তু তোমার ছোটবেলা কেটেছে একাকিত্বে, আর তাই তুমি চাইলেও নিজের আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব বদলাতে পারোনা। আর এটা নিয়ে আবার নিজেই কষ্ট পাও। তুমি মানুষ ভালো শুধু নিজেকে চিনতে পারোনা।তন্ময়: তুমি আছো তো আমায় চেনানোর জন্য। থাকবে তো এভাবেই?গার্গী: ঠিক থাকবো। এবার বরং আসি, নাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।তন্ময়: আচ্ছা বেশ আর আটকাবো না।এই বলে গার্গী উঠে দাঁড়ালো এবং রেস্টুরে্নট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে এগিয়ে গেলো, এরই মাঝে হটাৎ গার্গী দাঁড়িয়ে পড়লো আর বললো, তন্ময়, সাবধানে থেকো, আমি তোমায় ভালোবাসি, পারলে নিজেকে এবং শ্রেয়াকে এই কেস থেকে দূরে নিয়ে যেও, মনে করো এটাই আমার তোমার থেকে আবদার।তন্ময়: কিন্তু, এই কেসটা শ্রেয়ার জন্য খুব জরুরী।গার্গী: কারোর প্রাণের থেকে বড়ো কিছু হতে পারেনা তন্ময়।এই বলে গার্গী বেরিয়ে গেলো। গার্গী র এইরকম আচরণ তন্ময়কে বেশ অবাক করে তুললো। যে মেয়ে সবসময হাসি খুশি থাকে, যে মেয়ে তার হাসির কারণ, যে তাকে সবসময় মোটিভেট করেছে এই তদন্তে সেই কিনা আজকে এইরকম ভাবে কেস ছেড়ে দিতে বলছে ? তন্ময় ভাবলো, কি হলো, আমাকে সরিয়ে নাহয় তাও বুঝলাম নিজের বোনকে সুযোগ করে দিতে চায় কিন্তু নিজের বোনকেও সরে যেতে বলছে ?? কেনো জানিনা মনে হচ্ছে ও কিছু বড়ো একটা লুকিয়ে ফেলছে।এমন সময় তন্ময়ের ফোন টা বেজে উঠলো, তন্ময় দেখলো স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে মৃদুলের নাম। এই মৃদুল হলো তন্ময়ের অতি বিশ্বস্ত ইনফরমার, পৃথিবীতে এমন কোনো জায়গা নেই যেখান থেকে এই ছেলেটা খবর বের করতে পারেনা।আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কথা, তখন এই মৃদুল ছিল কুখ্যাত মাফিয়া আবরারের ডানহাত। বহু চেষ্টা করেও পুলিশ আবরারকে ছুঁতে পর্যন্ত পারেনি। অবশেষে কেসটা এলো তন্ময়ের হাতে। তন্ময়ও প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিলো ঠিক এমন সময়ে সামনে উপস্থিত হলো মৃদুল।দিনটা ছিল এক বর্ষার, মৃদুল পুরোই ভিজে গেছে আর হাঁপাচ্ছে। তন্ময় ওকে শান্ত করে জল দেয় খেতে। তারপর মৃদুল ধীরে ধীরে সব তথ্য দেয় আবরারের আর মৃদুলের বিশ্বাসঘাতকতাই আবরারকে ধরিয়ে দেয়।আবরার ধরা পড়ার পর অবশ্য তন্ময় জানতে চেয়েছিলো কেন সে নিজের মালিকের সাথে এইরকম করলো, উত্তরে সে বলেছিলো আবরারের স্ত্রীকে সে ভালোবাসতো আর আবরার প্রতিদিন প্রতিরাত মেয়েটার উপর অত্যাচার করে বেড়াতো তাই আর সহ্য না করতে পেরে শেষমেষ সে এই সিদ্ধান্তই নেয়। এখন অবশ্য দুজনে একসাথে সুখেই আছে। মৃদুল নিজের ব্যবসাও করছে আর সাথে তন্ময়ের খবরি সে।তন্ময় ফোনটা ধরতেই মৃদুল বলে উঠলো,স্যার একটা খবর আছে!তন্ময়: কি ?মৃদুল:আজ থেকে ২ বছর আগে রানিগঞ্জে এইরকম মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল স্যার।তন্ময়: কিন্তু সেরকম তো কোনো রিপোর্ট ফাইল হয়নি!মৃদুল: হবে কিভাবে ? কারণ যারা নিখোঁজ হয়েছিল তারা সবাই গ্যাংস্টার ছিল, একটা সময় প্রায় ৫ টা গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য লড়াই করছিল কিন্তু হটাৎ একটা গোষ্ঠী ফুলে ফেঁপে ওঠে আর আর বাকি গোষ্ঠী গুলোর লোকজন যেনো ভ্যানিশ হয়ে যায় পুরো, কেও খুঁজে পায়নি তাদের।তন্ময়: সেটাতো নিজেদের মধ্যে লড়াইতে বাকিরা মারাও যেতে পারে...মৃদুল: স্যার লোক গুলো ঠিক এইভাবেই ভ্যানিশ হতো, শুধুই রক্ত আর হাড় পাওয়া যেত মাঝে মাঝে, মাঝে মাঝে সেটাও না। পুলিশ রিপোর্ট ফাইল হয়নি কারণ ওদের পরিবারের লোকেরা ভয় পেয়েছিলো।তন্ময়: আচ্ছা যে গোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত টিকে গিয়েছিল তাদের নেতার নাম কি ?মৃদুল: ওয়াসিম ! কিন্তু স্যার ওয়াসিমও বেচেঁ নেই।তন্ময়:সে কি মারা গেলো কিভাবে ?মৃদুল: ওইভাবেই, একদিন ওরও রক্ত আর হাড় পাওয়া যায়। তবে এই কেস তার ইনভেস্টিগেশন করেছিল শ্রেয়া ম্যাম !তন্ময় : কি ?মৃদুল: ইয়েস স্যার! আর শেষ পর্যন্ত রণজিৎ ধরা পড়ে ম্যামের হাতে, আর জানা যায় যে এই রণজিৎ নিজে সর্বেসর্বা হওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের সমস্ত শত্রুদের মেরে কুকুরকে খাইয়ে দিত।তন্ময়: এই রণজিৎ কোথায় এখন ?মৃদুল: যেদিন এর কেস কোর্টে ওঠে সেদিন কোর্টে যাওয়ার রাস্তায় রণজিৎ সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে আর পুলিশ এনকাউন্টার করে দেয়।তন্ময়: আচ্ছা রঞ্জিতের ডেড বডির কি হয়েছিল?মৃদুল: রঞ্জিতের কোনো ফ্যামিলি ছিলনা তাই পুলিশ ওর সৎকার করেছিল।তন্ময়: কুকুর গুলোর কি হয়েছিল?মৃদুল: পুলিশ, কুকুর গুলোকে বন বিভাগের কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছিল।তন্ময়: সব কিছুই যে শেষ হয়ে বসে। ক্রিমিনাল বেচেঁ নাই। মরণাস্ত্র মানে কুকুর গুলোর পক্ষে সম্ভব নয় তাহলে এই নতুন কিলার আমদানি হলো কিভাবে ?মৃদুল: আপাতত এইটুকুই খবর পেয়েছি স্যার।তন্ময়: আচ্ছা একটা কাজ করো, আপাতত একজনের উপর নজর রাখতে হবে। ১-২ দিনেই কাজ হয়ে যাবে মনে হয়।মৃদুল: কে স্যার?তন্ময়: গার্গী চৌধুরীক্রমশ...... (পরের পর্বে)লেখকঃ সায়ন্তন গোস্বামী। (Sayantan Goswami)

এপ্রিল ২০, ২০২৫
নিবন্ধ

গল্প হলেও সত্যি কি? (প্রথম পর্ব )

নিউজ রিপোর্টার সৈকত কে কর্ম সূত্রে বহু জায়গায় ছুটে বেড়াতে হয় সারা বছর, অবশ্য তার ঘুরতেও বেশ ভালই লাগে। আর লাগবে না কেনো, যখন ঘোরার টাকা সংস্থা থেকে দেওয়া হয়। ছোটো থেকেই তার লেখালেখি আর নতুন জায়গায় ভ্রমণ এই দুই ছিল সবচেয়ে বেশি পছন্দ, তাই আজ থেকে ৪ বছর আগে যখন একটা ছোটো নিউজ চ্যানেল তাকে রিপোর্টার হিসাবে সিলেক্ট করে তখন সে মাইনের কথা না ভেবেই সেখানে কাজে ঢুকে পড়ে। আজ ৪ বছর পর ভারতের অন্যতম বৃহৎ নিউজ নেটওয়ার্ক এবিপি তে সে কর্মরত।ব্যাঙ্গালোরগামী দুরন্ত এক্সপ্রেসে সে এখন একজন যাত্রী। ব্যাঙ্গালোরে প্রধান মন্ত্রীর এক বিরাট জনসভা কভার করতে তাকে পাঠানো হচ্ছে । এসি কামড়ার সাইড আপার বার্থে সিট পেয়েছে সৈকত। আর নিচে আর একজনের আসার কথা। ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে দিয়েছে, এবার সে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। এমন সময় প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে এক বছর ২৫-২৬ এর মহিলা ট্রেনে উঠলেন। মহিলাটি দুদিকে তাকাতে তাকাতে অবশেষে সৈকতের বার্থের সামনে এসে দাড়ালেন আর হাঁপ ছেড়ে লাগেজ গুলো বার্থের নিচে ঢুকিয়ে দিয়ে সৈকতের সামনের সিটে বসে পড়লেন।সৈকত বললো: আপনি যদি ক্লান্ত থাকেন তো আমি উপরে চলে যাচ্ছি, আপনি রেস্ট নিতে পারেন আপনার সিটে।মহিলাটি এবার সৈকতের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললো, আরে না না ! তার কোনো দরকার নেই। আর এখনো প্রায় ২৯ ঘণ্টার জার্নি, এইতো সবে শুরু এখনই হাঁপিয়ে গেলে হয় নাকি !সৈকত: হ্যাঁ এটা অবশ্য ঠিক। বাই দা ওয়ে আমি সৈকত সেন, এবিপি নিউজ রিপোর্টার।মহিলা: Wow, thats great. Nice to meet you. আমি ঐশী সাহা, সাইকোলজিস্ট।সৈকত: মানে আপনার কাজ মানুষের মন পড়া তাইতো?ঐশী: একদমই, মানুষের মন এই পৃথিবীতে সবচেয়ে জটিল এক জিনিস, সেটা বুঝতে আলাদা পড়াশোনাই করতে হয় । অবশ্য আমি গল্পও লিখি একটু একটু।সৈকত: বেশ ভালই তো হলো তাহলে, আপনার গল্প শুনতে শুনতে রাস্তাটা পার করেই ফেলবো নাহয়।ঐশী: ভালো বললেন তো আপনি, আমিও একটা গল্প এই আজকেই লেখা শেষ করলাম, লিখতে লিখতে এতটাই বেহুস ছিলাম শেষ ৩-৪ দিন যে খেয়ালই ছিলনা আজকে ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার টিকিট কেটে রেখেছি।সৈকত: কোনো সেমিনার আছে নাকি ব্যাঙ্গালোরে ??ঐশী: না মশাই। সম্পূর্ন নিজেস্ব কারণে যাচ্ছি!সৈকত: ও বুঝলাম।ঐশী: তো কি বুঝলেন আপনি ?সৈকত: বুঝলাম আপনার পার্সোনাল কোনো কারণ আছে, যেটা হয়তো আপনি বলতে ইচ্ছুক নন।ঐশী: ওইরকম কোনো ব্যাপারই না। আসলে আমার বোন ২ বছর চিকিৎসাধীন ছিলো। ওর মানসিক কিছু সমস্যা ছিল যেগুলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে লেগেছিল, শেষ পর্যন্ত আমার কাকা ব্যাঙ্গালোরের ডক্টর, ওনার চেনা একজন বন্ধুর কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। এখন সুস্থ হয়ে গেলেও আর এখানে ফিরে আসেনি, ওখানেই থেকে গেছে। ওর সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি।সৈকত: বাহ, ভালো অনেকদিন পর বোনের সাথে দেখা করবেন।ঐশী: হ্যাঁ খুব খুশি আমি। জানেন আমার বোন তিথি এমনিতে খুব ভালোই মেয়ে ছিল, কিন্তু ওর বয়স যখন ৯-১০ তখন একদিনের ঘটনা, আমরা সবাই আমার মামাবাড়ী যাচ্ছিলাম, রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল কিন্তু হটাৎ আমরা খেয়াল করলাম তিথি আমাদের সাথে নেই। হন্যে হয়ে ওকে খুঁজলাম আমরা কিন্তু পেলাম না। প্রায় ৬ বছর পর ওকে খুঁজে পাওয়া গেলো কলকাতার একটা বস্তিতে। ওকে কিডন্যাপ করে ভিক্ষার কাজে লাগানো হয়েছিল, ওকে খেতে পর্যন্ত দিতনা ওরা। ওকে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু তারপর থেকেই যেনো ওর মধ্যে একটা মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে আজকে ও নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে, আর আমরাও ওর জন্য খুশি। সৈকত: সত্যি, আপনারা খুব লাকি বলতে হয়। নাহলে এইভাবে কত বাচ্চা হারিয়ে যায় কোনোদিন ফিরেও আসেনা। আপনার বোন আবার নতুন ভাবে জীবন ফিরে পেয়েছে শুনে খুব ভালো লাগলো। আচ্ছা একটা গল্প শোনা গেলে ব্যাপারটা মন্দ হতোনা, এমনিতেও সন্ধ্যে প্রায় হয়ে এসেছে।ঐশী: হ্যাঁ , তাহলে আজকেই শেষ করা ক্রাইম থ্রিলারটা শোনাই ?সৈকত: হ্যাঁ, বেস্ট হবে ।ঐশী: আপনি কিন্তু গল্প প্রকাশ হওয়ার আগেই শুনে নিচ্ছেন মশাই। সৈকত: আপনার গল্পের নিখুঁত রিভিউ দেবো ম্যাডাম, চিন্তা করবেন না, গল্প বেস্ট সেলার হবে।ঐশী: ধন্যবাদ, তাহলে শুনুনঐশী শুরু করলো তার লেখা গল্প আতঙ্ক।শীতের সন্ধ্যে ঝুপ করে নেমে পড়ে, ট্রেনে যাত্রাপথে প্রাকিতিক সৌন্দর্য যেনো আরো বেড়ে উঠেছে , এর মধ্যে ঐশীর ক্রাইম থ্রিলার যেনো একটা আলাদাই পরিবেশ গড়ে তুলতে শুরু করেছে।আতঙ্ক চারিদিকে অন্ধকার, গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, দূরে কিছুজনের আর্তনাদ। তন্ময় দেখতে পাচ্ছে পৃথ্বী তার পাশেই রয়েছে আর কিছুটা দূরে ওই চারচাকা গাড়িটা দাঁড়িয়ে। এতক্ষনে আফজাল খানের সব লোকেরা প্রায় নিহত আর আফজাল খানের গাড়িটাও গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত। তন্ময় আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে পৃথ্বীকে নির্দেশ দিলো গাড়ির দরজা খুলে আহত আফজাল খানকে বের করে আনার। পৃথ্বী সেটাই করতে গেলো কিন্তু হিতে বিপরীত হলো, দরজা খোলার সাথে সাথেই পিস্তল হাতে আফজাল খান পরপর তিনটে গুলিতে পৃথ্বীকে রক্তাক্ত করে দিলো, পৃথ্বী মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, তন্ময় ঘটনার তীব্রতায় চমকে প্রায় চিৎকার করে উঠলো আর একটা গুলি তার কাঁধে লেগে বেরিয়ে গেলো, ততক্ষনে আরো দুটো গুলি তন্ময়ের পাশ থেকে অজিত আফজাল খানকে লক্ষ্য করে মেরেছে আর তাতেই শান্ত হয়েছে আফজাল খান। অন্ধকার, গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, দূরে কিছুজনের আর্তনাদ। তন্ময় দেখতে পাচ্ছে পৃথ্বী তার পাশেই রয়েছে আর কিছুটা দূরে ওই চারচাকা গাড়িটা দাঁড়িয়ে। এতক্ষনে আফজাল খানের সব লোকেরা প্রায় নিহত আর আফজাল খানের গাড়িটাও গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত। তন্ময় আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে পৃথ্বীকে নির্দেশ দিলো গাড়ির দরজা খুলে আহত আফজাল খানকে বের করে আনার। পৃথ্বী সেটাই করতে গেলো কিন্তু হিতে বিপরীত হলো, দরজা খোলার সাথে সাথেই পিস্তল হাতে আফজাল খান পরপর তিনটে গুলিতে পৃথ্বীকে রক্তাক্ত করে দিলো, পৃথ্বী মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, তন্ময় ঘটনার তীব্রতায় চমকে প্রায় চিৎকার করে উঠলো আর একটা গুলি তার কাঁধে লেগে বেরিয়ে গেলো, ততক্ষনে আরো দুটো গুলি তন্ময়ের পাশ থেকে অজিত আফজাল খানকে লক্ষ্য করে মেরেছে আর তাতেই শান্ত হয়েছে আফজাল খান।তন্ময় আর ভাবতে পারছেনা ওর জ্ঞান লোপ পাচ্ছে।কয়েকমাস পর:গার্গী: দেখো তন্ময়, আজ তুমি শ্রেয়ার অধীনে কাজ করছো কিন্তু কাল শ্রেয়া তোমার অধীনে কাজ করবে হয়তো। এটা নিয়ে এত আপসেট হয়ো না। তুমি ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র অফিসার, তোমার অভিজ্ঞতা ওই মেয়েটার কাজেও লাগতে পারে, আর কেস সলভ হতে পারে, তোমার কর্তব্য এই কেস সলভ করা, তাই নয় কি?তন্ময়: আমি আপসেট নই, হ্যাঁ তিন চার মাস আগে হলে হয়তো ভীষণ আপসেট হতাম কিন্তু আজ নই।গার্গী: thats great. আমি এইরকম ভাবেই তোমাকে দেখতে চাই।তন্ময়: জিজ্ঞেসা করলেনা তো যে কেনো আপসেট নই।গার্গী: আচ্ছা বলো কেনো আপসেট নও তুমি ?তন্ময়: শুধু তোমার জন্য।ভাগ্যিস আমার ডিপ্রেসন দেখা দিয়েছিল নাহলে তো এইরকম ডাক্তারের এর সাথে দেখাই হতনা।কালিম্পঙ শহরে বেশ কয়েক মাস ধরে মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, অনেক খোঁজাখুঁজির পর সেই মানুষের হাড় , রক্ত হয়তো পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু মানুষটি গায়েব, যেনো কোনো পশু খেয়ে সাফ করে ফেলেছে। লোকাল পুলিশ যথেষ্ট স্ট্রাগল করছে এই কেস গুলো সামলাতে। অবশেষে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশের একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টীম পাঠানো হলো জলপাইগড়িতে, যে দলের নেতৃত্বে তন্ময় সেন। তন্ময় সেন নিজের ১০ বছরের চাকরি জীবনে বহু অসম্ভব কেস সলভ করেছে। এখানে এসে সে পুরোদমে কাজ শুরু করে দল নিয়ে কিন্তু বাধ সাধল তার মানসিক অবস্থা। সদ্য একটি শুট আউটে তার চোখের সামনে মারা যায় তার পরম প্রিয় বন্ধু পৃথ্বী সিংহ। পৃথ্বীর মৃত্যু তাকে এতটাই নাজেহাল করে তোলে যে তার কাজে আর মন বসেনা, সবসময় তার এটাই মনে যে সেই দায়ী, সে চাইলেই হয়তো সেদিন নিজে যেতে পারতো ওই গাড়ির দরজা খুলতে কিন্তু......ফলাফল কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে সেখানেই এক psychiatrist এর সাথে যোগাযোগ করতে হয় এবং সেখানেই শুরু হয় তার ট্রিটমেন্ট। এদিকে ১ মাসেও কেস progress সেভাবে না হওয়াতে নেতৃত্ব থেকে তন্ময়কে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং নতুন দায়িত্ব এসে পরে শ্রেয়ার কাধে। শ্রেয়া চৌধুরী এই কালিম্পঙ জায়গারই মেয়ে, অত্যন্ত সাহসী এবং ডিপার্টমেন্ট এর ভরসা তন্ময়ের পরিবর্ত হিসাবে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য এই শ্রেয়া। ক্রমশ...... (পরের পর্বে)লেখকঃ সায়ন্তন গোস্বামী। (Sayantan Goswami)

এপ্রিল ১৫, ২০২৫
নিবন্ধ

মহাষষ্ঠীর ভোর। এবার মাতৃপূজার নির্ঘণ্ট প্রতিদিনই ঊষালগ্ন ছোঁয়া

ঝিরঝিরে হাওয়া বইছে বিশাল অশ্বত্থগাছের পাতায় পাতায় শিরশিরানি জাগিয়ে। শতাব্দী প্রাচীন গাছটার আনাচকানাচ থেকে উপচে পড়ছে কত না পাখির কলকাকলি পায়রাদের বকবকম.. ঘুঘুদের কুড়কুড়.. টিয়ার ঝাঁকের তীক্ষ্ণস্বন.. কাক-এর কর্কশ আওয়াজ .. চড়ুই-শালিকদের সমবেত কিচিরমিচির .. টুনটুনি-বুলবুলিদের সুরেলা শিস .. .. নারায়ণপুরের আকাশে ভোর জাগছে মৃদু মোলায়েম আমেজ নিয়ে।মহাষষ্ঠীর ভোর। এবার মাতৃপূজার নির্ঘণ্ট প্রতিদিনই ঊষালগ্ন ছোঁয়া। আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় দেবীআরাধনার সূত্রপাত। পূজামণ্ডপ ধুয়ে, বেদীতে আল্পনা দিয়ে, ফুল-বেলপাতা গুছিয়ে, প্রসাদের থালা সাজিয়ে, আয়োজন চলছে তারই। আশ্বিনের এই শারদপ্রভাতে পুজোআর্চা সেরে, সন্ধ্যায় দেবীর বোধন দিয়ে শুরু হয়ে যাবে জগজ্জননীর আরাধনা।কাল সন্ধ্যায় এসেছি গ্রামের বাড়িতে। যাবতীয় পেশাগত দায়দায়িত্ব সেরে, বাড়িঘরের দেখাশোনার ভার উপযুক্ত হাতে ন্যস্ত করে, শেষ মুহূর্তের হাজারো ব্যস্ততা সরিয়ে, পিতৃপুরুষের ভিটেয় এসে পৌঁছতে সন্ধ্যা গড়িয়েছে। বর্ধমান থেকে পঁচিশ কি.মি. উজিয়ে এসে, বাসরাস্তা ছেড়ে বটগাছের ঝুরি-দোলানো গ্রামের পথে গাড়ি ঢুকে পড়েছে হেলেদুলে। ভরাশরতের টইটম্বুর পুকুরের পাশ কাটিয়ে, জোনাক-জ্বলা বাঁশঝাড়ের অন্ধকার আর্চ ফুঁড়ে, এঁকেবেঁকে আধ কি.মি. পেরিয়ে, এসে গেছি নারায়ণপুর এই সাতান্ন বছরের জীবনে পুজোর কদিন যা আমার একমাত্র ঠিকানা।এই পুজোবাড়ি, লোকমুখে যার চলতি নাম চাতোর (চত্বর-এর অপভ্রংশ ), আমাদের ছোটবেলায় ছিল এক লম্বা মাটির চারচালা। সামনে ত্রিপল-এ ছাওয়া লম্বা বাঁশের কাঠামো পুজোর কদিন ধারণ করতো উৎসাহী মানুষজনকে টলমলে কুচোকাঁচা থেকে শুরু করে ন্যুব্জ বৃদ্ধবৃদ্ধারা সকালসন্ধ্যা ঢাকঢোলকাঁসরঘণ্টার ঐকতান .. ধূপধুনোগুগগুল-এর ধূম্রজাল .. মন্ত্রমুখর পূজার্চনার শরিক হতেন এখানেই সমবেত হয়ে। সেই মাটির গাঁথনির জায়গা নিয়েছে শানবাঁধানো পাকা মণ্ডপ, শক্তপোক্ত টিনের ছাউনি, আর মর্মরমণ্ডিত পুজাবেদী সেও হয়ে গেল বেশ কয়েক দশক।ছোটোবেলায় পঞ্চমী-ষষ্ঠীর দিন যখন এসে পড়তাম, বাড়ির কর্মসহায়করা ব্যস্ত থাকতো খড় পেঁচিয়ে দীর্ঘ রজ্জু-রচনায়, যার ফাঁকে ফাঁকে গুঁজে দেওয়া হতো ছোটো ছোটো আমশাখা, প্রতিটি শাখায় চারপাঁচটি করে পাতা সেই মালায় সেজে উঠতো মন্ডপের চারপাশ আর প্রতিটি বাড়ির প্রবেশদ্বার। আজ সেই মঙ্গলমালিকারও রূপবদল হয়েছে ছোটো ছোটো আমশাখার জায়গা নিয়েছে একটি একটি করে আমের পাতা। তাতে আর কিছু না হোক, অপচয় কমেছে সবুজপত্রের।আমাদের শৈশবে এই মণ্ডপে ঠাকুর গড়তে আসতেন বটুদা। পরে তাঁর স্থান নেন জয়দেবদা। ওঁর সৃষ্টিতে মায়ের মুখ হতো অপেক্ষাকৃত কোমল, কিছুটা প্রাচীনপন্থী। সেই মুখশ্রীই রয়ে গেছে আজও, এই থীমময় পৃথিবীতে দুর্গাপ্রতিমার ছিরিছাঁদ আর মূর্তিশৈলী নিয়ে যতই পরীক্ষানিরীক্ষা-পরিবর্তনের ঢেউ উঠুক না কেন !জয়দেবদা আজ বৃদ্ধ, চোখে কম দেখেন ; চলনবলনে গ্রাস করেছে স্থবিরত্ব। তবু আজও রথযাত্রা থেকে শুরু করে তিনদফায় এসে, কদিন থেকে, তিনি গড়ে দিয়ে যান আমাদের মা হরগৌরীর মৃৎপ্রতিমা থেমে থেমে .. ঘোলাটে চোখে .. কতক আন্দাজে .. কতক কম্পিত আঙুলের অভ্যস্ততায় ড. সুজন সরকার : বর্ধমান।

অক্টোবর ০৯, ২০২৪
বিনোদুনিয়া

ইংরাজি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির পরিচালনায় পায়েল

পায়েল চৌধুরী চিত্রনাট্য ও পরিচালনা, জয়দীপ চক্রবর্তী ও সাবিত্রী প্রোডাকশন প্রযোজিত ইংরাজি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি দ্য ফোনেক্স। জয়দীপ চক্রবর্তীর লেখা এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়দীপ চক্রবর্তী, বোধিসত্ত্ব মজুমদার ও ত্রিপর্ণা বর্ধন। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন রোশনি, পায়েল, ইন্দ্রজিৎ, সরোজ, সৌমিত ও সুকন্যা।এই ছবি প্রসঙ্গে পায়েল জানিয়েছেন, আমি এর আগে ৯৫টির বেশি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি পরিচালনা করেছি। এই ছবিটি কলকাতা, তার পাশ্ববর্তী এলাকা ও মান্দারমনিতে শুটিং হয়েছে। ডিমেনশিয়া ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে কি হয় সেটা এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে যাতে সাধারণ মানুষের মতো দেখা হয় সেই বিষয়টা দেখানো হয়েছে। এছাড়া গল্পে আরো অনেক তম রয়েছে সেটা ছবি মুক্তি পেলেই দর্শকরা বুঝতে পারবেন।এই ছবির প্রয়োজন অভিনেতা জয়দীপ চক্রবর্তী বর্তমানে আবুধাবির বাসিন্দা। তাই দুবাইতেও এই ছবি মুক্তির পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। ছবিটি দর্শকদের ভালো লাগবে আশাবাদী জয়দীপ।

অক্টোবর ০২, ২০২৪
নিবন্ধ

এ’ কোন সকাল - রাতের চেয়েও অন্ধকার!

সেই এলোমেলো দিকহারানো সন্ধ্যা-বায়ের লুটোপুটি খাওয়া ঘর-বার-উঠোন-বাজারে, কাজলকালো রাত পেরিয়ে, আধফোটা কুসুমের মতো ফুটে ওঠা আগমনী আলো আজ আবার ছড়িয়ে দিল মাতৃপূজার সুসমাচার। বেজে উঠলো আলোর বেণু; আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিলাম হৃদয়ের রুদ্ধ দুয়ার। কিন্তু সবার অন্তরের পুঞ্জীভূত আঁধার কাটলো কি? মাতলো কি ভুবন? যে নিবিড় বেদনা আচ্ছন্ন করে রেখেছে বুকের মাটি, মনের আকাশ কালো করে জমে থাকা সেই মেঘ যেন রাতের চেয়েও অন্ধকার করে রেখেছে শরতের আকাশবীণায় গানের মালা বিলানো আজকের এই মহালয়ার সকালকে।অথচ, বর্ষণক্ষান্ত আশ্বিনের নীল আকাশে সাদা মেঘের বহরে অমলধবলপালে আজ লেগেছে মন্দমধুর হাওয়া; দুধসাদা কাশের গুচ্ছ বেঁধে, ঝরা শেফালীর মালা গেঁথে, নবীন ধানের অঞ্জলি দিয়ে ডালা সাজিয়ে শারদলক্ষ্মী এসে গেছেন শুভ্র মেঘের রথে সমাসীন হয়ে। ধৌতশ্যামল আলোঝলমল বনগিরিপর্বতে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর শ্বেতশতদলশোভিত করুণানয়নের আশীর্বাণী। শিউলীতলার পাশে পাশে.. ঝরা ফুলের রাশে রাশে.. শিশিরভেজা ঘাসে ঘাসে অরুণরাঙা চরণ ফেলে.. জলতরঙ্গে ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে ছড়িয়ে পড়ছেন তিনি। আলোছায়ার আঁচলখানি লুটিয়ে পড়ছে বনে বনে; ফুলগুলি ঐ মুখে চেয়ে কী কথা গুনগুনোচ্ছে মনে মনে, কে খবর রাখে তার! তবু ঐটুকু ঐ মেঘাবরণ দু হাত দিয়ে সরিয়ে, মুখের ঢাকা হরণ করে, শারদলক্ষ্মীকে বরণ করে নিতে যেন কারো মন নেই আজ। এমন নিরানন্দ দেবীপক্ষের সূচনা খুব বেশী দেখা গেছে কি?একদিকে বানভাসি নদী-মাঠ-ঘর-গেরস্থালির অপার দুর্ভোগ, অন্যদিকে অগ্নিমূল্য হাটবাজার; আর সব ছাপিয়ে এক নির্যাতিতা প্রতিবাদিনীর সর্বপরিব্যপ্ত বেদনার্ত ছায়া এবারের মাতৃপক্ষকে যেন ঢেকে রেখেছে এক তিমিরঅবগুণ্ঠনে। উৎসবে মেতে ওঠার মেজাজটাই পাড়ি দিয়েছে দিকশূণ্যপুরের দিশায়।তবু এরই মধ্যে পথে-পার্কে-পল্লীপ্রান্তে শালবল্লা-বাঁশ-ত্রিপল-প্লাইউডের কাঠামো-রা সেজে উঠছে দ্রুত। দোকান-পসার-মল-মার্কেটে ভীড়ও খানিক খানিক জমে উঠছে। মহালয়ার রাতভোর অসংস্কৃত বাজী-র উদযাপন এবার কিছু কম (আজকাল পাড়ার যে যে বাড়িতে বয়স্ক বা অসুস্থ মানুষ আছেন বলে খবর, তাঁদের জানালার কাছাকাছিই সাধারণতঃ বাজী ফাটানো হয় বেশী)। ইতস্ততঃ কিছু ক্লাবের মাইকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র-ও সাড়া দিলেন বহু যুগের ওপার থেকে আজ ভোরবেলায়, যদিও কিছু স্তিমিতস্বনে। তবে পিতৃতর্পণাভিলাষীরা ছাড়া নদীর তীরে কাশের বনে মানুষের ঢল নামলো কই!মন ভালো নেই; আমাদের অনেকেরই মন ভালো নেই। আজ অখিলবিমানে দিকে দিকে সর্বস্যার্তিহরা দেবীমায়ের জয়গান। সিংহস্থা শশীশেখরা মরকতপ্রেক্ষা জগজ্জননী দূর করুন এই দুঃসহ আঁধার। ভয়ের আবহ শেষ হোক সবার ঘরের প্রতিটি দুর্গা হেসে উঠুক সুখে-সাহসে-সাফল্যে প্রতিটি অভয়া বিচার পাক!ওগো আমার আগমনী আলো, জ্বালো প্রদীপ জ্বালো, জ্বালো গো- ড. সুজন সরকার, বর্ধমান। ।

অক্টোবর ০২, ২০২৪
নিবন্ধ

মাতৃবিয়োগ উড়ান সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিক বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের, এক মহিয়সী নারীর কাহিনী

এআই এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের উচ্চপদস্থ আধিকারিক বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের মা গীতা চট্টোপাধ্যায়ের জীবনাবসান হয় গত ৩১ অগাস্ট। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। গীতাদেবী ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে তিনি শিক্ষিকতা করেছেন। গীতা চট্টোপাধ্যায়ের আরেক পুত্র বিভাস চট্টোপাধ্যায় বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদে আসীন। গীতাদেবী শিক্ষকতা করতেন বাগবাজারের আদর্শ মহিলা বিদ্যালয়ে। মৃত্যুর সময় সংসারে রেখে গিয়েছেন পুত্রদ্বয় বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় ও বিভাস চট্টোপাধ্যায়, পুত্রবধূদ্বয় গার্গী লাহিড়ী চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়। নাতি, নাতনি মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়, বিহান চট্টোপাধ্যায় ও রিয়ান চট্টোপাধ্যায়।১৯৪২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এক সম্ভ্রান্ত বনেদি পরিবারে জন্ম হয় গীতা চট্টোপাধ্যায়ের। তখন তাঁরা থাকতেন তৎকালীন মধ্যপ্রদেশের(এখন ছত্তিসগড়) অম্বিকাপুরে। এক মাসের মধ্যেই মাতৃহারা হন ছোট্ট গীতা। জন্মদাত্রী মায়ের অনুভতির স্বাদ পাননি। সাত ভাইবোনের মধ্যে সব থেকে ছোট ছিলেন তিনি। বাবা ছিলেন প্রথিতযশা চিকিৎসক অনাথ বন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পড়াশুনা করেছেন। ট্রান্সফারেবল জব ছিল অনাথবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মধ্যপ্রদেশের অম্বিকাপুরে পরিবার নিয়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন তিনি। সেই সময় নারী শিক্ষার খুব বেশি প্রচলন ছিল না। তবে চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একনিষ্ঠ অধ্যাবসায় থাকায় তাঁকে কখনও থামতে হয়নি। পড়াশুনা করেছেন অম্বিকাপুরে এডওয়ার্ড সেকেন্ডারি স্কুল, তারপর গভঃ ডিগ্রি কলেজ অম্বিকাপুর। এমএ, বিএড-ও করেছেন তিনি। অনাথ বন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি ছিল বর্ধমান জেলার নাড়ুগ্রামে।গীতাদেবী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২জুন, সাল ১৯৬৬। তাঁর বিয়ে হয়েছিল মুর্শিদাবাদের গোপালপুর গ্রামে। স্বামী বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় চাকরিসূত্রে দমদমে আসেন। তিনি ছিলেন শিক্ষক। দমদমেই স্থায়ী বসবাস শুরু করেন তাঁরা। বিয়ের পর প্রথম পর্যায়ে ছেলেদের পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন গীতাদেবী। ছেলেরা একটু বড় হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে বাগবাজারের আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে চাকরি সামলেছেন, আরেক দিকে সাংসারিক লড়াই করে গিয়েছেন গীতাদেবী। ছেলেদের সুশিক্ষায় বড় করে তুলেছেন।নারী শিক্ষা প্রসারে অত্যন্ত অগ্রগন্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। বিশেষত নারী শিক্ষার প্রসার না ঘটলে কোনও জাতির উন্নতি হতে পারে না। ছাত্রীদের মনের মনিকোঠায় থাকতেন তাঁদের পছন্দের শিক্ষিকা। সহকারি শিক্ষিকাদের সঙ্গেও খুবই সদ্ভাব ছিল তাঁর। শিক্ষা অন্ত প্রাণ ছিলেন গীতাদেবী।এদিকে স্বামীর অকাল মৃত্যুতে ভেঙে না পড়ে ছেলেদের পড়াশুনা থেকে খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছদ সবেতেই নজর ছিল তাঁর। সকালে স্কুল করে এসেই সাংসারিক যুদ্ধে নেমে পড়তেন। কখনও ছেলেদের বুঝতে দেননি তাঁদের বাবার অভাব। একাধারে মা ও বাবা দুই ভূমিকাই সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছেন গীতা দেবী। তিন ছেলের মধ্যে মেজ ছেলের কঠিন অসুখে ১৯৮১ সালে অকাল প্রয়াণ ঘটে। জীবনে দুটি বড় ধাক্কা সামলে নিয়ে বজ্রহাতে সংসার ধরে রেখেছেন। আশির কোঠাতেও সবসময় খবর নিতেন ছেলেরা কী করছে? কেমন আছে? তাঁরা কি খেয়েছে? অফিস গিয়েছে কিনা? নাতি-নাতনিদের শুদ্ধ বাতাস ছিলেন তিনি। দীর্ঘ দিন শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন গীতা চট্টোপাধ্যায়।গীতা চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শুধু পারিবারিক ক্ষেত্র নয়, তাঁর অগুনতি ছাত্রী ও সহকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টায় গীতা চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে বাগবাজার গঙ্গাতীরে ভাগবত সভা অনুষ্ঠিত হবে। পরের দিন ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৫ টায় দমদম রোড, হনুমান মন্দিরের কাছে পুরাঙ্গনে স্মরণসভা হবে অবসর প্রাপ্ত এই মহিয়সী শিক্ষিকার।

সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪
রাজ্য

কয়লাঘাটের ভুলে যাওয়া ইতিহাস: নাম জড়িয়ে সিরাজউদ্দৌলার, পূর্ব রেলের উত্তরাধিকার

হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত কয়লাঘাট ভবনটি একটি ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক যা পূর্ব রেলওয়ের বিবর্তনের নীরব সাক্ষী। কিন্তু খুব কম লোকই জানেন যে কয়লাঘাট নামটি আসলে কিলাঘাট অর্থাৎ কেল্লার ঘাট নামটির একটি বিবর্তন, যার নিজস্ব একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে।কিলাঘাট স্ট্রিট বলতে ঘাট থেকে কিলা (কেল্লা) বা পুরাতন ফোর্ট যাওয়ার রাস্তাটিকে বোঝায়, যার মধ্যে বর্তমানে জেনারেল পোস্ট অফিস, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, ফেয়ারলি প্লেস, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট, শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া এবং কাস্টমস হাউস অবস্থিত।কিলা ঘাট স্ট্রিট শহর এবং ভারতের ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তনের সাক্ষী। যখন পুরোনো কেল্লার অস্তিত্ব ছিল, তখন স্ট্র্যান্ড রোডের অস্তিত্ব ছিল না। কিলা ঘাট বা তীরগুলি শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া অফিস এবং আজকের কাস্টমস হাউসের মাঝামাঝি কোথাও অবস্থিত। ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা আক্রমণ করলে এই ঘাটটি দুর্গ খালি করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৭৫৬ সালের পরে, ব্রিটিশরা অনুভব করেছিল যে জায়গাটি আক্রমণের বিরুদ্ধে তেমন নিরাপদ নয় এবং তাই দুর্গটি বর্তমান ময়দানে (তৎকালীন গোবিন্দপুর) স্থানান্তরিত করে।কয়লাঘাট ভবনটি ১৯ শতকের শেষের দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের কয়লা ডিপো হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণের সাথে সাথে কয়লাঘাট ভবনটি বেশ কয়েকটি সংস্কার ও সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে যায়।১৯৫২ সালে, ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে জাতীয়করণ করা হয় এবং কয়লাঘাট ভবনটি নবগঠিত পূর্ব রেল অঞ্চলের একটি অংশে পরিণত হয়।কয়লাঘাট ভবনটি পূর্ব রেলের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। কয়লা ডিপো হিসাবে এর সূচনা থেকে ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক হিসাবে বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত, বিল্ডিংটি এই অঞ্চলের পরিবহণ নেটওয়ার্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

জুলাই ১৩, ২০২৪
নিবন্ধ

২৪ বনাম ৪৮, এও আরেক অফিস প্রেম (ছোট গল্প)

(বাস্তব কাহিনি অবলম্বনে গল্পকাহিনী, তবে কেউ নিজের গায়ে মেখে দায় চাপাবেন না)প্রথম যখন অফিসে আসতো তখন আলুথালু ভাবে থাকতো। তাঁর প্রতি আকর্ষণ হওয়ার কোনও কারণ কারও থাকতে পারে না। সমাজের পুরো বিবর্ণতাই যেন তাঁকে গ্রাস করেছে। দেখলেই মনে হবে জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে এই বয়সেই যেন পেরে উঠছে না। বিদ্ধস্তও চেহারা। কপালে হাত দিয়ে টেবিলে মাথায় রেখে কি ভারি ভারি বিষয় ভাবছে কে জানে। তবে নাতাশার পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল ঠিক মাস দুয়েক বাদেই। বস জিজ্ঞেস করছে এসাইনমেন্ট কেমন হচ্ছে? জবাব দিতেও যেন অনীহা। জোর করে যেন জবাব চাইতে হচ্ছে। এভাবেই চলছে মেরেকেটে আরও দিন পনেরো। এবার বদলাতে শুরু করল নাতাশা রায়। আসলে বদল কিছু নয়, আগেরটা ছিল ভেক। এবার ভোল বদল। তাঁকে যে পার্মামেন্ট একটা পোস্ট পেতেই হবে।জিনসের কাটা-ছেঁড়া প্যান্ট, ব্লু টি শার্ট। দুটোই ব্রান্ডেড। মুখে পালিস, ঠোঁট লালে লাল। চোখমুখের চাহনিতে জানান দিচ্ছে নতুন কিছু ঘটছে। অফিসের লোকজনও ভাবছে কাকে দেখছে তাঁরা। কি এমন হল সাজগোজের হঠাৎ এত বড় পরিবর্তন। শুধু তাই না হাঁটাচলাতেও যেন নয়া ছন্দ। অফিসের পুরনো লোকেরাও ভেবে পাচ্ছে না ব্যাপারটা। তাহলে নাতাশা কি......। হতে পারে নতুন কিছু ঘটছে।অফিসগুলোতে তন্বী কেউ এলে আলোচনার শেষ থাকে না। এমন পরিস্থিতি এখন কর্পোরেট যে কোনও অফিসের ক্ষেত্রেই বড় কিছু নয়। তবু লোকেদের মধ্যে একটা বাড়তি আগ্রহ, উৎসাহ থাকেই। কি হচ্ছে, কি হতে যাচ্ছে এই গুঞ্জন চলতেই থাকে। এক্ষেত্রেও তাঁর অন্যাথা হওয়ার কথা নয়। নাতাশার দিকে সবারই নজর। কখন অফিসে আসছে, কোন ধরনের পোষাক পরে আসছে, কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেশি। কাজ কম, এমন পিএনপিসি করেই যেন সময় কাটছে অফিসে।সিঁড়ির পাশ দিয়ে উঠতে গিয়েই অফিস বয় রাজু ভিরমি খেয়ে পড়ছিল আর কি। এ কি দেখছে অফিসের বস রাহুল আর নাতাশা চোখে চোখ রেখে গল্পে মশগুল। রাহুল মুখোপাধ্যায় এই অফিসের সকলের বস। রাজু পাশ দিয়ে চলে গেলেও ওরা খেয়াল করেনি। দুজনে তখন আর পৃথিবীর বাকি কিছু দেখতে পাচ্ছে না, এমনই হাল। নিমিষের মধ্যেই রাজু দেখে নিয়েছে দুজনেই মুচকি হেসে কথা বলছে, চার চোখের ভাষাতেই যেন অন্য কথা। এবার রাজুর মনে হল তাহলে অফিসে কিছু একটা ঘটছে। অফিসের লনে কথা বলছিল। প্রায় ঘন্টাখানেক অন্তরের গল্প চলল দুজনের। এরইমধ্যে অফিসের আরেক কর্মী বিকাশ বাইরে বের হয়েই বেশ অবাক হল। এ কি দেখছে। মোবাইল ফোনের কোনও ছবি দেখিয়ে নাতাশা কিছু বোঝাতে চাইছে রাহুলকে। কি দেখাচ্ছে সেটা বুঝতে পারেনি বিকাশ। কিন্তু দুজনের ঘনিষ্ঠতা নজর এড়ায়নি। বরং রাহুলকে এভাবে নাতাশার দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখে বিকাশ নিজেই লজ্জা পেয়ে আর সেখানে দাঁড়ানোর কথা ভাবেনি। তড়তড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গিয়েছে।আজ, বিকাশের বড় একটা এসাইনমেন্ট আছে। রাস্তায় যেতে যেতে নাতাশা ও রাহুলের দুজনের কাছাকাছি হওয়ার দৃশ্য যেন তাঁর চোখে রয়েই গিয়েছে। বিকাশ মনে মনে ভাবছে, নাতাশার সঙ্গে ঝাড়ি মেরে কোনও লাভ হল না। তার মানে রাহুলের সঙ্গে নাতাশা কি সম্পর্কে জড়াচ্ছে? কিন্তু রাহুল তো এমন ছিল না। এমন করবেই বা কেন? ওর সংসার আছে এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে ক্লাস ফোর-এ পড়ে। এতো সিরিয়াস ছেলেটা তাহলে কি সত্যি নাতাশার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে রাহুল? না শুধু গল্প করছে। কিন্তু লনে কখনও যে এর আগে টানা এক ঘন্টা কখনও গল্প করতে দেখেনি রাহুলকে। অফিসে মেয়ে নেই যে তাও নয়। বিকাশের চিন্তা ওদের প্রেম কাহিনী নিয়ে এমন নয়, নিজের কাজের লক্ষ্য যে এবারও পূরণ হওয়ার নয়। সেই নিয়েই অফিসের নীচের গুমটি থেকে একটা বড় সিগারেট ধরিয়ে এসাইনমেন্টের যাওয়ার জন্য ক্যাব ধরল।এদিকে নাতাশা রাহুলের এই এক ঘন্টার গল্প নিয়ে অফিসের মধ্যে ফিসফাস শুরু হয়ে গিয়েছে। বস যখন নতুন কারও প্রেমে পরে তখন অন্য কর্মীদের চাপ বাড়ে বইকি। এবার তো সমস্ত রেসপন্সিবেলিটি নাতাশার জন্য ভর করবে। তাছাড়া এই ছুড়ি যদি পার্মামেন্ট হয় তাহলে তো আর রক্ষে নেই। কাজ তো করবেই না বরং অন্যদের সর্বনাশ। এই ভেবে অফিসের বাকি কর্মীদের ঘুম ছুটেছে। এক বিকাশ চাপ নিয়ে অফিসে সেদিন আর আসেনি।নাতাশার সঙ্গে রাহুলের ঘন্টা খানেকের গল্পে থেমে থাকল না। এবার রাহুলের ভালো মন্দ বুঝতে শুরু করেছে নাতাশা। রাহুলকে বিদেশি চকোলেট চুষতে দেখে অবাক অফিসের কর্মীরা। এ কি দেখছে তারা। যাকে মিষ্টি বা লজেন্স অফার করলে মুখ ঘুরিয়ে নিত। বলতো, ওসব কেউ খায়? বিদেশি নয় এক টাকার লজেন্সও রাহুলে হাতে। ডালমে কুছ তো কালা হ্যায়। না পুরা ডালই কালা হ্যায়। এবার দিন পার হতে থাকে নয়া নয়া আলোচনায়, গমগম করতে থাকে অফিস।রাহুলের অফিস রুমে টেবিলের সামনে দুটো চেয়ার। ঘরে ঢুকে ডান দিকের কোনের চেয়ারে বসে নাতাশা। হঠাৎ করে রাহুলের ঘরের দিকে তাকালে ওই ঘরে আর কেউ আছে কিনা বোঝার উপায় নেই। সেই বিশেষ অ্যাঙ্গেলই চেয়ারে বসে নাতাশা। অফিস লনের পর এবার সরাসরি অফিসে বসের চেম্বারে। এ যে কি হচ্ছে! এই ভেবেই বাকিদের বুক ধরফর করতে শুরু করেছে। হঠাৎ অফিসে হাজির জমাটো বয়। সারা অফিস এবার জমাটো ডেলিভারি বয়ের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক নয়নে। সাধারণত এই অফিসে জমাটো ডেলিভারি বয়দের খুব একটা দেখা যায় না। কারণ কেউ কখনও বাইরের খাবার অর্ডার করেনি। অফিস বয়রা খাবার এনে দেয়। কারও বুঝতে অসুবিধা হল না। এই অর্ডার বসের। এবার দুজন জমিয়ে লাঞ্চ করবে একসঙ্গে। নয়া দৃশ্য।যথারীতি খাবারের প্যাকেট ঢুকলো বসের চেম্বারে। অফিস বয় রাজুকে আগেই নাতাশা বলে রেখেছিল খাবার আসবে। অফিস বয়ও ভাবতে শুরু করেছে এটা কি হচ্ছে। আগে তো কখনও রাহুল স্যার কোনও খাবারের অনলাইন অর্ডার করত না। কারণ, অনলাইনের এই জগতেও রাজুর আনা খাবার ছাড়া খায় না বস। রাজুকে বলতো খাবার আনতে। এবারই প্রথমবার জোমাটো বয় অফিসে ঢুকলো রাহুলের খাবার দিতে। খিদের পেটে আর অপেক্ষা নয়। রাহুল ও নাতাশা খেতে শুরু করল। এরই মধ্যে চিৎকার করে সহকর্মী মিষ্টিকে খেতে ডাকলো বস। মিষ্টি সুরেলা কন্ঠে জানিয়ে দিল তাঁর খিদে নেই। এই না খাওয়ার আসল কারণ যে নাতাশা তা বুঝতে অসুবিধা হল না অফিসের অন্যদের। নাতাশা আর বসের ঘনিষ্ঠতায় অফিসে নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবতে শুরু করেছে মিষ্টি। বড্ড চাপ নিয়ে ফেলেছে মিষ্টি। তাহলে কি বস আর তাঁকে পছন্দ করছে না? এবার বদ বুদ্ধি ঘুরতে থাকে মিষ্টির। যখন তখন ছুটি, মাইনে বাড়ানো এসব আর কি সহজে হবে? ভাবতে থাকে মিষ্টি। বসকে ভোলানো আর সহজ হবে না। তাহলে উপায়! নাতাশা ও বসকে বিপাকে ফেলতে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করে মিষ্টি।অপেক্ষায় থেকে থেকে একদনি রাহুল ও নাতাশার অজান্তে দুজনের পাশাপাশি বসা ছবি তোলে মিষ্টি। অপ্পো মোবাইলে তোলা এই ছবিই এখন তাঁর অস্ত্র। যে করে হোক ঘায়েল করতে হবে নাতাশা ও বসকে। তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে কিভাবে বসকে চাপে ফেলবে। অফিসের রাজনীতি এবার পৌঁছে যায় বসের গৃহস্তের হেঁশেলে। আগুন ধরাতে কি আর দেশলাই কাঠি লাগে! এই একটা ছবিই তো দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দেবে সংসার। নছনছ করে দেবে রাহুল-নাতাশার মধুর সম্পর্ক। এবার সেই ছবি পৌঁছে গেল রাহুলের হোম মিনিস্টারের কাছে। না তাতেও ক্ষান্ত হয়নি মিষ্টি। এবার একের পর এক টেক্ট শুরু করল রাহুলের বউ ববিতাকে। এসব দেখে মাথায় ভুত চাপলো ববিতার।যে সময়ে এই ছবি আর টেক্সট চালাচালি হচ্ছে তখন বস পুরুলিয়ায় অফিসের কাজে প্রচন্ড ব্যস্ত। রাহুলের পুরুলিয়া যাওয়াটা কাজে লাগিয়েছে মিষ্টি। কর্তা ঘরে না থাকায় দুজনে বেশ কতক্ষণ মোবাইলে কথাও বলেছে। আগুনে ঘি পড়তেই রেগে কাইকাই করতে শুরু করে ববিতা। এক মিষ্টির দেওয়া ছবি ও তাঁর মুখে শুনেই মন খারাপের দেশে চলে যায় ববিতা। শরীরে জ্বালা শুরু হয়ে যায়। তাহলে কি সত্যি নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে নাতাশা-রাহুল? ভাবতে শুরু করে ববিতা। এর আগে প্রিয়ার কেসটা সাল্টে দিয়েছিল ববিতা। মনে সন্দেহ বাড়তে থাকে। আর অপেক্ষা না করে ববিতা রাহুলকে ফোন করে জানতে চায় নাতাশা কে? তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক কি? রাহুল অফিসের কাজের ব্যস্ততায় হোম মিনিস্টারের এই প্রশ্নের কি জবাব দেবে বুঝে উঠতে পারছে না। ববিতা এত কথা জানলোই বা কি করে? এবার এই সব মাথায় ঘুরতে থাকে রাহুলের। ববিতাকে বলে কলকাতায় ফিরে সব জানাবে। এখনই বলতে হবে বলে হাউ হাউ করতে থাকে ববিতা। কোনও ভাবে ববিকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে রাহুল। ববিতাকে ম্যানেজ করার সময় ববি বলে ডাকে রাহুল। একের অফিসের চাপ, তারওপর বউয়ের পাহাড় প্রমান অভিযোগ। হাপিয়ে উঠতে থাকে রাহুল।কিছু দিন পর কলকাতায় ফেরে রাহুল। তাঁর মাথায় আছে বউকে ঠান্ডা করতে হবে। কোনওরকমে ববিতাকে বুঝিয়েছে। এসব কিছু না। তোমাকে যাঁরা বলেছে তাঁরা না বুঝে বলছে। এটা তেমন কিছু নয়। কিন্তু সারা অফিস রাহুল-নাতাশার চর্চায় গমগম করছে। তাহলে অফিসের হাল কি হবে? রাহুলের সংসারের আগুন কি সত্যি লেগে গেল? সম্পর্ক নষ্ট করতে নানা চক্রান্ত চললেও নাতাশা ও রাহুলের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকল। নাতাশা লাল টপ পড়লে, রাহুল লাল টি-শার্ট পড়ছে। একজন কালো ড্রেস পড়লে, আরেকজনও তাই পড়ছে। প্রেমের গন্ধে মম করছে অফিস। এবার কাজের বদলে টেবিলে টেবিলে একটাই পিএনপিসি রাহুল ও নাতাশা।এক দিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে রাহুল। বাড়িতে ফিরতেই গিন্নির মুখ ভার। এক কথা দুকথায় নাতাশাকে নিয়ে দুজনের মধ্যে খুচরো ঝগড়াও হয়ে গেল। রাহুল আর বুঝতে পারে না কি করে বিষয়টা হালকা করবে। এমন ভাব দেখায় সে যেন কিছু জানে না। ববিতাকে বলে কি যে তুমি আজকাল বলছ। নিজে মনে মনে ভাবতে থাকে অফিসের জুনিয়র স্টাফকে নিয়ে কি বলছে ববিতা। এত খবর কিভাবে পেল সে। ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। এসব ভাবতে থাকে। এরপর হঠাৎ ববিতা বলে ওঠে বাড়িতে দুটি সন্তান থাকতেও নাতাশার প্রতি এতো টান কিসের। আমাকে ছাড়তে পারলেও ওদের কি করবে? অভিযোগ এবার আরও গুরুতর। রাহুল ভাবছে কি বলছে ববিতা। কি হল। কেন এসব আজে-বাজে বকছো, ববিতাকে বলে রাহুল। ববিতা একশ্বাসে বলতে থাকে আমি সব জানি। ওই নাতাশার সঙ্গে তুমি কি করছ। আমি কি জানি না ভাবছো। আমাকে ছেড়ে তুমি ওই কচি মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাও। এসব বলতে বলতে ববিতার দুই চোখের কোনে জলও চলে আসে। রাহুল কিছুতেই বুঝতে পারে না কেন এসব বলছে ববিতা। তাছাড়া কলকাতাতেই রাহুল ছিল না ৭দিন।কয়েকবার ববিতাকে রাহুল বলে অযথা কি যে ভাবছো, বাজে চিন্তা করো না। ভাতের হাড়ির মতো মুখ করে ছিল ববিতা। কোনও জবাব না পেয়ে এবার ঝাঝানি দিয়ে ওঠে ববিতাকে। কি হয়েছে বলতে পারছো না। পাগল হয়ে গেছে নাকি। নাতাশার সঙ্গে সম্পর্ক! এসব গল্প কে বানিয়েছে। তোমাকে কে বলেছে। তুমি তো দেখছি আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি করতে শুরু করবে। কার কথায় এসব করছো। কান দিয়ে তো ভালো দেখতে পাচ্ছো। গল্পের গরু এতক্ষণে গাছের ডগায় উঠে গিয়েছে। এবার রাহুল ববিতাকে বলে আমার আর কিছু বলার নেই। বলতে থাকো। কিন্তু তোমায় খবরটা দিল কোনও মহানুভব। আমার অফিসে খোচর লাগিয়েছো। গুড। অনেক অনেক চাপের পর মিষ্টির বলা সব কথা বলে দেয় ববিতা। মাথায় যেন বাজ পড়ে রাহুলের। সে নাকি কলকাতা ছাড়ার আগে মিষ্টির ওপর অফিসের দায়িত্ব দিয়েছিল। কাকে দিয়েছে রানির পাঠ। সেই নাকি খবরিলাল। বেইমান, গদ্দার শব্দগুলি মাথায় এলেও এতটা নীচু স্তরে ভাবে না রাহুল। শুধু এটুকু ভাবে কাদের সঙ্গে সে কাজ করছে। জুনিয়র স্টাফ তাঁকে বস হিসাবে একটু গাইড করা। যাতে অসুবিধায় না পরে সেদিকে নজর ছিল রাহুলের। আর মিষ্টি কোথাকার জল কোথায় নিয়ে গিয়েছে। ববিতা রাহুলের কথায় আস্বস্ত হল। বোঝালো এমন কিছু নয়। আর তো দিন পনেরো। তারপর তো নাতাশার চুক্তির মেয়াদ শেষ।কাজের চুক্তি শেষ হতেই নাতাশা অফিস ছাড়লো। এদিকে বসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তোলপাড়। বিষয়টা নিয়ে কোনও মাথাব্যথা যে নাতাশার ছিল না তা কিন্তু নয়। তাঁর হাবেভাবেই তা স্পষ্ট। রাহুল অফিসে আসতেই ববিতার মুখ ফ্যাকাসে বিবর্ণ হয়ে যেত। অফিসে গেলে কিছু না ঘটে। তবে নাতাশা অফিস ছাড়লেও দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়লো না রাহুলের সঙ্গে। এবার অনেক সতর্ক রাহুল। নাতাশার প্রতি আকর্ষণ বরং আরও বেড়ে গেল রাহুলের। অফিসে না এলেও পার্কস্ট্রিটের রেস্তোরাঁ এখন বাঁধা রাহুল ও নাতাশার। অফিস থেকে সোজা পার্কস্ট্রিট। তারপর বন্ধুদের ঠেক। তারপর বাড়ি। এই রুটিনে চলতে থাকে রাহুলের গতে বাঁধা জীবন।এখন আবার রাহুলের অফিসের টিফিন আসে বাড়ি থেকে। ববিতাই টিফিন বানিয়ে দেয়। রাহুলের প্রতি ববিতার প্রেম যেন নতুন করে উথলে পরতে শুরু করে। আপাতত সংসার টিকে গেল রাহুল ববিতার। এত কিছুর পরও নাতাশা ও রাহুলের সম্পর্কেও কোনও টানাপোড়েন নেই। চব্বিশ বর্ষীয়ার সঙ্গে আটচল্লিশের প্রেমের পড়শ চলছে। একইসঙ্গে দুই ছেলে-মেয়ে আর ববিতাকে নিয়ে চুটিয়ে সংসারও চলছে রাহুলের। এখনও এভাবেই দিন কেটে চলেছে ত্রিকোন প্রেমের সম্পর্কের। তিলোত্তমা নগরীতে এভাবেই চলছে ববিতা-রাহুল-নাতাশার মতো হাজার হাজার সম্পর্ক। অন্য বিষয়ের মতো বৈধ বা অবৈধ বিতর্ক যেমন থাকবে তেমনই প্রেম তো আর বাধা মানে না.......... টিকিয়ে রাখতে শুধু যেন কৌশলের বদল ঘটে।

জুন ২৯, ২০২৪
নিবন্ধ

ঝাপসা পলাশ

সেই কাকভোর থেকে অগোছালো শরীরটাকে টেনে হিচড়ে, ইচ্ছে -অনিচ্ছের রাস্তা মাড়িয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়া এখন করুণ অভ্যেস।রাতের বিছানায় নেতিয়ে না পড়া পর্যন্ত শান্তি নেই, সংসার বড় বালাই। তাই চা, বিড়ি, ফর্দ, সমালোচনা, গালাগালি, হিসেবনিকেশ।অসুখটা ঠিক শরীরে নয়। চাওয়া পাওয়ার ঘাটতি গুলো মনের ভিতর জমে বাষ্প হয়ে মেঘ হয়, কিন্তু বৃষ্টি হয়না।জীবাণুদের কোলাহল বাড়তে থাকে, বিপ্লবের টের পাই সেই অদ্ভুত নীরব অনুভূতির সাম্রাজ্যে - যেটা আজও বেশ অচেনা।কল্পনার বেনো জলে ভেসে আসে উদগ্র বাসনা - ব্যার্থ চাহিদাগুলো সার দিয়ে দাঁড়ায়, সস্তা লালসার দংশনে মন জেরবার।রাত বাড়ে, পাল্লা দিয়ে চলে গাঢ় নীলচে অন্ধকারে অগাধ সাঁতার, অন্তহীন আকাশের মতো, যেখানে শব্দ নেই আছে বিস্তার।হারতে হারতেও লড়াইটা টিকিয়ে রাখার ক্ষীণ প্রয়াস, বারোমাস। কুয়াশা মাখা ভোরের পর একঘেয়ে সকাল, ঘর্মস্রাবি দিনের শেষে চোখের কোনে জমে ঝুল।সাতচল্লিশটা বসন্ত পার করার পর পলাশ, কৃষ্ণচূড়ারা আজও শুধুই লালচে ফুল।দীপক কুমার মণ্ডলবর্ধমান

এপ্রিল ১৯, ২০২৪
নিবন্ধ

ধৌলাধর-এর কাছাকাছি - তৃতীয় পর্ব

ঢুকে যখন পড়েছি একবার ছাড়াছাডি নেই আর! কোনোমতে ঘুষিয়ে ঘাষিয়ে সেই ভীড়ে ঠাসা সর্বোচ্চ গ্যালারীর পরিধি বেয়ে এগোতে লাগলাম অনীক আর আমি। কারো কোল ডিঙিয়ে, কারো বগলের তলা দিয়ে উঁকি মেরে, কোনো শালপ্রাংশু মহাভুজের পিঠের পিছন দিয়ে পিছলে গিয়ে, দুরধিগম্য এক অভিযানে ব্রতী হলাম আমরা এমন একটুকরো পা রাখার জায়গার সন্ধানে যেখান থেকে অন্তত এক চোখ দিয়েও দেখা যাবে সীমানাফটকে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কী মহানাট্য! লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে সড়রা মেরে শেষতক পৌঁছোতেও পারলাম সেই গ্যালারীর পশ্চিমতম প্রান্তে, আর হাডগোডভাঙ্গা দ-এর মতো বেঁকেচুরে কোনোমতে দাঁড়িয়ে দেখলাম সেখান থেকে দুই দেশের সীমান্তফটক আর মধ্যবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ড দেখা যায় চমৎকার!সীমান্তচৌকির এই অনুষ্ঠান দেখার পরমোৎসাহ ছিল মূলত চিত্রা ও সুকন্যা-র; আমরা বাকিরা বিনে পয়সায় দুশো মজা দেখার মতলবে সামিল হয়েছিলাম হইহই করে। কিন্তু এ যা ভুতোভুতি কান্ড দেখছি, চিত্রা গ্যালারীর ভেতর ঠিকঠাক জায়গায় ঘাঁটি গাড়তে পেরেছে তো! আর সুকন্যা-রূপার উইকেট তো পড়ে গেছে প্রথম ওভারেই! নিজেরাও হাত-পা-গুলো আস্ত নিয়ে বেরোতে পারবো কি না কে জানে!চোখের সামনে সুবিশাল পাঁচতলা অশ্বক্ষুরাকৃতি দর্শনার্থী-গ্যালারি, খচাখচ ভরা হুয়া হ্যায়। গাঁকগাঁক করে দেশপ্রেম উগড়োচ্ছে মহাশক্তিমান সব সাউন্ডসিস্টেম, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উল্লসিত কলরোল আবেগাপ্লুত জনগনেশের। মধ্যিখানের মসৃন পিচঢালা রাস্তাটি বন্ধ ফটক পেরিয়ে গিয়ে পড়েছে নো ম্যানস ল্যান্ডে। সেই রাস্তায় বলিউডি দেশভক্তিগীতির তালে তালে তুমুল নৃত্যকলা প্রদর্শন করছেন শয়ে শয়ে উত্তেজিত দেশপ্রেমী সে দলে ঝুঁটিবাঁধা নবযুবক-ফাটাজিন্স তরুণী-পৃথুলা মাঝবয়সী পন্জাবিনী-ছকরাবকরা শার্টশোভিত চকচকে-টাক আঙ্কলজী, কে নেই! ভূমিতলের গ্যালারীর প্রথম কয়টি ধাপে সমাসীন কিছু বিদেশী অতিথি পরম কৌতুকভরে অবলোকন করছেন এই অমৃত মহোৎসব!সীমান্তের ওপাড়ের গ্যালারি খাঁ খাঁ করছে। রমজান মাস। উপবাসভঙ্গের সময় এখন। তাই বোধ হয় ওদিকের দেশপ্রেমীরা তেমন আসর জমান নি। মখমলি সবুজ ঘাসজমি ঘিরে অর্ধচন্দ্রাকার গ্যালারীটি আয়তনে এদিকের এই দানবিক নির্মাণের কাছে পঁচিশ গোল খাবে; তবে বেশ একটা সংযত ওল্ড ওয়ার্ল্ড চার্ম জড়িয়ে আছে ওয়াগা সীমান্তফটকের ওই দিকের পরিকাঠামোয়।নববর্ষের বৈকালিক সূর্য ঢলে পড়লো উল্টোদিকের গ্যালারীর আডালে। এখন ছাদেও উঠে এসেছেন বহু মানুষ। সুকন্যা-রূপাকে নিয়ে বাদশাদা ফিরে এলো কি? ঢুকতে পারলো? প্রবেশদ্বারগুলির কাছে চরম বিশৃঙ্খলা এখন মনে হচ্ছে অনেকখানি স্তিমিত। সোয়া পাঁচটা বেজে গেছে। চারটি দশাসই সারমেয় শান্ত পায়ে হেঁটে গেল তাদের হ্যান্ডলারদের পাশে পাশে; তার পরেই সতেজ সাবলীল পদক্ষেপে কদম কদম এগিয়ে গেলেন বি.এস.এফ-এর চার তরুণী সদস্যা সীমান্তফটকের কাছে গিয়ে পোজিশন নিলেন এঁরা সবাই।এবার অকুস্থলে অবতীর্ণ হলেন বি.এস.এফ-এর কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক। তাঁর পরবর্তী ক্রিয়াকলাপ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমাদের দেশাত্মবোধ জাগাতে কী না করলেন ভদ্রলোক লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে-দৌড়ে গিয়ে- ঢিল মারার ভঙ্গী করে সবাইকে অনুপ্রাণিত করলেন তাঁর বাজখাঁই গলায় দেওয়া স্লোগানে গলা মেলাতে। কত রকমভাবে যে গলা খেলালেন তিনি! আর থেকে থেকে অদ্ভুত এক কালোয়াতী ঢঙে ছো-ও-ও শব্দে মিনিটখানেক টান দিয়ে শেষে হা-আ-আ করে সংক্ষিপ্ত হুঙ্কার পাবলিক পুরো ফিদা সেই রণনির্ঘোষ শুনে!এই উচ্চকিত দেশভক্তির ফুটন্ত বাতাবরণে অনীক আর আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি বেশ! স্লোগানে তেমন গলা তোলা হয় নি একবারও। গ্যালারীতে উঠে এসে আমাদের ঘাড় ধরে ওপাড়ে ছুঁড়ে ফেলে না দ্যায়! তবে ভয়ে ভয়ে এধার ওধারে তাকিয়ে দেখে নিয়েছি, কাছাকাছি ইতস্তত বিক্ষিপ্ত আরো কিছু বাঙালী পরিবারের অবস্থাও তথৈবচ! জ্বলন্ত দেশপ্রেমের সাম্প্রতিক মাপকাঠিতে আমাদের বাঙালিদের নম্বর যে নেহাতই কম সে কথা মালুম হলো, তা সে আন্দামানের সেলুলার জেল-এর বন্দীতালিকায় মোট ৫৮৫ জনের মধ্যে ৩৯৮ জনই বাঙালী যতই না হোক!!প্রায় সাড়ে পাঁচটা। দৃপ্ত পদক্ষেপে কুচকাওয়াজ করে এগিয়ে গেলেন একদল জওয়ান। তাঁদের তলোয়ার খেলানো.. অঙ্গসন্চালন.. আকাশমুখী পদবিক্ষেপ সবই বিস্ফারিতচক্ষে দেখার মতো। ভয় হচ্ছিল, নিজের পায়েই না কারো কপালে চোট লেগে যায়! উপস্থিত তিন-সাড়ে তিন লাখ জনতা উৎসাহে-রোমান্চে-গর্বে উদ্বেল! থেকে থেকে বজ্ররবে উছলে উঠছে জনসমুদ্র ভারতমাত্তা কি-ই ঝ্যায়! আমরা এখান থেকে দিব্যি দেখতে পাচ্ছি, ফটকের ওপারের ঘাসজমিতেও অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে রণরঙ্গ; তবে তাতে উত্তেজনা অনেক কম। শুরুতে ঢাউস ঢাক বাজাতে বাজাতে নেচে গেছেন জনাকয় ভাঙরা-শিল্পী, তাতে মৃদু হর্ষোল্লাস শোনা গেছে একটু একটু করে জমে ওঠা শখানেক দর্শকের ওমনি প্রবল প্যাঁক দিয়েছে এপাড়।ঠিক সাড়ে পাঁচটায় খুলে গেল দুদিকের ফটক। দুদেশের জওয়ানরা সেলাম ঠুকলেন পরস্পরকে খোলা হলো পতাকার দড়ির গিঁট টানটান করে কোনাকুনি দড়ি ধরে দাঁডিয়ে রইলেন দুপাড়ের সান্ত্রীরা ধীরে ধীরে নেমে এলো দুদেশের নিশান ভাঁজ করে রেখে দেওয়া হোলো পরদিন সকালে পুনর্বার ঝান্ডোত্তোলনের জন্য গড়গডিয়ে বন্ধ হয়ে গেল দুপাড়ের সীমান্তফটক, আজ রাতের মতো।অনুষ্ঠান শেষ। একটি প্রাত্যহিক রিচ্যুয়াল ঘিরে এই মাপের হাইপ ভাবা যায় না! স্লুইস গেট খুলে যাওয়া অতিকায় বাঁধের জলসমুদ্রের মতো দ্রুত খালি হয়ে যাচ্ছে গ্যালারী। ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলাম দুজনে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দুচোখ ভরে দেখলাম সীমান্তের ওপাড়ে দিনের সূর্যের ডুবে যাওয়া সেই একই হরিয়ালা শষ্যক্ষেত্র একই মাটি জল একই নীলাকাশ!নীচের বাগানে মানুষের মেলা সাজিয়ে রাখা পুরোনো বিমানের সামনে ফটো-সেশনের ভীড়কোনোমতে ফোনের লাইন পেতেই খুঁজে পাওয়া গেল বাকিদের। চিত্রা ভীড়ের চাপে চিঁডেচ্যাপটা হয়েও দেখতে পেয়েছে ভালোই! বাদশাদা-সুকন্যা-রূপা আমার আশাকে সম্মান জানিয়ে ফিরে এসেছিল ও ফাঁকতালে ভালো জায়গাতেই দাঁড়াতে পেরেছিল। সমবেত নৃত্যভুবনের মায়াবী পরিবেশে আত্মহারা হয়ে সুকন্যা ও রূপা গ্যালারীতেই বেশ দুপা নেচেও নিয়েছে শুনলাম। শুনে পরম আশ্বস্ত হওয়া গেল। সতীর পুণ্যে পতির পুণ্য! এই সুমহান দেশভক্তিমূলক নৃত্যসমাবেশে আমারও যাকে বলে মহত্বপূর্ণ যোগদান রয়ে গেল!বাইরে শাহী কিলা রেস্তরাঁয় পয়সাওয়ালা দর্শনার্থীদের ভীড়। একপাশে ছোট্ট মন্চে গাইছেন ঝিকিমিকি আলোজ্বলা পোশাকপডা গাইয়ে।রূপা প্রচন্ড ক্ষেপে রয়েছে ওকে ছেড়ে আমি ভিতরে ঢুকে যাওয়ায়। একগ্লাস কোল্ড কফি সেই উত্তপ্ত চিত্তে কিন্চিৎ ছায়াবিস্তার করলো। বিস্তর ঝামেলা গেছে আজ সারাদিন, বেশী গন্ডগোলের দরকার কী!ঝামেলার অবশ্য বাকি ছিল আরো! পার্কিংলট থেকে গাড়ি বেরোতেই লেগে গেল ঘন্টাখানেক, এমন বিচ্ছিরি যানজট! যে যেদিকে পারে গাড়ি ঢুকিয়ে দিচ্ছে, যাননিয়ন্ত্রণের কোথাও কোনো নামগন্ধই নেই। অবশেষে একসময় ফেরার পথ ধরলো আমাদের ইনোভা ক্রিস্টা। পেটে তখন চুহাদের উন্মত্ত ছোটাছুটি; সারাদিন তো সেভাবে গুছিয়ে খাওয়াই হয় নি! গৌরব গাড়ি দাঁড় করালো মাঝপথে, বল্লে বল্লে ধাবা-য়।বেশ জম্পেশ ব্যাপার; পাশেই আছে সাবা সাবা ধাবা। বল্লে বল্লে আর সাবা সাবা মিলে বেশ জনচিত্তজয়ী পরিবেশ রচনা করে রেখেছে রাজপথের পাশে। ভিতরে প্রশস্ত চাতাল.. বাগান.. ফোয়ারা.. খাটিয়া বা কুর্সিতে ইচ্ছামতো বসার আয়োজন!টনটনে পা ছড়িয়ে বসে জম্পেশ খাওয়া হোলো চাওল-রাজমা - বেসন দা রোটি - মক্কি দা রোটি - সর্ষুঁ দা শাগ - পায়েস-লস্যি! প্রৌঢ সর্দারজী বাঙালী মেহমানদের খাতিরদারি করলেন দিল খুলে। পন্চনদ -এর দেশে প্রথম সন্ধ্যার পেটপুজো নেহাত মন্দ হলো না!আধঘন্টায় অমৃতসর শহর পুরোনো ও নতুন হাতধরাধরি করে দাঁডিয়ে পেরোলাম বিখ্যাত গুরু নানকদেব বিশ্ববিদ্যালয় তার পাশেই বিশাল উদ্যানশোভিত ক্যাম্পাসে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো আলোকিত এক অপরূপ সৌধ দেখে মুগ্ধ হলাম, জানলাম ওটি খালসা কলেজ! হোটেল গোল্ডেন সিরাজ ক্যাসল খুঁজে পেতে বেগ পেলেও জায়গাটা পছন্দ হোলো বেশ!কোন ভোরে উঠেছি সবাই! ঝটপট তাই বিছানায়। কাল সকাল সকাল উঠে সোজা স্বর্ণমন্দির!

সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
নিবন্ধ

ধৌলাধর-এর কাছাকাছি - দ্বিতীয় পর্ব

বৈশাখী উৎসব কাল রং ছড়িয়েছে সারা পন্চনদ জুড়ে; সেই রঙের স্বপ্নমায়া যেন জড়িয়ে আছে পথের দুধারের প্রকৃতিতে। পাকা গমের ক্ষেতে সোনালী আলো, তার মাঝে মাঝে গাছগাছালির সবুজ সঙ্গৎ। মধ্যদিনে গান বন্ধ করে নি পাখিরা; স্বাস্থ্যবান টিয়ার ঝাঁক ওড়াউডি করছে গাছে গাছে আর গমের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়.অমৃতসর বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে হোটেলে না উঠে সরাসরি চলেছি চল্লিশ কি.মি. দূরে আটারি সীমান্তের দিকে, উল্টোদিকের পাকিস্তানী সীমান্ত ওয়াগা-র নামেই যা খ্যাতি পেয়েছে ওয়াগা বর্ডার রূপে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মুখোমুখি দুই দেশের সীমান্তচৌকিতে জাতীয় পতাকা অবনমনের অনুষ্ঠানটি দেখেই ফিরবো আমরা, তারপর পূর্বনির্ধারিত হোটেলে গিয়ে আশ্রয়গ্রহণ।নিদাঘদগ্ধ অপরাহ্নের নিষ্করুণ রৌদ্র গড়িয়ে নামছে দুপাশারি নিম-বট-অশ্বত্থের ডাল বেয়ে। প্রশস্ত সড়কের ডান পাশে একের পর এক পাঁচিলঘেরা সামরিক ছাউনি। পথে মাঝে মাঝেই পেরোচ্ছি পেছনের ডালাখোলা টেম্পো-ম্যাটাডর-ছোটোহাতি গাড়িদের; সেসব গাড়িতে বোঝাই হয়ে সীমান্তচৌকির অনুষ্ঠান দেখতে যাচ্ছে তেরঙা টুপি-ফেট্টি-পতাকায় সজ্জিত তরুণ ভারত। পথের বাঁ ধারে মাঝে মাঝেই বিলাসবহুল দুর্দান্ত সব ফার্মহাউস বা অনুষ্ঠানস্থল বাগান-মূর্তি-স্থাপত্যের আড়ম্বরে যা চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, দেখিয়ে দেয় সবুজ বিপ্লবোত্তর পন্জাব-এর সমৃদ্ধি-চিত্র।অকুস্থলের কাছাকাছি এসে লম্বা গাড়ির লাইনের পেছনে থেমে যেতে হোলো। গাড়ির আশেপাশে হাতে-গালে তেরঙা আঁকনেওয়ালা টুপি-ফেট্টি-আর্মব্যান্ড বেচনেওয়ালা ছোটোখাটো স্মারক- সি.ডি - টি-শার্ট গছানেওয়ালারা উপচে পড়লো। ভারতীয় সেনার প্রতিনিধিদের কাছে নিজেদের পরিচিতিপত্র দেখিয়ে, গাড়ির আগাপাস্তালা চেকিংয়ের অগ্নিপরীক্ষা পেরিয়ে, পৌঁছে গেলাম সীমান্তচৌকির কাছে বিশাল পার্কিংলটে। ওয়াশরুম - কাফেটারিয়া - ওয়েটিং শেড সবকিছু নিয়ে জমজমাট এক পরিকাঠামো সারথী গৌরব এখানেই আমাদের ভূমিস্থ করে সাময়িক বিদায় নিল।কাতারে কাতারে মানুষ; লম্বা লাইন এগোচ্ছে দ্রুত। বাইরের গেট-এর কাছে এসে দেখি পুরুষ ও মহিলাদের লাইন আলাদা করে দেওয়া হয়েছে, পৃথক জায়গায় তাদের শরীর তল্লাশির বন্দোবস্ত। সেই অবশ্যপালনীয় খিটকেলটি পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে বাদশাদা-অনীক-আমি আর খুঁজে পেলাম না আমাদের মহিলা ব্রিগেডকে!নিশ্চয়ই ঢুকে গ্যাছে ভিতরে! অনুষ্ঠানের সময় হয়ে আসছে; লোকজন প্রায় ছুটছে দুপাশ দিয়ে। কাজেই গ্যালারিতে জায়গা পেতে হলে কালক্ষেপ না করে এগোও। ওদের ফোন করতে গিয়ে দেখি ফোনের সিগন্যাল হাওয়া! তা হলে যোগাযোগ হবে কী করে! মহা মুশকিল হোলো তো!তিনজনে ফোন টেপাটেপি করতে করতেই পা চালাচ্ছি; হঠাৎ বাদশাদা ফোন পেল সুকন্যার কোথায় তোমরা, কোথায় তোমরা করতে করতেই সে ফোন কেটেও গেল। অতঃপর তিনজনেই প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি, কখনো সখনো কানেকশন হচ্ছেও, কিন্তু কথা বলার আগেই কেটে যাচ্ছে। এই লাখখানেক লোকের ভীড়ে একসাথে না মিললে চিত্তির; কিন্তু ওরা যে কোথায় বোঝাই যাচ্ছে না! দাঁড়িয়ে যাবো কোনো এক জায়গায় নাকি এগোবো তাও ঠিক করতে পারছি না!এই কুনাট্য অভিনীত হোলো আরো প্রায় মিনিট দশেক। ততক্ষণে বন্যার মতো জনস্রোত বয়ে যাচ্ছে মূল অনুষ্ঠানস্থলের দিকে। দূর ছাই, নিশ্চয়ই ওখানেই পাবো ওদের। চলো এগোই। বলে প্রায় দৌড়োলাম তিনজনে।সামনেই বিশাল এক অট্টালিকাসম নির্মাণ, মাথায় লেখা INDIA; সামনে সুউচ্চ দণ্ডশীর্ষে বিশাল জাতীয় পতাকা উড়ছে পতপত করে। গ্রাউন্ড লেভেল-এর প্রবেশপথটি জনস্ফীতিহেতু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। প্রহরীর নির্দেশ, উঠে যাও পাশের সিঁড়ি দিয়ে ওপরের গ্যালারিতে। সে দিকে তাকিয়েই দেখি সিঁডির পাশে বিপন্ন মুখে দাঁড়িয়ে সুকন্যা আর রূপা!!হারানিধি ফিরে পেলেও সেলিব্রেশন-এর সময় নেই। চিত্রা কই? সে নাকি আমাদের দেরী দেখে একাই গুঁতিয়ে গাঁতিয়ে ঢুকে গেছে ভীড়ে ভীড়াক্কার গ্যালারিতে! দোষারোপ - পাল্টা দোষারোপের সময় নেই; তেডে সিঁড়ি বাইতে শুরু করলাম পাঁচজনে। ঠাসাঠাসি ভীড় প্রায় এগোনোই যায় না ভারতবর্ষের নানান প্রান্তের ভাষায় চিল্লামিল্লি ভেতর থেকে তারস্বরে মাইক উগরে দিচ্ছে জয় হো, জয় হো-ও .দোতলা তেতলার গ্যালারিতে তিলধারণের ঠাঁই নেই, ঢোকাই গেল না। চারতলার ল্যান্ডিংয়ে এসে স্নায়ুবিপর্যয় হোলো সুকন্যা-রূপার আর এক পা-ও যাবো না আমরা, মরবো নাকি এই ভীড়ে লোকের পায়ের তলায়!অনেক চেষ্টাতেও বোঝানো গেল না তাদের। অগত্যা বাদশাদা ওদের দুজনকে নিয়ে নামার পথ ধরলো। অনীক-এর হাত জাপটে ধরে আমি বল্লাম, যা থাকে কপালে, ফিরবো না। চলো দেখা যাক কী হয়!সর্বোচ্চতলার গ্যালারি প্রবেশপথের আগে সিঁড়িতে একদম ঠাসাঠাসি ভীড়, চরম বিশৃঙ্খলা। ওপরের লোকেরা ঢুকতে না পেরে নেমে আসতে চাইছে, নীচের লোকেরা চাইছে ওপরে উঠতে। কঘন্টা আগের দিল্লী-অমৃতসর উড়ানে মাঝের কিছুক্ষণ ভয়ানক এয়ার টার্বুলেন্স-এ পড়েছিল আমাদের বিমান; বারকয়েক মাঝআকাশে এয়ারপকেটে ধাঁইধপ্পাস পড়ে ভীষণ আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। আমি তখন ওয়াশরুমের ভেতর হাতল আঁকড়ে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে! কিন্তু তখনো এতো ভয় লাগে নি, এই মূহুর্তে যতটা বিপন্নবোধ করছি। এখন আর নেমে যাওয়ারও সুযোগ নেই। বাংলা নববর্ষের বিকেলে, এই দূর সীমান্তচৌকিতে পদপিষ্ট হয়ে যাওয়াই কপালে লেখা ছিল!সারাক্ষণ কোনো ভীড় নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ বা ব্যবস্থা চোখেই পড়ে নি সেভাবে। চিৎকার.. কান্নাকাটি.. গালাগালি.. তার মধ্যেই দুজনে দুজনার হাত জাপটে ধরে, দাঁতে দাঁত চেপে, দেওয়াল ঘেঁষে ঘষটে ঘষটে, অ্যামিবার মতো ক্ষণপদ বা সিউডোপোডিয়া এদিক সেদিক বাড়িয়ে বাড়িয়ে, একসময় কোনোমতে উঠে এলাম সর্বোচ্চ গ্যালারির প্রবেশপথে। তারপর একঝটকায় ভিতরে। মাইকে তখনো অমায়িক নির্দোষ ইয়ে মেরা ইন্ডিয়া, ইয়ে মেরা ইন্ডিয়া..

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
নিবন্ধ

ধৌলাধরের কাছাকাছি, প্রথম পর্ব

নববর্ষের ফুরফুরে সকালে যখন হু হু করে ছুটছে আমাদের গাড়ি রাজারহাট-নিউটাউন এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে, লালপেডে শাড়িতে সুশোভিতা একঝাঁক বঙ্গললনার ছোট্ট পদযাত্রা চোখে পডলো; হাতে তাঁদের ঢাউস মাপের শুভ নববর্ষ লেখা তালপাতার পাখা। সকাল আটটার রোদ আটকাতেই অনেকে সে পাখা ব্যবহার করছেন ছাতার মতো। বঙ্গসংস্কৃতি উদযাপন করতে তাঁদের অভিমুখ সেন্ট্রাল মলের সামনের নববর্ষ মেলায় এটা যেমন বোঝা গেল, তেমনই সকাল আটটাতেই ঘামিয়ে দেওয়া এই রুদ্রবৈশাখকে ফাঁকি দিতে চলেছি হিমাচলের ওক-পাইন-দেওদারের ছায়ায় ছায়ায় এই ভাবেই মনটা গার্ডেন গার্ডেন হয়ে গেল!সস্ত্রীক বাদশাদা-অনীক-আমি মোট ছয়জনের নাতিদীর্ঘ বাহিনী। অমৃতসর দিয়ে শুরু করে হিমাচলপ্রদেশের পশ্চিমাংশটা সমঝে নেবো আগামী আটদিনে। প্ল্যানটা দানা বেঁধেছিল মাত্রই মাসখানেক আগে; তাই ফেরার পথে চন্ডীগড থেকে কালকা মেল-এর বাতানুকূল সেকেন্ড টায়ার-এর টিকিট কষ্টেসৃষ্টে পেয়ে গেলেও অমৃতসর অবধি যাওয়ার টিকিট আকাশপথেই কাটতে হোলো। চারমাস আগে ট্রেনের আসন সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় আমাদের মতো উঠলো বাই তো বিনসর যাই- মার্কা উড়ুউডু মনদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। কটা পেশাজীবী মানুষ আর চারপাঁচমাস আগে থেকে আজকাল বেড়ানোর ছক সাজিয়ে উঠতে পারে!বাদশাদা-সুকন্যা আর অনীক-চিত্রা ভোর ভোর বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে আসছে বর্ধমান থেকে। রূপা আর আমি কাল সন্ধ্যেতেই চলে এসেছিলাম বারুইপুরের কাছে শ্বশুরবাডিতে। মেয়েও চলে এসেছিল হোস্টেল থেকে; তার সাথে সময় কাটিয়ে সকাল সকাল দুজনে চলেছি দমদম হাওয়াই আড্ডায়। আমাদের পৌঁছে দিয়ে সারথী মিঠু ফিরে যাবে বর্ধমান।3A গেট-এ নামলাম যখন, উড়ান-এর বাকি পৌনে দুঘন্টা। দুজনের দুটি সুটকেস, সাথে দুই পিঠব্যাগ। টিকিটের প্রিন্টআউট নিয়ে গেটের সি.আই.এস.এফ সান্ত্রী দেখছেন তো দেখছেনই। কী হোলো রে বাবা! আমার আধারকার্ড দেখে মিলিয়েছেন; রূপারটা বারবার উল্টাচ্ছেন ওনার তো টিকিট নেই।মানে? টিকিট হাতে নিয়ে স্মার্টলি দেখাতে গিয়ে আমার চক্ষুস্থির! টিকিট কেটে দিয়েছিলেন এক নিকটজন; রূপার পোশাকী নাম যে ইতি সরকার সেটা বোধ হয় জানা ছিল না তাঁর। ফলত টিকিটে নাম আছে রূপা সরকার। এদিকে আধারকার্ডে জ্বলজ্বল করছেন ইতি সরকার! আর এই মাসখানেক-এর মধ্যে আমরা কেউই একবারও শ্রীনয়ন মেলে তাকাই নি টিকিট-এর পানে!!সর্বনাশের মাথায় বাড়ি! কী হবে এবার! রূপা প্রায় কেঁদে ফেলে আর কি! অন্যেরা ইতিমধ্যে ভিতরে ঢুকে চেক ইন করে করে ফেলেছে। ফোন লাগালাম কাঁপা হাতে। শুনে ওদেরও আক্কেলগুডুম! ভিস্তারা-র কাউন্টারের মে আই হেল্প ইউ আসনের মহিলা প্রথমে সটান বলে দিলেন কিছু করার নেই । পরে অন্য এক ভদ্রলোকের সহায়তায় কাস্টমার কেয়ার-এ ফোন করে জানা গেল নামের বানান ভুল হলে ঠিক করে দেওয়া যেত, কিন্তু নাম পরিবর্তন অসম্ভব!রূপার টিকিট ক্যানসেল করে ইতি সরকার নামে নতুন টিকিট কাটো; গচ্চা যা যায় যাবে, কিছু করার নেই ! সে গুড়ে বালি; কলকাতা-দিল্লী আর দিল্লী-অমৃতসর দুটো উড়ানই পুরো ঠাসা। ভিস্তারা-র পরবর্তী দিল্লী যাত্রা অনেক বেলায়; আর বেশ কয়েকঘন্টা ট্র্যানজিট টাইম দিল্লিতে কাটিয়ে পরের অমৃতসর উড়ান ধরে পৌঁছাতে রাত দশটার কাছাকাছি হয়ে যাবে!মাথা ঝাঁঝাঁ করছে। কী করি! বাদশাদা আর অনীক ছোটাছুটি করছে ভিতরে, ফোনাফুনি চলছে, আর আশ্বাস পেয়ে চলেছি দেখছি আমরা, কিছু একটা ব্যবস্থা হবে নিশ্চয়ই!আচ্ছা, রূপার টিকিটটা ক্যান্সেল হলেই তো একটা সিট খালি হয়ে যাবে; সেখানেই তো জায়গা পেয়ে যাবে ইতি সরকার এটাই বলো না ওদের!এক একটা মিনিট এক এক ঘন্টা যেন! কলকাতা বিমানবন্দরের সাথে কোনো সূত্রে যোগাযোগ আছে এমন প্রায় সব বন্ধুকে ফোন করা হয়ে গেছে। উড়ান-এর সময় এগিয়ে আসছে। অবশেষে ভিস্তারা-র কর্মীরা সফল হলেন ঐ প্লেন-য়েই নতুন টিকিট কাটায়। গচ্চা গেল একগাদা; তবু..., যেন প্রাণ আসলো ধড়ে!!ওয়েব চেক ইন করে দিয়েছে ওরা। হুড়মুড় করে ব্যাগপত্র জমা দিয়ে, সিকিউরিটি চেক করে, ঢুকে পড়লাম ভিতরে। বোর্ডিং শুরু হয় হয়। তা বলে মোমো না খেয়ে প্লেনে ওঠা যায় বুঝি! ওটা যে দমদম-এ এসে আকাশে ওড়ার আগে আমার অবশ্যপালনীয় মঙ্গলাচরণ! অতএব ওয়াও মোমো-র কাউন্টারে হামলে পড়লাম সবাই। কাউন্টার-বর্তিনী জানালেন ছপ্লেট ফ্রায়েড চিকেন মোমো পাকাতে বিশ মিনিট সময় দিতে হবে। আপাতত তৈরী আছে এক প্লেট। কিছু পরোয়া নেহি! ঐ এক প্লেটই ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে একটা করে মোমো দিয়ে মুখশুদ্ধি করে নিয়ে দে দৌড় বোর্ডিং লাইনের দিকে। তবে তার মধ্যেই পাশের বইয়ের দোকান থেকে রিডার্স ডাইজেস্ট আর আউটলুক ট্র্যাভেলার পত্রিকার সাম্প্রতিকতম সংখ্যাদুটি তুলে নিতে ভুল হয় নি।ভিস্তারা আমার বেশ পছন্দের বিমানসংস্থা। মাঝে তিন বছরের কোভিডকাল বাদ না সাধলে এতোদিনে এরা ইন্ডিগো-কে বেশ কড়া প্রতিদ্বন্দিতার মুখে ফেলে দিতো বলেই আমার বিশ্বাস। কালো চামড়ায় মোড়া মোটা গদীতে ডুবে গিয়ে পরবর্তী দুঘন্টায় দিল্লী পাড়ি দিলাম বইয়ের পাতায় চোখ রেখে। রসনাতৃপ্তির আয়োজনও নেহাত মন্দ ছিল না। তবে দিল্লিতে নেমে মাত্র মিনিট পঁয়তাল্লিশের ব্যবধানে অমৃতসর উড়ান ধরার জন্য যা ছুটতে হোলো টার্মিনাল থ্রি-র অন্তহীন অলিন্দ বেয়ে, সে আর বলার নয়! তবে ভিস্তারা-র গ্রাউন্ডস্টাফ প্রায় পরমপ্রভু-প্রেরিত মেষপালকের মতো সযত্নে আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন প্রার্থিত বিমান অভিমুখে। সেই পাগডি-অধ্যুষিত উড়ানে যেই না ঢোকা, গড়গড়িয়ে বিমানের দরজা গেল বন্ধ হয়ে; আবার আকাশচারী হলাম সবাই।একঘন্টার সংক্ষিপ্ত উড়ান; পবিত্রশহরগামী বলেই বোধ হয় খাবারটাও নিরামিষ দিল। মেজাজটা ঈষৎ খিঁচডে গেলেও বেশ নীচু দিয়ে ওড়ায় হরিয়ানা-পন্জাবের মাঠঘাট-সেচখাল-গ্রামগঞ্জ দেখতে দেখতে মন ভালো হয়ে গেল। বিমান অমৃতসরের মাটি ছুঁলো মসৃণভাবে।হিসেবমতো অমৃতসর পন্জাব-এর এক জেলাশহরমাত্র হলেও আন্তর্জাতিকস্তরে এর নিবিড় ধর্মীয়-সামাজিক-ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিমানবন্দরটি বেশ জোরদার.. সুন্দর.. গাম্ভীর্যপূর্ণ। এখান থেকে বার্মিংহাম-গামী আন্তর্জাতিক উড়ান চালু হয়ে গেছিল ভারতীয় বিমান-ইতিহাসের একেবারে ঊষাকালেই। বহু নিয়মিত ও চার্টার্ড ফ্লাইটের সতত আনাগোনা এখানে। ভ্রমণসূচী ঠিকঠাক জায়গা দিয়েই শুরু করেছি আমরা।মালপত্র পেতে দেরী হোলো না। বাইরে বেরিয়ে ড্রাইভারকে ফোন করতেই মিনিট দশেকের মধ্যেই ইনোভা ক্রিস্টা নিয়ে এসে হাজির ঝাঁকড়াচুলো বেঁটেখাটো চেহারার ড্রাইভার গৌরব। ঝটপট গাড়িবোঝাই হয়ে রওনা দিলাম চল্লিশ কি.মি. দূরে আটারি-ওয়াগা সীমান্তের উদ্দেশে। ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে তিনটে । ড. সুজন সরকার, বর্ধমান।

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
রাজ্য

কেন বাংলায় নিষিদ্ধ ‘দ্য কেরালা স্টোরি’? কি বলছেন মুখ্যমন্ত্রী ও সংঘ পরিবার?

বাংলায় দ্য কেরালা স্টোরি নিষিদ্ধ করেছে রাজ্য সরকার। নিষিদ্ধ ঘোষণার আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দ্য কেরালা স্টোরি তৈরি করে বিজেপি উদ্দেশ্য প্রণোদিত উসকানি দিচ্ছে। দ্য কেরালা স্টোরি নিষিদ্ধ করতে মুখ্যসচিবকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শান্তি সৌহার্দ্য বজায় রাখতেই এই পদক্ষেপ বলে খবর। যদিও বিজেপি ও হিন্দু সংগঠনগুলির দাবি, সংখ্যালঘু তোষণ করতেই দ্য কেরালা স্টোরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।সোমবার নবান্নে দ্য কেরালা স্টোরি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগেই অস্বস্তি ব্যক্ত করেন। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় এই সিনেমা নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেন। মমতার দাবি, ওরা বিভাজনের রাজনীতি করছে। কেন দ্য কাশ্মীর ফাইলস বানালো ওরা? এক শ্রেণীর মানুষকে কটাক্ষ করার জন্য। এখন কেরালা স্টোরি বানিয়েছে। ওটা সিপিএম-এর রাজ্য। আমি ওদের একেবারেই সমর্থন করি না। ওরা বিজেপি-র সঙ্গে চলছে।মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি মনোনীত কিছু তারকা তো বাংলাতেও এসেছিলেন। তাদের টাকা দেয় বিজেপি। তথ্য বিকৃত করে তারা নাকি বেঙ্গল ফাইলস নামে একটি ছবি বানাচ্ছে। আগে কাশ্মীর ফাইলস, তারপর দ্য় কেরল স্টোরি, এবার বাংলার মানুষদের তাতাতে বেঙ্গল ফাইলস তৈরি করা হচ্ছে। এভাবে বাংলাকেও অপমান করার চেষ্টা করছে। ওরা বলছে, সেভ বেঙ্গল। কেন? শান্তিপ্রিয় একটা রাজ্য বাংলা। বিজেপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে কেন?তবে মুখ্য়মন্ত্রীর সিনেমা নিষিদ্ধ ঘোষণার পর বিজেপি ও সংঘ পরিবার একযোগে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে। দ্য কেরালা স্টোরির বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী আইসিসকে সমর্থন করছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষে সমর্থন করছেন। আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দাবি, সত্যি ঘটনাকে আড়াল করতে চাইছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক টিকিয়ে রাখতেই এই পদক্ষেপ। বাঙালি হিন্দুদের অস্তিত্ব বিপন্ন নিয়ে সিনেমা হওয়া উচিত বলেও মনে করে সংঘ পরিবার। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সাংগঠনিক পর্যায়ে বৈঠক করছে আরএসস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

মে ০৯, ২০২৩
নিবন্ধ

ফারাও এর দেশ ঘুরে... (ভ্রমণ কাহিনী) পঞ্চম পর্ব

পরের দিনের আমাদের গন্তব্য ছোট্ট শহর লাক্সর। এই শহর টি কায়রো থেকে প্রায় ৭০০ কি.মি দূরে।আমরা প্লেনে করে এখানে চলে এলাম।তাই সময় বেশ কম লাগলো। মিশরের অন্তর্দেশীয় ফ্লাইটের জন্য যে প্লেন গুলো চলে, তার symbol দেখলেও অবাক হয়ে যেতে হয়। মিশরীয়দের প্রিয় হরাস দেবতার চোখ আঁকা থাকে। এই হরাস একে দেবতা তায় আবার বাজ পাখি, তাই উচ্চতার সাথে উড়ান দিতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এর জন্যই মিশরকে এত ভালো লাগে। এরা সূক্ষ্মতার উপর জোর দেয় বেশি। লাক্সর শহরের এয়ার পোর্ট টি খুব সুন্দর। ছোট্ট হলেও খুব পরিষ্কার আর রুচি সম্মত। এখানে এলেই বোঝা যায় , যে আমরা মিশরীয় সভ্যতার একদম কেন্দ্র স্থলে চলে এসেছি। এখানে আমরা একটি বোট এ থাকব। দু দিন এখানেই ঘুরব। তারপর নৌকা চলতে থাকবে। আর যতক্ষণ এ নৌকা দাঁড়িয়ে থাকবে ততক্ষণ নীল নদের উপরেই, তার পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকবে।লাক্সর এর পুরনো মিশরীয় নাম হল থীবস। শহরের ঝকঝকে ভাব না থাকলেও মাটির গন্ধ ভাল ভাবেই রয়েছে। আর এটিই হল লাক্সরের বিশেষত্ব। আর মিশরের সব বড় শহরের মত এখানেও, তার প্রাণ কেন্দ্রটি হল নীলনদ। নীল নদের দুই পাড়ে প্রচুর ক্ষেত, আর বড় বড় গাছ। আগে প্রতি বছর নীলনদে যে বন্যা হত, সেই বন্যার ফলে তৈরি হওয়া প্লাবন ভূমিতে চাষ করা হত, আর এখনও তাই হয়। মিশরীয় ভাষায় এই উর্বর মাটিকে বলা হয় কেমেত বা Kemet (land of black soil), আর বাকি মরুভূমি অঞ্চল কে (যা মিশরের প্রায় ৯০%) বলা হয় Land of Red soil ।লাক্সর এসে দেখা গেল, মিশরীয় সেচ ব্যবস্থার চেহারা। আমরা যে রাস্তা দিয়ে চললাম তার পাশ দিয়ে বয়ে চলছিল নীল নদের একটি ক্যানাল। রাস্তার দুই দিকে কুঁড়ে বাড়ি, যা আমাদের দেশের কথাই মনে করায়। তবে কুঁড়ে বাড়ির ছাদটি অন্যরকম। ওদের দেশে ছাদ সমান, আমাদের মত আটচালা style ওখানে নেই। চারিদিকে খেজুরের গাছ। গ্রামের ছোট বাচ্ছারা নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা করছে। কখনও কখনও আমাদের উপস্থিতি তে অত্যন্ত বিরক্তও হচ্ছে।এখানে আমাদের থাকার জায়গা , নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বড় নৌকা বা cruise। এটিকে নৌকা না বলে ছোটখাটো একটি শহর বলা উচিত। ঘর, বারান্দা, ছাদ, খাবার ঘর, club, দোকান সব পাওয়া যায় এখানে। ছোট একটা জাহাজের মত। আমাদেরটির নাম ছিল Nile Quest । প্রত্যেকে নিজেরদের ঘরে এসে দেখলাম এলাহি ব্যবস্থা। একটা ভাল হোটেলের ঘরে যা যা থাকে, এখানেও সে সবই আছে। এখানে শুধু মাত্র একটি বোট নয়, বেশ কিছু বোট পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। একটির পর একটি পার করে নিজেদের টায় আসতে হয়।ভুল করলে কিন্তু অন্যদের বোটে চলে যাবার সমুহ সম্ভাবনা।প্রতি ঘরে একটি করে জানলাও আছে নদীর দিক করে।তবে সেটি নৌকা চলার পর উপভোগ করা যাবে । প্রথমে তো সেই জানলা খলার চেষ্টা করে প্রায় ভেঙেই দিচ্ছিলাম , পরে বুঝলাম ঘরে A.C চলায় জানলা খোলা রাখা যাবেনা । দুপুরে এলাহি খাবার খেয়ে আমরা রওনা দিলাম কারনাক ও লাক্সরের মন্দিরের উদ্দেশ্যে।কারনাক মন্দিরকারনাক ও লাক্সর এর মন্দির দুটিই মিশরের পুরনো রাজধানী থীবস এ অবস্থিত। প্রাচীন মিশরকে সাধারণ ভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । আপার ও লোয়ার মিশর বা উত্তর ও দক্ষিণ মিশর। আগে এই দুই ভাগ আলাদা আলাদা ভাবে বিচরণ করত, তাদের সব কিছু আলাদাই ছিল। পরে ফারাও মেনেস এই দুই ভাগ কে এক করেন ও সমগ্র মিশরের একটিই রাজধানী প্রতিষ্ঠিত করেন। এই ঘটনাকে ছবিতে প্রকাশ করা হয়েছে, আপার বা উত্তর মিশরের Symbol হল পদ্ম আর লোয়ার বা দক্ষিণ মিশরের symbol হল প্যপিরাস। এই দুই এর মিলনই হল দুই মিশরের মিলন। এর ছবি দেখলে আমাদের পুরানের সমুদ্র মন্থন এর গল্প বা তার ছবি কল্পনায় ভেসে ওঠে।কারনাক মন্দিরের প্রবেশর পথ, দু দিকে সারি দিয়ে ছাগল জাতীয় পশুর মূর্তিআমরা প্রথমে গেলাম কারনাক এর মন্দিরে। কারনাক মন্দির চত্বরটি অতিকায় এবং বহু বছর ধরে বানান। এখানে বিভিন্ন রাজা বা রানীর কীর্তি আলাদা আলদা করে বোঝা যায়। এঁদের মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হলেন রামেসিস দ্বিতীয় বা Great Ramesis। এই মন্দিরে ঢোকার রাস্তার দু দিকে সারি সারি Ram বা বড় ছাগল জাতীয় পশুর মূর্তি আছে। আর সেই ছাগল গুলির প্রতিটির সামনে একটি করে ছোট আকারের রাজার মূর্তি আছে। যেন রাজাকে রক্ষা করছে এই পশুটি । রাজা বলে মনে হবার সম্ভাবনা কম ছিল, তবে শুধু হাত এর অবস্থান দেখে বোঝা যায় (অর্থাৎ, হাত দুটি অসিরিস এর মত করে রাখা) । এরপরের প্রশ্ন আসে, কোন রাজার এত মূর্তি গড়া হল? ঐতিহাসিকরা অনেক খুঁজে একটি মাত্র মূর্তির বুকে রাজার নামাঙ্কিত খারতুশ দেখতে পান। এই খারতুশ থেকে প্রমাণ হয় যে মূর্তি গুলি সব ই ফারাও রামেসিস দ্বিতীয়র।এই মূর্তিতেই রাজার বুকে চিহ্নিত খারতিশের মধ্যেই দ্বিতীয় রামেসিসের নাম পাওয়া যায়, খারতুশখারতুশ হল মিশরীয় একটি প্রতীকের মত। ডিম্বাকৃতি আকারের একটি ফলক মত। যার মধ্যে মিশরীয় ভাষায় কিছু বিশেষ নাম বা অর্থ কে লেখা হয়। আজকাল কার দিনে লেখার মধ্যে Highlight করার মত। এই বিশেষ জায়গা গুলতেই সাধারন ভাবে রাজার নাম লেখা থাকত। বিভিন্ন রাজার বিভিন্ন খারতুশ হত। আর কারনাকেও এই খারতুশ দেখেই রামেসিস এর নাম জানা গেছিল।এরপর আমরা একের পর এক চমক পেতে পেতে মন্দিরের ভিতরে যেতে শুরু করলাম। যত এগোতে লাগলাম, তত অবাক হওয়া বাড়তে লাগল। প্রতি কোনায় এমন সব জিনিস রয়েছে যে মনে হচ্ছিল কোন দিকে আগে যাব কোনটায় যাবনা। যাই হোক, শুরুতেই চোখে পড়ল পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট অবেলিস্ক। অবেলিস্ক হচ্ছে, পাথরের তৈরি একটি মিনার বা পিলার। সাধারণ ভাবে এক একটি অবেলিস্ক এক একটি গোটা পাথর থেকে তৈরি হয়। অর্থাৎ সব অবেলিস্ক ই এক একটি monolith। অবেলিস্ক গুলি বানাতে বানাতে যদি কোন ভাবে পাথরে ফাটল দেখা যেত বা ভুল কোন লেখা হয়ে যেত, তাহলে সেই পাথরের পিলারটি সম্পূর্ণ ভাবে বাতিল করা হত। অবেলিস্ক, রাজাদের নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটা প্রক্রিয়া মাত্র। যত ক্ষমতাশালী রাজা, তত বড় অবেলিস্ক। অবেলিস্ক সাধারন ভাবে মন্দিরেই থাকত। প্রাচীন ভারতে যেমন মন্দিরের চূড়া বা মসজিদের মিনারকে লম্বা হতে দেখা যায়, তেমনি মিশরে অবেলিস্কের লম্বা হবার রীতি ছিল।এর কারণ অবেলিস্ক কে দূর থেকে দেখে পথ চলতি মানুষ বুঝতে পারবেন যে ওইখানে একটি মন্দির আছে, ফলে রাতে থাকার জায়গা ও খাবার দুই ই পাওয়া যাবে। প্রতিটি অবেলিস্ক কোন রাজা বা রানীকে উৎসর্গ করে তৈরি করা হত। তাঁদের সবার কীর্তি অবেলিস্কে লেখা থাকত।কারনাক মন্দিরে রানী হাতসেপ্সুত ও তাঁর বাবা থুতমস দ্বিতীয়ের অবেলিস্ক রয়েছে। রানী হাতসেপ্সুতের অবেলিস্ক টি আজও এত সুন্দর ও নিখুঁত যে মনে হয়, computer এর print করা মনে হয়। তিনি নিজের বাবাকে সম্মান দেখানোর জন্য, নিজের অবেলিস্কটি একটু ছোট করে তৈরি করেন। অবেলিস্ক গুলি সব গোলাপি রঙের granite পাথরের তৈরি।তাই প্রতিটিই একটু লালচে বা গোলাপি রঙের দেখতে। এই পাথরগুলি খুব সম্ভবত লাক্সরের কাছে আসয়ান বা Aswan থেকে নিয়ে আসা।অবেলিস্ক, কারনাক মন্দিরের ভিতরকারনাক মন্দির যখন তৈরি করা হয় তখন তার ছাদ ছিল। তবে আজ আর সে বর্তমানে নেই, তবে তার কিছু আভাস আজও পাওয়া যায়। ছাদ থাকায় মন্দিরে সরাসরি সূর্যের আলো প্রবেশ করার উপায় ছিলনা, তাই মন্দির দেওয়ালে জানলা করা হত। সাধারন ভাবে মরুভুমি অঞ্চলে বাড়িতে জানলা থাকেনা, তাই কারনাক এর মন্দিরের গায়ে জানলা থাকায় আলো আসার কথাটিই মাথায় আসে। সেই জানলা আজ ও বর্তমান। আর এই জানলাগুলি ছিল অনেক উঁচুতে ফলে আশা করা যায় শুধু আলর জন্যই এগুলি বানানো।এই মন্দিরে বিশাল আকৃতির পিলার দেখতে পাওয়া যায়। তার প্রতিটির মাথায় বিভিন্ন কারুকাজ করা। এই উঁচু পিলার গুলির জন্যই এই মন্দিরকে hypostyle pillar temple বলে। তবে এটিকে শুধু মন্দির না বলে মন্দির গুচ্ছ বলা উচিত।কারনাক মন্দিরে, পিলারের উপরে রঙিন হিয়েরগ্লিফ লেখা।এই মন্দিরের দেওয়ালে, পিলারে বা ছাদে ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় রঙ্গিন ছবি আঁকা ছিল। আজও কিছু অংশে সেই সব ছবি কিছুটা হলেও দেখা যায়।অপূর্ব সব প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার । যা আজ থেকে প্রায় ৪০০০ হাজার বছর আগে আঁকা হলেও অমলীন। আর প্রতি পিলারে হিয়েরগ্লিফের লেখা। এ সব দেখে একটাই প্রশ্ন মাথায় আসে যে, মিশরীয়রা এত কি লিখেছিলেন? এত কি কথা থাকতো বলার জন্য।ছাদের অংশ বিশেষ এতটাই উঁচুতে যে ক্যামেরা বন্দি করা প্রায় অসম্ভব। তবুও চেষ্টা করে গেছি। আর খালি অবাক হয়েছি যে এত সুন্দর রঙের ব্যবহার ওঁরা শিখল কথা থেকে। কি করে বুঝল যে এই সব রঙ লাগালে তা থাকবে হাজার হাজার বছর। জানি না, তবে প্রশ্ন থেকেই যায় মনের মধ্যে।এই সব দেওয়াল চিত্র বা hieroglyph এর মধ্যে একটি চিত্র বার বার চোখে পরতে লাগল । একটি হাঁস জাতীয় পাখির উপর লাল রঙের গোল সূর্য । মিশরীয় ভাষায় যাকে বলে সা-রা (Sa-Ra) । যার প্রকৃত অর্থ Son of God Raa বা সূর্য দেবের পুত্র।প্রাচীন মিশরের প্রধান আরাধ্য দেবতা ছিলেন সূর্যদেব বা রা। তাই মিশরের রাজারা সবাই নিজেদের সেই দেবতার পুত্র বলে পরিচয় দিতেন। এই ধরনের অভ্যাস বোধহয় পৃথিবীর সব সভ্যতাতেই দেখা যায়। যেমন ভারতে সম্রাট অশোক নিজেকে দেবতার প্রিয় , শ্রী প্রিয়দর্শী (Devanam piya , Piyadassi) বলেছেন। বা পরবর্তী সময়ে আরও অনেক সম্রাটদেরই এই রকম পদ্ধতি গ্রহন করতে দেখা যায় । এর ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাহল, এর দ্বারা রাজারা প্রজাদের কাছে নিজেদের গ্রহন যোগ্যতা তৈরি করতেন।এই মন্দিরের ভিতরে একটি বড় জলাশয় আছে। মরুভুমির মাঝে অত বর জলাশয় দেখে বঝা যায় যে রাজারা প্রজাদের খেয়াল রাখতেন। এই জলাশয়ের পাশে একটি বড় পাথর আছে , যার আকার খানিকটা Scurb বা মিশরীয় দেবতা খেপরীর মত। লোকমত অনুযায়ী এই খেপরী কে ছুঁয়ে যদি ৭ বার ঘোরা যায় তাহলে মনের ইচ্ছা পূর্ণ হয়, কারন খেপরী হলেন মিশরীয়দের ভাগ্য দেবতা। এর জন্যই যে কোন সমাধি ক্ষেত্রে খেপ্রির ব্যবহার চোখে পরার মত। এর সাথেই দেখা যায় বড় বড় চওড়া দেওয়াল, যাতে অপূর্ব কারুকাজ করা বা লেখা। আসলে মিশরীয়দের হিয়েরগ্লিফ লেখা গুলি ত ছবির মতই দেখতে, তাই কারুকাজ, না ছবি, না লেখা বুঝতে ভুল হয়ে যায়। আর আশ্চর্য হই এই ভেবে যে লৌহ যুগের আগে কিভাবে এত নিখুঁত কাজ করা সম্ভব।কারনাক মন্দিরের দেওয়ালএরপর আমরা পৌঁছলাম লাক্সর মন্দিরে। বর্তমান শহরের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এই মন্দির আর মনে হচ্ছে যেন প্রাচীন ও আধুনিক যুগের মধ্যে যোগাযোগ সুত্র তৈরি করছে। সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই এক টানে নিয়ে যাবে ৪০০০ বছর আগে।চোখের সামনে ভেসে উঠবে ফারাওদের সময়কাল। আসলে মিশরে বেড়াতে আসার পুরোটাই যেন Time Machine এ চড়ে ঘুরে বেড়ানো। আর সেই যাত্রায় সাহায্য করবে পাশ দিয়ে বয়ে চলা নীল নদ।লাক্সর মন্দির সন্ধ্যের আলোয়এই মন্দিরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম একটি রাস্তার মত অংশ সদ্য আবিষ্কৃত হয়ে পরে রয়েছে। জানলাম এই রাস্তা টিকে বলা হয় স্ফিংক্স রাস্তা বা Sphinx Avenue। এই রাস্তার উপর এখনও ঐতিহাসিকরা কাজ করছেন। রাস্তাটির দুই পাশে আজ অবধি ২৪৮ টি স্ফিংক্স এর মূর্তি পাওয়া গেছে এবং খনন কাজ এখনও চলায় আরও পাবার সম্ভবনা আছে। জানা গেল যে প্রাচীন কালে কারনাক ও লাক্সরের মন্দির দুটি এই রাস্তা দিয়ে যুক্ত ছিল। বছরে একবার উৎসব হত ১৪দিন ধরে। অনুষ্ঠান শুরু হত কারনাক এর মন্দিরে আর শেষ হত লাক্সরে। এই রাস্তা দিয়েই তখন উৎসবের মিছিল চলত। কিন্তু বর্তমানে এর অনেকটা অংশ ঢাকা পরে গেছে, ফলে তার উপর বাড়ি, শহর মানুষজনের বসতি শুরু হয়ে গেছে আর মানুষ ভুলে গেছে এই রাস্তার কথা। হয়ত হাওয়া তে কান পাতলে এখন উৎসবের শব্দ, ছেলে মেয়েদের হাসি শোনা যাবে, তবে আজ আর তাদের কথা শোনার সময় নেই কারোর। নিজেদের স্মৃতি নিয়ে একাই বসে আছে স্ফিংক্সগুলি।মন্দিরে ঢোকার আগেই একটা ছোট মন্দির দেখলাম। একজন দেবী দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু মূর্তির মাথা নেই। দেবীর পোশাক দেখে মনে হয় যে কোন গ্রীক বা রোমান দেবী। শুনলাম দেবী হলেন Aphrodite, গ্রীকদের সৌন্দর্য ও বিদ্যার দেবী। এটি দেখে বোঝা যায় যে, রোমানরা এই অঞ্চলে এসে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছিলেন। মিশরীয় শিল্পের সাথে মিলিয়ে তাদের শিল্পকেও স্থান দেবার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে খুব একটা সফল হতে হয়েছিলেন সে কথা বলা শক্ত।লাক্সর মন্দিরের ভিতরলাক্সরের মন্দিরেও রামেসিস দ্বিতীয়র অবদান খুব স্পষ্ট। এই মন্দিরের ভিতরে একটি মসজিদ আছে। এটি বহু পুরনো, যবে থেকে আরবরা এই অঞ্চল দখল করেন, সেই সময় থেকে এটি আছে। আজও সেখানে প্রার্থনা হয়। আমাদের সামনেই শুরু হল সন্ধ্যের আজান। তৈরি হল এক অদ্ভুত অনুভুতি। বাড়ি থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে, সুদূর মিশরে, নীল নদের ধারে ৪০০০ বছর পুরনো লাক্সর মন্দিরে বসে সূর্যাস্ত দেখা আর সাথে মিঠে আজানের সুর। একেই বোধহয় বলে সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের উদাহরণ । পরিবেশ টা হয়ে উঠল মহময়ী। সূর্যাস্তের কমলা আভা সারা আকাশ জুড়ে, আর পূব আকাশে আঁধারের ঘোরে ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে বাঁকা চাঁদ। পাশের নীল নদ সন্ধ্যের কমলা কালো রঙ মেখে বয়ে চলেছে নিজের ঠিকানায়। সেই মুহূর্তে শতাব্দী প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার মন্দির, যাকে পারথেনন বলেও ভুল হয়, সেখানে আজানের সুরে আর পাখির গানে সন্ধ্যে নামছে। আর সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এক সাথে গ্রীক-রোমান, মিশরীয়, ইসলামীয় আচারের মিশ্রণ। কি যে অদ্ভুত এই মিশ্রণ সে না দেখলে বোঝা যাবেনা।লাক্সর মন্দির আমন দেব ও তাঁর স্ত্রী দেবী মুট এর জন্য উৎসর্গিত। এই মন্দিরের মধ্যে ফারাও তুত-আঙ্খ-আমন ও তাঁর স্ত্রী আঙ্খ-সে- আমন এর মূর্তি দেখলাম। মূর্তি দুটি মার্বেল পাথরের তৈরি, তবে সমান উচ্চতার। এর থেকে বোঝা যায় যে রাজা অত্যন্ত উদার মনের। কারন মিশরে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ বলে রাজা ও রানীর মূর্তিতেও উচ্চতার ফারাক রাখা হত। রানীর মূর্তি হত উচ্চতায় ছোট আর সাধারণ ভাবে রাজার পাশে রানীর বসার ব্যবস্থা থাকতনা।এই মন্দিরে খুব স্পষ্ট দেবী Sashet এর মূর্তি দেখলাম। এই দেবী মিশরীয়দের বিদ্যা আর কারিগরি বিদ্যার দেবী। খানিকটা ভারতীয় দেবী সরস্বতীর মত।এখানে দেখলাম রামেসিস দ্বিতীয়র মূর্তির পিছনে তাঁর অবেলিস্ক টি, মূর্তিটিকে যেন সহায়তা করছে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য। মন্দিরের ভিতরের অংশে রঙ দিয়ে আঁকা ছবি দেখা গেল। কিছু ছবিতে, ইউরোপীয় ধাঁচ লক্ষ্য করা যায়। বোঝা যায় যে রোমানরা এখানে এসে এদের ধর্ম কে মুছে ফেলতে চেয়ে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচার করতে চেয়েছেন। তবে কত টা সফল হয়েছে সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। শিল্প ও ধর্মের ক্ষেত্রে এই অদ্ভুত আচরণ সারা পৃথিবীতেই বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়। মানুষ হয়েও এত বর্বর আচরন ভাবা যায়না। বা হয়ত বলা উচিত মানুষ বলেই এতটা অনাচার করতে পেরেছে ও সহ্য করতেও পেরেছে। তবে আজ আমরা একে যেভাবে দেখছি, সেটি একটি অন্য এক রূপ প্রকাশ করছে। মিশরীয় দেবতার মন্দিরে একদিকে মসজিদে শোনা যায় আজানের সুর, অন্যদিকে যীশু উঁকি দেন দেওয়ালের ফাঁকে। দেবতায়- ঈশ্বরে কোন ভেদ নেই, ভেদাভেদ শুধু মানুষের মনে, আর মনের মধ্যে। তাই বোধহয় দেবতারাও আজ মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইছেন আমাদের থেকে।কিছু সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে ফিরে এলাম আমাদের নৌকাতে। মনের মধ্যে শুধু জ্বলতে থাকল লাক্সার মন্দিরের ভিতরের পরিবেশ। মনে হতে লাগল, যদি হতে পারতাম ওদের দলের একজন, থেকে যেতাম এই শহরেই, জীবনের বাকি অংশটা কাটিয়ে যেতাম।

ডিসেম্বর ০৩, ২০২২
নিবন্ধ

নতুন জীবন (ছোট গল্প)

সময় মানুষকে ভাবতে শেখায়, নতুন কিছু করতে শেখায়। জীবনের স্রোতে অনেক আপনজন দূরে সরে যায় আবার অনেক দূরের মানুষ কাছের হয়ে ওঠে। মানুষের মনে অনেক সময় দ্বন্দ্ব চলে আপনজনের দূরে চলে যাওয়ায় দুঃখ করবে না নতুন যাকে আপন করে পেল তাকে নিয়ে আনন্দ করবে।আমার গল্পের প্রধান চরিত্র অসীমা দেবীর মনেও এই মূহুর্তে সেরকমই চলছে।ফোনে কথা বলার পর চুপচাপ বসে আছেন চোখের কোলে জল অথচ মুখে যেন নিজের মত প্রকাশের আনন্দ। এমন সময় তিতাস এসে জিজ্ঞাসা করলো কে ফোন করেছিল মা? দাদা?আবার সেই বাড়ি বিক্রির কথা বলছিল? তুমি আজ বলে দিয়েছো তো? এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।তোর কি মনে হয়? আমি বলতে পারবোনা?আজ আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি আমাকে নিয়ে তোদের এত চিন্তা করতে হবে না। আমার জন্য টাকাও পাঠানোর দরকার নেই। আমি যেটুকু পেনশন পাই তাই দিয়ে আমার একার চলে যাবে। আর আমার বাড়ি আমি কি করব সেটা আমি বুঝে নেব। তোমাদের ও নিয়ে ভাবতে হবে না।ওরা আসবে দেশে সামনের সপ্তাহে; এবার এখানে থাকবে বলছিল, আমি বলেছি এখন তো ঘর নেই তোমাদের থাকার মত , তোমরা বরং হোটেলেই উঠো না হলে বৌমার বাপের বাড়িতে। আমার সব ঘরে এখন মেয়েরা থাকে। কথা শুনে মনে হল একটু রেগে গেল, তা যাক গে। আমার নামে যখন বাড়ি তখন আমি বুঝে নেব।এই মেয়ে গুলো না থাকলে দুবছর আগে কোরোনা কালে আমার কি হতো একবার ভাব। আর তোর বাবা যখন হঠাৎ রাত্রি বেলা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তখন তো এই মেয়েরাই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সব করে ছিল। তুই খবর পেয়ে তারপর তো এলি, আর তারা তো টাকা পাঠিয়ে দায়িত্ব মুক্ত। তোর বাবাকে বাঁচাতে পারিনি সেটা অন্য ব্যাপার কিন্তু এরা প্রতি মূহুর্তে আমাকে যেভাবে সাহায্য করছে আমি এদের কাছে ঋনী।তোর মনে আছে তোর দাদা বিদেশ চলে গেল তখনই কেমন ফাঁকা লাগত বাড়িটা? তুই তখন কলেজে পড়ছিলি। সারাদিন কলেজ তারপর পড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতিস। মাঝে মাঝে তোর বন্ধুরা আসলে আমার খুব ভালো লাগত। তারপর তুই পাশ করে চাকরি নিয়ে চলে গেলি। একে একে তোদের দাদু, ঠাম্মা ও চলে গেলেন তখন বাড়িটা গিলে খেতে আসত। যদিও তোদের বাবা ততদিন রিটায়ার্ড করে গেছে, তবুও দুই বুড়ো বুড়ি আর কতক্ষণ ভালো লাগে। ঠিক সেই সময় তোর বন্ধু বিতানের দিদির কথা তুই আমাকে ফোন করে জানালি। আমার তখন মনে হলো ঈশ্বর যেন ওকে পাঠিয়েছিলেন আমাদের একাকিত্ব কাটানোর জন্য। তখনই আমি আর তোর বাবা ঠিক করলাম আমরা উপরে থাকব আর নিচের ঘর গুলোতে মেয়েদের পেয়িং গেস্ট রাখবো,সেই শুরু। তারপর তোর বাবার অসুখের সময় মেয়ে গুলো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমাকে একমূহূর্ত একা ছাড়েনি। তুই তো দেখেছিস। তোর দাদা তো উনি চলে যাওয়ার পরে এলো।অথচ মানুষ টা ছেলে ছেলে করেই গেল। আর সেই যে ছেলে গেল আর এমুখো হয়নি। আমার যখন গলব্লাডার অপারেশন হলো তখন তো তোরা কেউ ছিলি না। আমাকে তো এই মেয়েরাই পালা করে করেছে সব। মায়ের মুখে এই কথা শোনার পর তিতাসের মুখটা কালো হয়ে গেলো। মাকে জড়িয়ে ধরলো।অসীমা দেবী বলতে থাকেন, এই মেয়েরা না আসলে জীবনের মানেটাই বুঝতাম না। আমারও যে গুন আছে আমিও যে কিছু করতে পারি জানতাম না। তোর দাদু ঠাম্মা তো আমি যে কিছু করতে পারি বোঝেই নি বা বুঝলে ও স্বীকার করেননি। আর তোর বাবাও তাই। আমি সারাজীবন শুনে এলাম আমি নাকি অকম্মা।তোরা ছেলে মেয়েরাও কোনো দিন বলিসনি কিছু। অথচ কোরোনার সময় যখন আমি ওদের রান্না করে খাওয়াই তখন ওরা বলে আমি নাকি অসাধারণ রান্না করি। টিনা বলে যে মেয়েটিকে আমি এখানে থাকতে বলি। হঠাৎ লকডাউন হওয়ার ফলে বাড়ি যেতে পারে নি আবার যেখানে থাকত তারাও থাকতে দেয়নি। আমি তখন ওর বন্ধু দিয়াকে বলি আমার এখানে নিয়ে আসতে।ও এসে আমার রান্নার প্রশংসা শুনে বলে ইউটিউবে চ্যানেল খোলার কথা।সব ওই ব্যবস্থা করে দেয়। প্রতি সপ্তাহে একটা করে রান্না করতে থাকি। না বিশেষ কিছু নয়, আমার ঘরে যা আছে তাই দিয়ে চটজলদি অন্যরকম কিছু রান্না। ওরা সব রেডি করে। আমি শুধু রান্না করি। লকডাউনে অল্প সামগ্রী দিয়ে অনেক কিছু করতে শিখেছি্ আর সেগুলো ইউটিউবে ওরা দিয়েছে। আজ আমার সেই চ্যানেল কত মানুষ দেখে। কতজন কতকিছু শিখতে চায়। আমি নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। আমি এসব ছেড়ে সব বিক্রি করে ওদের হাতের পুতুল হতে পারব না।আমি তাই ঠিক করছি নিজের জন্য দুটি ঘর রেখে পুরোটাই মেস করে দেব।আর যারা বাইরে থেকে পড়তে আসছে অথচ টাকার ও অভাব আছে তাদের জন্য আমার এখানে বিশেষ সুবিধা থাকবে।মায়ের এই কথা শুনে তিতাস ও খুব খুশি হয়। মাকে বলে তোমার এই উদ্যোগে আমি তোমার পাশে আছি। এমন সময় পাওলি আর মধুরা আসে। ওরা চাকরি করে। ওরা কিছু টা কথা শুনতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করে কিসের উদ্যোগ নিচ্ছেন জেঠিমা?তিতাস ওদের সব খুলে বলে। ওরা তখন বলে আমরাও আছি আপনার সাথে সবসময়।অসীমা দেবীর মুখ আনন্দে ঝলমল করে ওঠে। ওদের সবাই কে জড়িয়ে ধরে বলেন ওরে কোরোনা অনেকের অনেক ক্ষতি করেছে আর আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে।শ্রীমতি রাখি রায়বর্ধমান

নভেম্বর ২৭, ২০২২
নিবন্ধ

ফারাও এর দেশ ঘুরে... (ভ্রমণ কাহিনী) চতুর্থ পর্ব

আগের রাতের ফালাফেল আর কোশারি খেয়ে রাতে স্বপ্ন দেখলাম আমি ফারাও খুফুর কাছে কাজ করি। আমায় তাঁর পিরামিড বানানর কাজে লাগান হয়েছে। শয়ে শয়ে শ্রমিক কাজ করে চলেছে। ঠিক যেমন Cleopetra ছবিতে দেখান হয়েছিল। আমাকে কি সব শক্ত অঙ্ক করার কাজ দেওয়া হয়েছে, যথারীতি সেটি না পারায় ক্ষুব্ধ খুফু আমার মৃত্যু দণ্ড দিচ্ছেন। এই অবধি দেখেই ভয়ে চোখ খুলে গেল। আর দেখলাম সকাল হয়ে গেছে, বুঝলাম গত রাতে খাবারটি একটু গুরুপাকই হয়েছিল। ভেবে হাসিও পেল আর একবার তখন ইচ্ছেও হল খুফুর সমাধির সামনে গিয়েই না হয় আরেকবার দাঁড়ানো যাক।যা ভাবা তাই কাজ, সকালের আলোতে পিরামিড দেখব বলে চলে গেলাম গিজা চত্ত্বরে। এই বারে অনেক বেশি সময় নিয়ে গেলাম। তবে দ্বিতীয় বারেও উৎসাহ কম হলনা। এবারে খুফু পিরামিডের উপর খানিকটা উঠলাম। যেখান দিয়ে এখন পর্যটক রা ভিতরে যেতে পারেন। তবে এতি মোটেও পিরামিডটির আসল দরজা নয়। এটি বোধকরি ডাকাত বা পিরামিডের লুটেরারা বানিয়েছিল। আসল দরজা অনেকটা উপরে । সেখান পর্যন্ত পৌঁছন বেশ কঠিন। ভাবতে অবাক লাগে যে ওই সময়ে কি করে এত বড় একটা পিরামিড বানাল । আর এটা দেখতে দেখতেই মনের মধ্যে প্রশ্ন পাক খেয়ে ওঠে, যে এত বড় একটা সৌধ সেই সময়ে বানানর জন্য বহু পরিমানে শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। আর খুব অত্যাচারী রাজা না হলে সেই বিশাল সংখ্যক শ্রমিক কে পরিচালনা করাও সম্ভব নয়। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাজা খুফু অত্যাচারী ছিলেন।ফারাও খুফুর পিরামিডএরপর আমরা খুফু পিরামিড এর পাশেই তিনটি সোলার বোট রাখার জায়গা দেখতে গেলাম। এর প্রতিটির আকার একদমই নৌকার মত । যা থেকে বোঝা যায় যে ওখানে নৌকাই রাখা হত। তবে এই নৌকা গুলির অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে সেগুলিকে সংরক্ষন করা যায়নি, শুধু মাত্র একটিকে, একটি জাপানী সংস্থা নিয়ে গেছে সংরক্ষন এর চেষ্টায়। খুফু পিরামিডের পিছনেই তিনটি রানিদের পিরামিড আছে। সেগুলির অবস্থা যদিও খুব ভাল নয়, তবুও তার একটির মধ্যে আমরা ঢুকলাম।গিজা চত্ত্বরে রানীদের তিনটি পিরামিদ। প্রায় ভেঙ্গে পরেছে, তাও ভিতরে যাওয়া যায়এগুলিতে ঢোকার জন্য আলাদা টিকিট লাগেনা। এগুলিও এই চত্ত্বরের বাকি পিরামিডগুলির মত ফাঁকা। তবে এর ভিতরে যাবার পথ টি বেশ কঠিন । পথ টি খুব সরু আর অনেকটা নীচে নামতে হয়। নীচে যেখানে দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা, সেখানে গেলে বোঝা যায় যে সেটি পিরামিডের ঠিক মাঝের অংশ। এখানে একটি বেদী মত করা আছহে যেখানে মমি কে রাখা হত। সেই জায়গায় দাঁড়াতে কেমন যেন মনে হল স্বর্গ থেকে রানী নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন তাঁর সমাধিতে আমাদের প্রবেশ।এর পাশেই রানী নেফেরথারির মন্দির রয়েছে । আমরা সেখানে গেলাম। এই মন্দিরে বেশ কয়েকটি ঘর রয়েছে। নেফেরথারি, পুরনো সাম্রাজ্যের একজন প্রধান রানী ছিলেন।মনে হল, যে সব রানীদের পিরামিডগুলি দেখলাম, তার মধ্যে রানী নেফেরথারির পিরামিড নিশ্চয়ই থাকবে। তবে কোন লিখিত কিছু নেই বলে হয়ত বোঝা যাচ্ছেনা।এরপর আমরা আবারো ফারাও খাফ্রেনের পিরামিড এর কাছে গেলাম। এই পিরামিডের সামনেই আছে রাজার mortuary temple । এই মন্দির এর পুরটাই প্রায় ভেঙ্গে গেছে, তবে অতীত এর সাক্ষী রূপে দাঁড়িয়ে আছে তার বড় বড় পিলার গুলো। যখন এর বিশালত্ত্বে অবাক হচ্ছি, তখন শুনলাম যে এই মন্দির বানানোর সময় আগে পিলার গুলি বানিয়ে নেওয়া হত। তারপর পিলার এর মাথা পর্যন্ত বালি দিয়ে ভর্তি করে দেওয়া হত । বালি ভরতি অবস্থায় মন্দিরের ছাদ ঢালাই করা হত। ছাদ শক্ত হয়ে গেলে ভিতরে জমানো বালি সরিয়ে নেওয়া হত। অভিনব পদ্ধতি। আজকের দিনে যেমন ভাড়া বেঁধে ঢালাই হয়, তার ই প্রাচীণ পদ্ধতি মনে হল। তবে এটা ঠিক যে এই সমস্ত কাজের জন্য বিপুল পরিমানে লোকবল থাকা প্রয়োজন। এর থেকেই বোঝা যায় যে মিশরীয় রাজারা প্রচুর সংখ্যায় ক্রীতদাসকে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করত।ফারাও খাফ্রেন এর Mortuary Templeএরপর আমরা গিয়ে দাঁড়ালাম সেই স্ফিংক্স এর সামনে। আগের দিন বিকেলের আলোতে ওঁর পুরো গরিমা ঠিক বুঝতে পারিনি। আজ পারলাম। এই স্ফিংক্স ই সগর্বে ঘোষণা করেন , I have seen Alexander, I have seen Ceaser, and Napoleon । কি সাংঘাতিক ঘোষণা, তবে প্রতিটি কথাই সত্যি। মিশরীয় মতে এই স্ফিংক্স এর ক্ষমতা প্রচুর।তাই জন্যই সব রাজা বা ক্ষমতাশালী রানী দের স্ফিংক্স মূর্তি পাওয়া যায়। আর পিরামিডের সামনে এর অবস্থানের কারণ হতে পারে পিরামিড কে সুরক্ষিত রাখা। তবে বর্তমানে বোঝা যায় যে রক্ষা করার কাজ টি স্ফিংক্স পারেন নি। কারণ সেখানে বাজে বুদ্ধি সম্পন্য মানুষের দৃষ্টি পরেছিল। এই গ্রেট স্ফিংক্স , রাজা খাফ্রেন এর মুখের আদলে তৈরি হয়েছিল । তবে পরবর্তী সময়ে স্ফিংক্স এর গর্ব কে চূর্ণ করার জন্য কোন এক রাজা তাঁর নাক ও মাথার মুকুট ভেঙে দেন । কিন্তু তাতে কি, সেই রাজা কে আজ হয়ত ইতিহাস বা মানুষ কেউ মনে রাখেনি, রেখেছে স্ফিংক্স কে। আর যত দিন পৃথিবীতে মানুষ থাকবে, ততদিন মানুষ তাঁকেই মনে রাখবে। ইতিহাসের যেন জ্বলন্ত সুত্র এই স্ফিংক্স । শোনা যায় ব্রিটিশরা মিশরে কাজ করার সময়ে নাকি স্ফিংক্স এর নাক টি খুঁজে পান। তারপর সেটি ইংল্যান্ড এ নিয়ে যান ও বর্তমানে সেটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে।গ্রেট স্ফিংক্সস্ফিংক্সকে শেষ বারের মত কুর্নিশ করে আমরা বিদায় নিলাম। প্রতিজ্ঞা করে এলাম যে আবার ফিরে আসব। হতে পারে তার জন্য বছর বছর অপেক্ষা করতে হল। তবে তাতে কি, তাঁর কাছে ফিরে আসার জন্য কোন সময়ই বেশি নয়। আর ফিরে আমায় আসতেই হবে।শ্রেয়া ঘোষ (বর্ধমান)ক্রমশ...

নভেম্বর ২৬, ২০২২
নিবন্ধ

ফারাও এর দেশ ঘুরে... (ভ্রমণ কাহিনী) তৃতীয় পর্ব

পরের দিনের প্রথম গন্ত্যব্য হল Cairo Museum। সত্যি কথা বলতে এত বড় মিউসিয়াম আমি আগে দেখিনি। শুনলাম এই মিউসিয়াম ভাল ভাবে পুরোটা দেখতে হলে প্রায় এক সপ্তাহ লাগবে। অত সময় আমাদের নেই, বোধকরি আমাদের মত যারা এখানে বেড়াতে আসেন তাদের সবার ক্ষেত্রেই এক সমস্যা ঘটে। তাই আমাদেরও ইচ্ছে যে অল্প সময় যতটা বেশি দেখে নেওয়া যায়। এই মিউসিয়াম ১৫০ থেকে ২০০ বছরের পুরনো। এটি দুটি তলায় ভাগ করা। নীচের তলায় সময়কাল ধরে (period wise) ঘর সাজানো রয়েছে, যেমন Old Kingdom, Middle Kingdom, New Kingdom ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় তলায় ঘর সাজান হয়েছে বিভিন্ন বিষয় অনুযায়ী, যেমন sarcophagus room, animal mummy room ইত্যাদি। তার মধ্যে দুটি ঘর হল বিশেষ আকর্ষণীয়, - Pharao Tut-Ankh-Amun এর ঘর, আর Royal Mummy room।কায়রো মিউজিয়ামমমি রুম ভাবতেই মনে পড়ে গেল, একটি বই এ পড়া সেই বিচিত্র অংশটির কথা। তখন ১৯ শতকের সময়। মিশর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ।সেই সময় থেকেই মমির খোঁজ চলছে। রাজা বা ফারও দের মমি না হলেও যে রকমই মমি হোক না কেন তাকে সমাধি থেকে বের করে আনা হচ্ছে, পরীক্ষা করা হবে এই অজুহাতে। জাহাজ ভর্তি মমি ও অন্যান্য সামগ্রী চলে যাচ্ছে ইউরোপ। প্যারিসেও যেত মমি সেই সময়। প্যারিসের বিভিন্ন বাড়িতে সেই মমিকে দেখার জন্য টিকিট কাটা হত। যেন সার্কাস হচ্ছে। ভাবলেই কেমন মনে রাগ জন্মে যে, অসহায় একটি মমি, সে যে মানুষেরই হোক না কেন, শেষ ঘুমে ঘুমিয়ে আছে, তাকে সবার সামনে দেখানটাই যেন ছিল গর্বের। আবার ইংল্যান্ডে যৌবন ধরে রাখার জন্য কোন মানুষ নাকি বিচার দিয়েছিলেন মমি গুঁড় করে ট্যাবলেট বানিয়ে খাবার। তাই হাজার হাজার মমি ইংল্যান্ড নিয়ে আসতো, তাদের গুঁড়ো করা হত আর বিভিন্ন লতাপাতা মিশিয়ে বড়ি বানিয়ে খেত। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে কি পরিমানে ইতিহাসের অবলুপ্তি ঘটেছে সেই সময়, আর কি পরিমান কুসংস্কারে ভরা ছিল তখনকার ইউরপীয়দের মন। কি ভাবে সমস্ত সুত্র কে নষ্ট করা হয়েছে শুধুমাত্র মজার খাতিরে। যেমন নষ্ট হয়েছে আমাদের সাঁচি স্তুপ বা অমরাবতি স্তুপ। তাতেও শিক্ষিত ইউরোপিয়ানরা যা সংগ্রহ করেছেন, তা এই মিউসিয়ামে আছে। মমি রুম এ যাবার আগে তাই বার বার এই কথা গুলোই মনে পড়ছিল।মিউসিয়ামে ঢুকতেই প্রথমেই চোখে পড়ে রসেত্তা পাথরটি। এই পাথরটি খুব সাধরন দেখতে কিন্তু এর ক্ষমতা সত্যি ই অসাধারন। তবে কায়রো মিউজিয়ামে যেটি আছে,সেটি একটি replica, আসল পাথরের অংশটি লন্ডনে আছে। এর গল্প হয়ত অনেকেই জানে। আর যারা জানেনা তাদের জন্য বলি, এই পাথরটি প্রথম আবিষ্কার হয় ১৭৯৯ সালে। সেই সময়ে ফ্রান্সের সম্রাট নেপলিয়ান মিশরে যুদ্ধ করছিলেন। তাঁরই এক সৈন্য এটি খুঁজে পায়। এটি হয়ত তখন রাশিদ বা রসেত্তা নামের একটা শহরের কোন মন্দিরের দেওয়ালে পিলার হিসেবে ছিল। খেয়াল করে দেখা যায় সেখানে কোন একটি বিশেষ বার্তা তিনটি ভাষায় লেখা আছে। প্রথমটি মিশরীয় হিয়েরগ্লিফ, তারপরে দেমতিক (Demotic) আর শেষে গ্রীক। এই পাথরটি আবিষ্কার হবার পরই মিশরের ভাষা কে পাঠ করার চেষ্টা শুরু হল। ফ্রান্সের পর এই অঞ্চল যখন ব্রিটিশদের দখলে আসে তখন তারা এই পাথর নিয়ে লন্ডন চলে যান। আর সেখানেই পাঠোদ্ধার পর্ব শুরু। আর সেই দিন থেকে মানে ১৮০২ সাল থেকে ওই পাথর লন্ডনে আর ১৮২২ নাগাদ একজন ফ্রেঞ্চ লিপি বিশারদ পাঠোদ্ধার সম্পূর্ণ করেন। এই মিউসিয়ামে তার একটা replicaআছে, আরও একটা replica, আলেক্সান্দ্রিয়া তে রাখা আছে, যে অঞ্চল থেকে আসলে এই পাথরটিকে খুঁজে পাওয়া যায়।রসেত্তা পাথরে তিন ভাষার লিপিফারাও Tut-Ankh-Amun এর জন্য একটি বিশেষ ঘর আছে, সেই ঘরটিতে ছবি তোলা নিষেধ। সেই ঘরটিতে Howard Carter এর খুঁজে পাওয়া প্রায় সব জিনিসই আছে। শুধুমাত্র ফারাও এর মমি করা দেহ আর তার একটি কফিন বা সারকাফাগাস রয়ে গেছে আসল সৌধ তে, যা আছে Valley of Kings এ। এই বিশেষ ঘরটি ফারাও এর সৌধ থেকে পাওয়া ৪০৩০ টি জিনিস দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। ফারাও এর মমি করা দেহ থেকে ২০০ রকমের গয়না পাওয়া গেছে। সেগুলির বেশীরভাগই সোনা দিয়ে তৈরি। সোনার সাথে কিছু আধা-মুল্যবান (Semi-Precious) পাথর দিয়ে তৈরি। তার মধ্যে Carnelian বা Lapis Lazuli র ব্যবহার চোখে পড়ার মত। আমাদের হরপ্পা সভ্যতাতেও এই দুই পাথরের ব্যবহার বিশেষ ভাবে চোখে পরে, তার থেকে আবার আমরা এই সত্যে উপনীত হই, যে এই সমকালীন সভ্যতাগুলির মধ্যে যোগাযোগ ভাল ভাবেই রক্ষা করা হত। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও অবাক হয়ে যেতে হয় সেই সব গয়নার নকসা ও রঙ সমন্বয় দেখে। এই ঘরেই রয়েছে ফারাও তুত-আঙ্খ-আমন এর সেই বিখ্যাত সোনার মুখোস, যা ১১ কেজি সোনা দিয়ে তৈরি । এই মুখোস দেখলে সত্যিই মনে হয় যে রাজা তুত খুব অল্প বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। এ ছাড়াও আছে রাজার শেষ কফিনটি বা সারকাফাগাস। এটিও নিরেট ৩ টন সোনা দিয়ে বানান হয়েছিল। রাজার ব্যবহৃত দুটি ছুরি আছে, একটি সোনার আর একটি লোহার ।এই ছুরি দুটি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে, কারণ লোহা দিয়ে তৈরি ছুরি কি ভাবে লৌহ যুগের আগে পাওয়া যেতে পারে? এর কোন উত্তর সঠিক ভাবে জানা যায়না। কেউ বলে তখন লোহা ছিল, তখন প্রশ্ন জাগে তাহলে বাকি কোথাও তার ব্যবহার নেই কেন বা উল্লেখ ও নেই কেন? আবার কেউ বলেন পরে লৌহ যুগে কেউ আবার করে সমাধি খুলে সেই ছুরি রেখে আসেন। এও এক প্রকারে অসম্ভব, কারন মিশরীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী সমাধিস্ত হয়ে গেলে সেই সমাধি আর খোলা হবেনা কারণ তাতে আভিশাপ লাগবে। আর যদি কেউ খোলে সে হবে সমাধি চোর। সে সব জিনিস রেখে আবার একটা নতুন অপূর্ব ছুরি রেখে সমাধি বন্ধ করে বেরিয়ে আসবেনা। কারণ কার্টার যখন সমাধি আবিষ্কার করেন তখন তার মধ্যে প্রায় সবই সাজানো ছিল আর এও বিশ্বাস করা হয় যে তা আগে কখনই বের করা হয়নি।ফারাও, তুত-আঙ্খ-আমন এর দুটি ছুরিএছাড়াও আছে রাজার রাজমুকুট, যেখানে উচ্চ মিশর ও নিম্ন মিশরের দুই রক্ষাকর্তা দেবতার মুখ বসানো। এরা হলেন একজন কোবরা সাপ ও অন্যজন শকুনি পাখি । এদের চোখ গুলি স্ফটিক দিয়ে বানানো, আজও এতটাই উজ্জ্বল যে মনে হয় আমার দিকেই তাকিয়ে আছে যেন। আর সেই দৃষ্টি যেন অত্যন্ত রোষ পূর্ণ। তীব্র রাগ জমা করা আছে সেই চোখ গুলির মধ্যে।রাজা তুত এর প্রতিটি আঙ্গুল সোনার পাত দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিলো, এই ঘরে সেগুলিও শোভা পাচ্ছে। এর সাথে আছে রাজার বুকের উপর বসানো ছিল একটি সৌভাগ্যের প্রতীক, যা একটি গুবরে পোকার আদলে তৈরি । যাকে স্কারাব (Scarab) বা খেপ্রিও (Khepri) বলা হয়ে থাকে।Scarab বা Khepri, মিশরীয়দের সৌভাগ্যের প্রতীকএই ঘরের ঠিক বাইরে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে রাজার সব কটি সারকাফাগাস। সব কটি সারকাফাগাস ই সোনার পাত দিয়ে মোড়া, ভিতরে হয় পাথর বা কাঠ দিয়ে তৈরি। আর একটি আছে নিরেট সোনার। যার ওজন ৩ টন। অসম্ভব সুন্দর দেখতে সেটি আর আজও সমান উজ্জ্বল।ফারাও, তুত-আঙ্খ-আমনের গয়না ও রাজমুকুটএ সবের সাথে আছে রাজার ব্যবহার করা একটি সোনার চেয়ার। চেয়ারটিতে সোনা ও আধা-মুল্যবান পাথর আর ফিয়ান্স (Fience an art material made from burnt silica and natural colours, specially used in ancient Egypt, Mesopotamia and Harappa) দিয়ে খোদাই করা এক অপূর্ব চিত্র। সেই চিত্রতে দেখা যাচ্ছে, রাজা তুত বসে আছেন আর তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর রানী আঙ্খ-সনামন। রানীর হাতে সুগন্ধীর পাত্র। হয়ত সেই সুগন্ধী রানী লাগিয়ে দিচ্ছেন রাজার গায়ে, পরম যত্নে ও ভালবাসায়। কি সুন্দর একটি ভালবাসার ছবি ধরা রয়েছে সেই চেয়ারটিতে। আজ সেই ছবির মানুষ দুজন কেউ ই নেই, একদিন ছিলেন, তবু তাদের ভালবাসার ছবি রয়ে গেছে, যুগ যুগান্তর ধরে।সোনার সারকফাগাসএর সাথেও আছে আলাবাস্টর পাথরের তৈরি ৪ টি ক্যানোপিক জার, যার মধ্যে রাজার দেহের কিছু অঙ্গ ভরে রাখা আছে, আর সেই জার গুলিকে পাহারা দিচ্ছেন স্বয়ং দেবী ইসিস।ফারাও তুত-আঙ্খ-আমনের সোনার চেয়াররাজার সব কটি সারকাফাগাস ভাল ভাবে বন্ধ করার পর সৌধ তে বসানো ছিল, একটি কালো পাথরের বেদীর উপর, কালো পাথর ও সোনা দিয়ে তৈরি আনুবিস বা শেয়াল দেবতা। এই দেবতা হলেন পরবর্তী জীবনে যাবার দেবতা। এই হল সত্যজিতের সেই শেয়াল দেবতা।ফারাও এর সোনার সারকফাগাসের মুখHoward Carter বলেছেন যে, রাজা তুত এর সৌধতে প্রথম বার প্রবেশের সময় হঠাৎ করে আনুবিসের এই মূর্তি দেখে তিনি এক রকম ভাবে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। আনুবিস, রাজার পরবর্তী জীবনে প্রবেশের পথ কে সুগম ও সুনিশ্চিত করতে পাহারায় বসেছেন। সেখানে তাঁর নির্দেশ অমান্য করে, কার সাধ্যি। তবে সেই সাহস যখন কার্টার দেখিয়েছেন, সেটি যেন মোটেই আনুবিস পছন্দ করছেন না।আলাবাস্টার পাথরের ক্যানপিক জারএরপর আমরা Royal Mummy Room গেলাম। এই ঘরে ঢোকার জন্য আলাদা টিকিট লাগে। এখানে বর্তমানে ১২ টি রাজবংশীয় মমি রাখা আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফারাও রামাসেস দ্বিতীয়, রানী হাতসেপ্সুট, বা ফারাও আমনহটেপ এর। প্রতিটি মমিই খুব সুন্দর করে সংরক্ষণ করা। কাঁচের লম্বা বাক্সের মধ্যে রাখা। বুক থেকে পা অবধি পাতলা সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। কাপড়টি দিয়েই কোন কালে সেই মমি কে বেঁধে রাখা হয়েছিল, তার ফলে কাপড়টি বেশ মলিন হয়ে উঠেছে। এই ঘরে কথা বলা নিষেধ , ছবি তোলা ত বটেই। ঘুমন্ত রাজাদের সম্মান প্রদর্শনের জন্য। এখানে ঢুকে একটা অন্য রকম অনুভূতি হয়। হাজার হাজার বছর আগেকার রাজা, সম্রাটরা আমার সামনে পরম শান্তিতে, পরম বিশ্বাসের সাথে ঘুমিয়ে আছেন। একদিন যারা সমগ্র মিশর রাজত্ব করেছেন, আজ আমার সামনে শুয়ে। ইতিহাসকে এভাবে কোনদিন চোখে দেখা সম্ভব, ভাবতে পারিনি। বিজ্ঞান ও ইতিহাস এর এত সুন্দর মেল বন্ধন দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। অবাক হবার ঘোর কাটতে একটু সময় লাগল। তারপর ঘর টি ঘুরে দেখতে লাগলাম।দেবতা আনুবিস, যিনি ফারাও তুতকে পাহারা দিচ্ছিলেনসব থেকে সুন্দর ভাবে আছে ফারাও রামাসেস দ্বিতীয়ের মমি। তাঁর সাদা চেহারা, সাদা চুল তাঁকে সত্যিই গ্রীক দেবতার সাথে তুলনা করাতে বাধ্য করে। সত্যি মনে হয় যে এমন একজন মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে রাজত্ব করলে কি অসাধারণ হবে ব্যাপারখানা। চোখের উজ্জ্বলতাতেই ভক্তি এসে যেতে বাধ্য। এখানে একটা মজার ব্যাপার জানলাম। ফারাও রামেসেস এর হাত দুটি যেন একটু খোলা অবস্থায় রয়েছে, বুকের উপর লাগানো নেই। শোনা গেল যে, ফরাসী প্রত্নত্বত্তবিদের দল যখন এই মমি আবিষ্কার করেন ও সংরক্ষণের কাজ করছিলেন, তখন হঠাৎ রাজার হাত দুটি খুলে গিয়ে সোজা হয়ে যাবার চেষ্টা করে। প্রথমে সবাই খুব পেয়ে যান, তবে পরে বোঝা যায় যে, হয়ত রাজার দেহকে মমি প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরী হয়, তাতে মৃত শরীর শক্ত (Rigor Mortis) হয়ে যেতে থাকে।প্রত্যেকটি মমি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সংরক্ষিত। প্রায় প্রত্যেকটি মমির চুল, দাঁত, হাত-পা, নখ এতটাই স্পষ্ট আর পরিষ্কার যে মনেই হয়না তারা হাজার হাজার বছর আগে মৃত। এই রাজা, রানীদের দেখে বার বার একটা কথা খুব মনে হচ্ছিল যে, আমাদের দেশের ইতিহাসেও তো কত রাজা রানীর কথা পড়েছি শুনেছি। কিন্তু নিজের চোখে তাদের দেখার সুযোগ তো হয়নি বা ঘটার ও কথা নয়। তবে এই ঘরে শুয়ে থাকা রাজারা প্রত্যেকে ৪০০০ হাজার বছর আগে দাপটের সাথে রাজত্ব করেছেন, অথচ নিজের চোখের সামনে তাদের দেখতে পাচ্ছি। এই অনুভূতিটা খুব অন্য ধরনের। এই ঘরে এসে আবার যেন সময়ের হিসেব টা গুলিয়ে গেল। বার বার মনে হতে লাগল যে আমি বোধহয় টাইম মেসিনে চেপে ঘুড়ে বেড়াচ্ছি।এছাড়াও সারা মিউসিয়াম জুড়ে অসংখ্য সারকফাগাস, অসংখ্য মূর্তি দেখতে পেলাম। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রানী হাতসেপ্সুতের স্ফিংক্স মূর্তি। রাজা খুফুর একমাত্র ছোট্ট একটি মূর্তি। আর সেই রাজার মূর্তি যিনি পুরনো সাম্রাজ্যের পর উত্তর ও দক্ষিণ মিশর কে আবার এক সাথে যুক্ত করেছেন।আর আছে অসংখ্য আঁকা ছবি। তার মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ও আমার প্রিয় একটি আপনাদের দেখার জন্য দিচ্ছি।এত সুন্দর রঙ এর ব্যবহার এত বছর আগে হতে পারে, এ যেন ধারনার বাইরেএই ঘর থেকে বেরিয়ে আমরা আরও অনেক ঘরে গেলাম। সেখানে কোথাও পশু পাখির মমি করে রাখা আছে, কোথাও আছে হরেক রকম গয়না। আর অনেক মমির মুখোস দেখলাম। সেগুলি অনেক গুলি ই সোনার তৈরি। গয়নার নকসা দেখলে সত্যি ভাবতে ইচ্ছে করে যে মিশরীয়রা অপূর্ব গুণের অধিকারী ছিলেন।কায়রো মিউসিয়াম থেকে বেরিয়ে আমরা চললাম ঝুলন্ত চার্চ দেখতে। মিশরীয়দের পর খ্রিষ্টানরা মিশরের দখল নেয়, আর তারও পরে মুসলিম রা। বাইবেলের গল্প অনুযায়ী, ছোট্ট যীশুকে বাঁচানোর জন্য মা মেরী পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। সেই সময় কায়রোতে একটি ছোট্ট গুহাতে বেশ কিছু দিন ছিলেন। সেই জায়গাতেই তৈরি হয়েছে এই চার্চ। মিশরে, এই খ্রিষ্টানদের বলে কপটিক খ্রিষ্টান। চার্চটি অপূর্ব ।দেখে বোঝা যায় যে অনেক দিনের পুরনো চার্চ। ভিতরের সমস্ত আসবাব পত্র কাঠ ও হাতির দাঁতের। রঙিন কাঁচের কাজও খুব সুন্দর।ঝুলন্ত চার্চচার্চ থেকে বেরিয়ে আমরা গেলাম Citadel of Salah-i-Din দেখতে। ইসলামিক শাসনে আসার পর মিশরকে রক্ষা করার দায়িত্ব আসে মুসলিম সুলতানদের হাতে। তারা সব সময় ধর্ম যুদ্ধ (crusade) বা খ্রিষ্টান দের হাত থেকে মিশর কে বাঁচাতে চেয়েছে। এর জন্যই সুলতান সালাহ দিন পাঁচিল দিয়ে পুর শহরকে ঘিরে ফেলতে চান। আর তার ফলেই তৈরি হয় নতুন শহর বা সিটাডেল। বর্তমানে এই অঞ্চলটি মিশরের সামরিক বাহিনীর হাতে তবে এই সিটাডেলের মধ্যে থাকা দুটি মসজিদ, মহম্মদ আলি মসজিদ ও আলাবাস্টার মসজিদ পর্যটকদের জন্য খুলে রাখা হয়েছে। অপূর্ব সুন্দর মসজিদ দুটি। রঙ্গিন কাঁচের কাজ, পাথরের কাজ সব মিলিয়ে অনবদ্য। Alabaster মসজিদ এর আকৃতি ঠিক যেন ইস্তাম্বুলের blue mosque এর মত।আলাবাস্টার মসজিদএই মসজিদ দুটিই পুরনো কায়রো শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে। আর অনেকটা উঁচুতে। লোক মুখে শোনা যায় যে গিজার পিরামিডের গা থেকে পাথর খুলে নিয়ে এই মসজিদ তৈরি হয়েছে। তবে সত্যি টা কি সেটা বোধহয় কেউ ই জানেনা। তবে এ কথা ঠিক যে পিরামিড ও এই মসজিদ সবই এক ধরনের পাথর দিয়ে তৈরি।এই মসজিদের উপর থেকে গোটা শহরটাকে দেখা যায় আর সেটা খুব সুন্দর দেখতে লাগে। ধূসর রঙের বাড়ির সারি, দূরে কালো রঙের নীল নদ, ও আর দূরে আকাশ ভেদ করে পরপর উচ্চতা অনুযায়ী দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর এক আশ্চর্য। ভাষায় সে দৃশ্য বর্ণনা করা হয়ত আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যেন চোখের সামনে স্বপ্ন নগরী ভেসে উঠছে।এখান থেকে আমরা গেলাম khan-e-Khalil বাজারে। এই বাজারটিও প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। এই বাজারে এলেই মনে হবে কলকাতার ধর্মতলায় এসে গেছি। জিনিসপত্রের দোকান ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন খাবারের দোকান। এখানে বেশ গড়গড়া টানার প্রচলন দেখতে পাওয়া গেল। মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে দোকানে বসে গড়গড়া টানা এখানকার রীতি। সন্ধ্যে হতেই ঝলমলিয়ে উঠল বাজার। কেউ গান গাইছে, কেউ ফেরী করছে জিনিস, কেউ মেহেন্দি পরাচ্ছে। সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট। নির্ভেজাল মিশরীয় স্বাদ পেতে অবশ্যই এই বাজারে আসতে হবে। চারিদিকে মিশরীয় খাবারের গন্ধ ছড়াচ্ছে। ভোজন রসিকরা এখানে এসে বেশ তৃপ্ত হবেন।খান-এ-খালিল বাজারআমরা প্রথমেই বসে গেলাম turkish coffee নিয়ে। সেটা কিছুটা হলেও আমাদের filter coffee-র মতই খেতে। কি সুন্দর ছোট ছোট স্টিলের কফি পটের মধ্যে করে দিয়ে গেল। সাথে কাপ। ঢালো আর খাও। এরপর খানিক বাজার করতে যাওয়া হল। এখানে সব রকম জিনিস পাওয়া যায়। দরদাম করতে পারলে কেল্লা ফতেহ। আর এসে দেখালাম মিশরীয়রা খুব বলিউডের ভক্ত। ফলে শাহ্রুখ খান বা আমিতাভ বচ্চন বলে আপনাকে সাদর আমন্ত্রন জানাবে। দেশে ফিরে বন্ধুদের উপহার দেবার জন্য কিছু কেনার হলে এইখানেই কেনা ভাল কারণ গিজা চত্ত্বরে বা অন্য কোথাও দাম বেশি হবার সম্ভাবনা।খান-এ-খালিল বাজারে পসরাএরপর আমরা আবার রাতের জন্য মিশরীয় খাবার-ই পছন্দ করলাম। ফালাফেল বা কোশারি ওখানকার খুব নাম করা পদ। খানিক টা আমাদের বিরিয়ানির মত, তাতে এত কিছু থাকে যে আমাদের একজনের পক্ষে তা একটু বেশীই হয়ে গেছিল। আর ফালাফেল আমাদের ডালের বড়ার মত খেতে। এরসাথে না না রকম চাটনি ইত্যাদি ও ছিল। ওখানে বসে খলা আকাশের নীচে মিশরীয় গান শুনতে শুনতে আমেজ টা ভালই আসছিল। তবে কায়রোর ট্রাফিক এর কথা মনে পড়াতে বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরলাম........শ্রেয়া ঘোষ (বর্ধমান)ক্রমশ...

নভেম্বর ১৯, ২০২২
নিবন্ধ

ফারাও এর দেশ ঘুরে... (ভ্রমণ কাহিনী) দ্বিতীয় পর্ব

আমাদের মিশর সফর কায়রো থেকে শুরু হয়ে কায়রোতেই শেষ হবে। আর আজ সেই দিন যে দিন আমরা বিশ্বের প্রাচীন বিস্ময়ের সামনে দাঁড়াব। আজ আমাদের পিরামিড দেখার দিন। গাড়ি করে রওনা দিলাম চরম আগ্রহ নিয়ে।আমাদের প্রথম গন্তব্য সাক্কারা। সাক্কারা হল মিশরের প্রাচীনতম Royal Necropolis বা রাজধানী। সাক্কারা তে প্রাচীন কবরস্থানও দেখা যায়। এই অঞ্চলের সব পিরামিড বা tomb গুলির সময়কাল প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব। অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৫০১৯ বছর আগেকার। এই এত বছরের হিসেবটা চট করে আমাদের মাথায় আসেনা। আমাদের মত সাধারন মাপের মানুষ জন বুঝতেই পারেনা যে, এটা ঠিক কত বছর আগে হতে পারে, আর তখন কার সাথে আজকের পার্থক্যটাই বা কতটা সেটাও বুঝতে বেশ অসুবিধা হয়। তবে সেই সব স্থাপত্যের সামনে গিয়ে বেশি কিছু বোঝার থাকেনা। শুধু বিস্ময়ে হকবাক হয়ে যাওয়া ছাড়া। তাদের অস্তিত্ব্যের সামনে নিজেকে খানিকটা হাস্যকর মনে হয়।কায়রো শহর থেকে একটু দূরে সাক্কারা। Old Kingdom বা পুরনো রাজবংশের মিশরীয় রাজারা বা Pharaoh রা বিভিন্ন ভাবে পিরামিড তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। কেউ ধাপে ধাপে করে, কেউ ৪৫ ডিগ্রী কোণ করে। কোনটি আবার শুধু মাত্র ঢিবি হয়ে রয়ে গেছে। কোনটি আবার বানানোর পর ভেঙ্গে পরেছে যাদের আজকাল বলা হয় Collapsed Pyramid। সাক্কারা চত্তরে কাছে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেই সব বিভিন্ন রকমের পিরামিড এরই নমুনা।পিরামিড কথাটি এসেছে পুরনো মিশরীয় শব্দ pey-raa-mid থেকে। যার অর্থ স্বর্গে যাবার সিঁড়ি বা ভগবান রা এর কাছে যাবার সিঁড়ি। এই রা দেবতা হলেন মিশরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেবতা, যিনি অন্য অর্থে সূর্য দেবতা। প্রাচীন মিশরীয়রা সূর্য দেব কে পূজা করতেন, কারণ তারাও মনে করতেন যে, সর্ব শক্তির আধার, প্রাণের আধার। পৃথিবীর সব প্রান্তেই, সব প্রাচীন সভ্যতাতে সূর্য দেবতার পূজা দেখে অবাক হতে হয়। দক্ষিণ আমেরিকার মায়া সভ্যতায় Kinich Ahau, মিশরীয় দের Raa, গ্রীকদের Apollo Helious বা ভারতীয়দের সূর্যদেব। এর থেকেই বিশ্বাস জন্মে যে, পৃথিবীর সব জায়গায় মানুষের ভাবনা চিন্তা এক ধরনের বা তার প্রকৃতিগত সুত্রপাত এক জায়গা থেকেই।সাক্কারা তে যে সব tomb আমরা দেখতে গেলাম সে সব ই রাজা, রানী, পুরোহিত না উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের। মিশরীয় রা বিশ্বাস করত যে, মৃত্যুর পরের জীবনই আসল জীবন। তাই এই মানুষ জীবনে যাই হোক না কেন, পরের জীবন কে সুন্দর করে তুলতে হবে। আর সেই কাজই ছিল তাদের প্রধান কাজ। তাই জন্যই তারা এই পিরামিড বানাত। আর পিরামিড কে সব উপায়ে সুন্দর করার চেষ্টা করত। সাক্কারা তে আমরা একটি পিরামিড এ ঢুকলাম। সেটা রাজা বা ফারাও তিতির। বেশ ৫০-৬০ ফুট নীচে নামতে হল। ঘাড় নীচু করে কোমর বেঁকিয়ে নামলাম নীচে। এবার অবাক হবার পালা। পিরামিডটির সাদা দেওয়াল জুড়ে প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় লেখা যাকে বলে hieroglyph writings. লেখা না বলে আঁকা বললেই বোধহয় ঠিক হবে। সব শেষে গেলাম সেই জায়গায় যেখানে মমি রাখা হত। এই ঘর কে বলে sarcophagus room। ভাবার চেষ্টা করতে লাগলাম যে কি করে অত বছর আগে প্রাচীন মিশরের মানুষ কি করে এই সব বানিয়েছিলেন আর কি করেই বা কি করতেন তারা।হিয়েরগ্লিফ লেখা, সাক্কারা পিরামিডের ভিতরেএই সব আঁকা বা লেখা কতবার ই তো ছবির বইতে দেখেছি। কিন্তু সামনে দেখার যে অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা সে লেখার ভাষা আমার নেই। অভিভূত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ। মনে হল যে আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর আগে, সদ্য মৃত কোন প্রিয় ফারাও কে চোখের জলে শেষ বিদায় জানিয়ে এই পিরামিডে চিরনিদ্রায় ঘুম পারিয়েছিল তার রাজ্যবাসী। যত ভেবেছি তত অবাক হয়েছি। এরপর গেলাম সেই চত্বরেই অন্য একটি পিরামিড-এ। সেখানে দেওয়াল চিত্র আরও বেশি স্পষ্ট, ভাবাই যায়না যে সেগুলি এত বছর আগেকার। এখানে দেওয়াল এর বাইরের অংশের লেখা বা আঁকা দেওয়ালে গর্ত করে করে লেখা হত। আর দেওয়ালের ভিতরের অংশ এ wedged out পদ্ধতিতে, অর্থাৎ শুধু লেখা অংশ টিকে রেখে দিয়ে বাকি অংশ চেঁচে ফেলে দেওয়া হত। এর কারন ও খুব স্পষ্ট, বাইরের দিকের দেওয়াল রোদ বৃষ্টি গরম সব সহ্য করবে তাই ক্ষয় হয়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি তাই গর্ত করে করে লেখা হত, আর দ্বিতীয়ত দূর থেকে এই ধরনের লেখা হলে দেখতে সুবিধা হবে। আর ভিতরের দেওয়ালে কোন অসুবিধা নেই, তাই যে ভাবে খুশি ছবি আঁকা হয়েছে আর সুন্দর করা হয়েছে।প্রাচীন মিশরীয় যে কোন ছবিতে দেখা যায় যে পুরুষ ও মহিলাদের গায়ের রঙ আলাদা। পুরুষ দের গায়ের রঙ হত গাঢ় মেরুন বা খয়েরি বা একদম কালো আর মহিলাদের গায়ের রঙ হত হালকা যেমন হলুদ বা সাদা। এর কারন হিসেবে বলা যেতে পারে যে সমাজের নিয়ম অনুসারে পুরুষ রা বাইরে কাজে যান তাই তাদের গায়ের রঙ গাঢ় হয়ে গেছে। ভাবতে অবাক লাগে যে সেই অত বছর আগেও এত শক্ত সামাজিক ধারণা মিশরীয়দের ছিল। মিশরীয় সমাজে দেবীই হোক বা সাধারণ নারী সবাই গৃহ বধুর তকমা পেত। তাদের মধ্যেও এই ধরনের বিভেদ দেখে বেশ অবাক হতে হয়। আর এতেই ধারণা আরও স্থির হল যে মানুষের ভাবনা চিন্তা সব সময়ই স্থান কাল পাত্র নির্বিশেষে একই ধরনের হয়ে থাকে।স্টেপ পিরামিদ, সাক্কারাএখান থেকে আমরা গেলাম সেই বিখ্যাত স্টেপ পিরামিড দেখতে। archeological কাজ চলার জন্য একদম কাছে যাওয়া হল না আর ভিতরে ঢোকা গেলনা। মিশরের প্রধান স্থপতি ইমহতেপ (Imhotep) এই পিরামিডটি সবার প্রথমে বানান। এই পিরামিড টি তখন কার ফারাও Djoser এর জন্য গঠন করা হয়।এই পিরামিডটির প্রায় ৬ টি ধাপ আছে, যা মাটি থেকে ক্রমশ ছোট হতে হতে উপর দিকে উঠেছে। এই পিরামিড টিও হলুদ রঙ এর বেলে পাথর বা sand stone দিয়ে তৈরি। হলুদ রঙের, বিশাল এক স্থাপত্য ৪০০০ বছর ধরে ক্রমশ ধীরে ধীরে স্বর্গের দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে মিশরীয় সভ্যতাকে সেই স্বর্গের উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।Papyrus এ আঁকা রাজা অসিরিসের শেষ বিচার সভাএই পিরামিড চত্বরেই আমরা দেখলাম ফারাও Djoser এর mortuary temple। এই temple বা মন্দির মানুষের মৃত্যুর পর মমি তৈরি করার জায়গা। মিশরীয়দের নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুর পর ৭০ দিন ধরে মমি তৈরির কাজ চলে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর দেবতা Anubis বা শেয়াল দেবতা এই পদ্ধতি শুরু করেন। প্রথা অনুসারে মৃতের দেহ থেকে প্রথমে যকৃৎ (liver) , শ্বাসযন্ত্র বা ফুস্ফুস (lungs) , পাকস্থলী (stomach) , ও অন্ত্র (intestine) বের করে নেওয়া হত। এই অঙ্গ গুলিকে এক একটি কৌটো এর মধ্যে ভরে রাখা হত কিছু রাসায়নিক তরলের মধ্যে, যার রহস্য আজও অজানা। আর এই কৌটো গুলি বিভিন্ন জন্তুর মুখের ছবি দেওয়া হত। এই ধরণের কৌটো গুলি কে বলা হয় canopic jars। মস্তিষ্ক বের করে আনা হত নাসারন্ধ্র দিয়ে। মস্তিষ্ককে সংরক্ষণ করা হত না। হৃদয় রেখে দেওয়া হত শরীরের মধ্যে। মিশরীয় রা বিশ্বাস করত যে মানুষের দেহে হৃদয়ই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই হৃদয় বা মিশরীয় ভাষায় Ba এর বিচার, মানুষের জীবনের শেষ দিনে, ভগবান Osiris এর দরবারে হবে। সেই খানেই স্থির হবে যে এই মানুষটি স্বর্গে যাবার উপযোগী কিনা। যদি উপযোগী হয়, তাহলে Ba রূপ বদলে হয়ে যাবে কা (Ka),যা অবিনশ্বর।Papyrus এ আঁকা আনুবিস শেষ বিচার করছেন ছবি ইন্টারনেটFinal judgement বা শেষ বিচার হয় দেবতাদের রাজা বা মিশরীয়দের প্রধান দেবতা অসিরিস বা Osiris এর দরবারে। সেখানে ১২ জন দেবী (যারা দিনের ১২ ঘণ্টার প্রতিনিধি) মানুষের আত্মাকে প্রশ্ন করেন ১২ টি প্রশ্ন। এর মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হলে স্বর্গে যাবার সুযোগ ঘটে। যেমন উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাজা অসিরিস, চেয়ারে বসে বিচার করছেন। আনুবিস দাঁড়িপাল্লাতে বা কে ওজন করে দেখছেন। অন্যান্য দেবতারা সেই বিচারের ফলাফল আবার অসিরিস কে জানাচ্ছেন। কি চমৎকার দর্শন, কি সুন্দর সহজ চিন্তাধারা ।আর এই ছবিতেও আনুবিস কে সেই বিচার কাজে সাহাজ্য করতে দেখা যাচ্ছে। এই স্টেপ পিরামিড চত্বর থেকেই দূরে মরুভুমির মধ্যে দেখা গেল bent pyramid, red pyramid আর আরও দূরে Great Pyramid বা Giza.Step Pyramid ঘুরে আমরা গেলাম প্যাপিরাস কারখানাতে। সেখানে প্যাপিরাস তৈরি করা দেখলাম। পদ্ধতি টা বেশ সুন্দর ও সহজ। প্যাপিরাস আসলে এক ধরনের ঘাস জাতীয় গুল্ম। সেই গাছের নরম ডাল কেটে জলে ভিজিয়ে রাখলে, পাট গাছের মতই তার পাতলা আস্তরণ বেরিয়ে আসে। এবার সেই আস্তরণ গুলিকে লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি, তাঁত বোনার মত করে রেখে কোন ভারি বস্তু দিয়ে চেপে রাখতে হয় অনেক্ষন। এই ভাবে চাপে রাখার ফলে তৈরি হয় প্যাপিরাস বা paper। এই পাপিরাস থেকেই পেপার শব্দটি এসেছে, পেপার ও বর্তমানে তৈরি হয় খানিকটা এই পদ্ধতি ধরেই। আশ্চর্যের বিষয় অত বছর আগে মিশরীয়রা কি করে এই প্রথা আবিষ্কার করেন। এই কারখানায় আদর আপ্পায়নের ব্যাপার ই আলাদা। সেখানে যেতেই আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হল আমরা hibiscus tea খাব কিনা? আর খেলে কেমন খাব? ঠাণ্ডা না গরম। জবার চা হয় জানতাম না, গরম ও ছিল ভাবলাম ঠাণ্ডাই খাই। যেমনি বলা ওমনি এসে গেল ছোট গ্লাসে করে লাল রঙ এর পানীয়। বেশ ঠাণ্ডা । জবার চা মানে লাল ত হবেই, তবে চা সুলভ কোন গন্ধ নেই। চেখে দেখলাম, বেশ টক মিষ্টি খেতে আর গরমের মধ্যে মনে হল অমৃত। সেই চা খেয়ে এতটাই আপ্লূত হলাম যে দেশে ফিরে Amazon থেকে খুঁজে order দিয়ে দিলাম। এখনও সে চা বাড়িতে আছে আর গরম কালে খেতে ভালই লাগে।Papyrus গাছদুপুরে খাবার পর আমরা Giza যাবার রাস্তা ধরলাম। তখনও নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। বেশ কিছুটা traffic jam কাটিয়ে পৌঁছলাম Giza চত্বরে । রাস্তায় একটা বাঁক নিয়ে গাড়ি যখন ঘুরলো, দেখতে পেলাম রাজা খুফুর পিরামিডকে। পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতমকে। দূর থেকে দেখেই তার বিশালত্বে কেমন যেন ঘাবড়ে গেছিলাম। তারপর মনে হল স্বপ্ন দেখছি । নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে সত্যি ই আমি Great Pyramid এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এতদিন এর স্বপ্ন দেখার চূড়ান্ত পরিনতি আমার সামনে। পৃথিবীর প্রাচীনতম ইতিহাস এর সাক্ষীর সামনে আমি।Giza হল রাজা বা ফারাও খুফুর সমাধি বা পিরামিড। এই ফারাও আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর আগে মিশরে রাজত্ব করেন। তাঁর সময়কাল প্রায় ৫০ বছরের। মিশরের ইতিহাস এ এই সময়টিকে পুরানো রাজত্বকাল বা old kingdom বলে। ফারাও খুফু Cheops নামেই পরিচিত ছিলেন। শোনা যায় এই নাম তাকে গ্রীক ঐতিহাসিকরা দিয়েছিলেন।Great Pyramid, ফারাও খুফুর পিরামিডখুফুর ;পিরামিড প্রায় ৪৮১ ফুট উঁচু, আর এটি যে মাটির উপর দাঁড়িয়ে আছে, তার দৈর্ঘ্য ৭৫৬ ফুট। মোটামুটি ভাবে ২৫৬০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এটি বানানো শেষ হয়। এই পিরামিড এর গায়ে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন পাথর আছে , যার এক একটির ওজন ৩ টন । এই পিরামিড এর হলুদ পাথরের উপর আগে চুনা পাথরের প্রলেপ ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেটি আর নেই। সাদা চুনা পাথরের প্রলেপ এর জন্যই এই পিরামিড এর আসল রঙ ছিল ধবধবে সাদা। সাহারা মরুভুমির মধ্যে এই বিশাল আকৃতির সৌধটি যখন রোদের আলোয় ঝলমল করত , তখন তাকে ঠিক এক টুকরো হীরে বলেই মনে হত। এর মাথার উপরে আরও ১৪ ফুট উঁচু একটি অংশ ছিল। আজ যা আর দেখতে পাওয়া যায়না । সেই উচ্চতা যোগ করলে আজও এই পিরামিডটি পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ সৌধ, যা মানুষের হাতে তৈরি। তবে তা সত্ত্বেও এর বিশালতা ও গঠন আজও মানুষকে অবাক করে।একসাথে তিনটি পিরামিড, গিজাফারাও খুফুর পিরামিড এর পাশেই আছে ফারাও খাফ্রেন (Khafrain) এর পিরামিড। এই রাজাও old Kingdom এর সময়ই রাজত্ব করেছিলেন। এই পিরামিডটির একদম উপরের অংশে সাদা চুনা পাথরের প্রলেপ কিছুটা হলেও আছে। এটি গিজার থেকে উচ্চতায় একটু ছোট। তবে গিজা পিরামিডের উপরের ১৪ ফুট অংশ না থাকায় এটিকে অনেক সময়ই বেশি উঁচু বলে মনে হয়। তবে যে পরিমান ভুমির উপর পিরামিড দুটি বানান হয়েছে সেটি লক্ষ্য করলেই সেই ভুল ভাঙে।ফারাও মানকুরের পিরামিড, গিজাএই পিরামিডটির পিছনে আছে আরও একটি ছোট মাপের পিরামিড। এই ছোটটি ফারাও মানকুরের (Mankure)। যে কোন পিরামিডের ভিতরেই ঢোকা যায়, তবে তার জন্য আলাদা টিকিট এর ব্যবস্থা আছে। খুফুর পিরামিড সারা বছর পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে আর বাকি দুটি ৬ মাস করে এক একটি। তবে এই পিরামিড গুলির ভিতরে কিছুই নেই। না আছে কোন ছবি, লেখা, না কোন জিনিস পত্র। সব ই সেগুলি জাদুঘর এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা মানকুরে পিরামিডের জন্য আলাদা টিকিট কেটে তার ভিতরে গেলাম। এখানেও প্রায় ৫০ ফুট নীচে নামতে হল। তবে আগের বারের অভ্যেস থাকায় খুব অসুবিধা হয়নি। ভিতরে গিয়ে প্রধান ঘরটিতে দাঁড়ালাম, সামনে একটি পাথরের বাঁধানো জায়গা, যেখানে শোয়ানো ছিল ফারাও মানকুরের সারকোফাগাস।মিশরে পিরামিড তৈরি হবার সময় থেকেই পিরামিডের ধন সম্পত্তি লুঠ করার প্রবনতা দেখা যায়। ফারাও রা অনেক চেষ্টা করেও সেই সব চোরদের আটকাতে পারেননি। মিশরের মানুষ জানত যে পিরামিদের মধ্যেই লুকানো আছে ফারাওদের সব ধন সম্পত্তি। তাই পরজন্মে বিশ্বাস থাকলেও চুরি করতে তাদের বাঁধেনি। তারাই পিরামিডগুলিকে নষ্ট করেছে বেশি। পরের দিকে ফারাওরা বুঝতে পেরে, পিরামিড বানান বন্ধ করে অন্য রকম ভাবে তাদের সৌধ বানাতে থাকেন। তবে তাতেও যে কত টা চুরি আটকানো গেছে, সেটা সবার অজানা।এখান থেকে আমরা গেলাম solar boat museum বা সৌর নৌকা দেখতে। এই সৌর নৌকা কিসে কাজে লাগে সে বিষয়ে পরে আসছি। সৌধ গুলির পাশে নৌকা থাকার কয়েকটি কারণ আছে। মিশরীয়দের মতে মৃত্যুর পর স্বর্গে যাবার রাস্তা দুটি, পায়ে হেঁটে বা নৌকা চড়ে। তাই প্রতি পিরামিড এর পাশে একটি করে নৌকা রাখার জায়গা ও কিছু নৌকার ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গেছে। সেগুলির মধ্যে অবশ্যই ফারাও খুফুর টি সব থেকে বড়। নীচের ছবিটিতে সেই সৌর নৌকা রাখার গর্ত খানি দেখা যাচ্ছে।সৌর নৌকা রাখার গর্তএই নৌকাটি বর্তমানে পাশেই তৈরি একটি মিউজিয়ামে আছে। এই নৌকাটি এতটাই বড় যে এর ছবি তোলা প্রায় অসম্ভব। আর এই museum এ ছবি তুলতেও দেয়না। তাই মনের ক্যামেরাতেই সেই ছবি ধরে রাখতে হল। নীচের ছবি টি ইন্টারনেট এর সৌজন্যে। তবে সেখানেও পুরো নৌকা টি বোঝা যাচ্ছেনা।নৌকা থাকার আরও একটি কারণ আছে। মিশরীয় পুরাণ অনুযায়ী, তাদের প্রধান দেবতা অসিরিস যিনি অধোলোক এর দেবতা, ভবিষ্যৎ জীবনের দেবতা ও ফলশালিত্বের দেবতা। তাঁর মৃত্যু হয় তাঁর ভাই সেথ এর হাতে। সেথ হলেন মিশরীয়দের মন্দ দেবতা। সেথ অসিরিসকে হত্যা করবার পর তাঁর দেহকে ১৮ টি টুকরো করে মিশরের সব প্রান্তে ছড়িয়ে দেন। তার থেকে জন্ম নেয় মিশরের ১৮ টি রাজ্য। অসিরিস এর স্ত্রী দেবী ইসিস, যিনি জাদুর দেবী, তিনি তখন সেই ১৮ দেহাংশ খুঁজে নিয়ে, জোড়া দিয়ে আবার অসিরিস এর দেহ সম্পূর্ণ করেন। অবশেষে ফারাও অসিরিসের মৃতদেহ নিয়ে মমি প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেবী ইসিস (Isis) যিনি জাদু,সৌন্দর্য, ও প্রেমের দেবী, স্বামী অসিরিস এর মমি তৈরি হয়ে গেলে সৌর নৌকা করে স্বর্গে যাত্রার অনুমতি দেন। নৌকার একদিকে দেবী ইসিস ও অন্যদিকে দেবী নেপথিস (যিনি অসিরিস এর দ্বিতীয় স্ত্রী ও সৎ বোন) বসেন, দেবীরা অসিরিস কে এই ভাবেই পরবর্তী জীবনে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এই ভাবেই এটি একটি নিয়ম হয়ে যায় যে, মৃত্যুর পর মমি হওয়া দেহ নৌকা করে পিরামিডে যাবে। এই যাত্রায় ফারাও এর সঙ্গে থাকবেন তাঁর একান্ত আপন পরিবার বর্গ। বিশেষ করে দু জন মহিলা আত্মীয়াকে থাকতেই হবে। আর এই ছবিও খুবই পবিত্র মনে করা হত। এই গল্প শুনে কেমন আমাদের পুরাণের সতী দেবী ও মহাদেব এর গল্প মনে পরে যায়। সেখানেও সতী দেবীর দেহাবশেষ দিয়ে তৈরি ৫১ টি ধর্মীয় স্থান। ভারতীয় জীবনেও এই স্থানের গুরুত্ব যথেষ্ট।নৌকাটি এতটাই বড় যে এর ছবি তোলা প্রায় অসম্ভবফারাও খুফুর সেই সৌর নৌকা মাটির তলায় প্রায় ৩০ ফুট নীচে বড় বড় পাথরের চাঁই দিয়ে ঢাকা ছিল। এই নৌকার দৈর্ঘ্য ১৪৩ ফুট ও প্রস্থ ১৯.৫ ফুট।এটিকে পৃথিবীর সবথেকে পুরনো জাহাজ আখ্যা দিয়েছেন ঐতিহাসিকরা। এই নৌকাটি অনেকগুলো কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এই জাহাজ এ একটিও পেরেক নেই। নৌকা টির ১২২৪ টি ছোট ছোট টুকরো খুলে নিয়ে, ১৯৫৪ সালে জাহাজটিকে আবার নতুন করে বানানো হয়। বিশাল একটি মিউসিয়াম করে এখন সেটিকে সংরক্ষন করা হয়েছে।সৌর নৌকার মডেল, কায়রো মিউজিয়ামসৌর নৌকা দেখে আমরা গেলাম সেই স্ফিংক্স দেখতে। বিকেল হয়ে গেছিল বলে পুরপুরি সামনে থেকে দেখতে পাওয়া গেলনা। সত্যি তার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল যে সময় হয়ত থেমে গেছে। এক দৌড়ে আমি যেন পৌঁছে গেছি বহু হাজার বছর পিছনে। আরও মনে হচ্ছিল যে কত তুচ্ছ আমাদের এই একটা জীবন। এই স্ফিংক্স পিরামিডকে পাহারা দেয় বছরের পর বছর আর বর্তমান যুগের মানুষদের জানান দেয়, World fears time, and time fears pyramid।ফারাও অসিরিস ও তাঁর দুই রানী, দেবী ইসিস ও দেবী নেপথিস, কায়রো মিউজিয়ামস্ফিংক্সের মূর্তিতে সবসময়ই মুখটি হয় মানুষের আর দেহ হয় সিংহ এর। এর পিছনেও মিশরীয় দের কারণ আছে। মানুষ এর বুদ্ধি ও সিংহ এর শক্তি নিয়ে যদি সত্যি কোন প্রানী তৈরি করা যায় তাহলে সেই প্রানীই সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আর এমন শক্তিশালী প্রানীরাই পারে পৃথিবীতে রাজত্ব করতে। মিশরীয় সভ্যতায়, সব ফারাও ও রানীদের স্ফিংক্স মূর্তি তৈরি হত। প্রজা বা সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য। এই Great Sphinx হল ফারাও খাফ্রেন এর।পড়ন্ত বেলায় গ্রেট স্ফিংক্সস্ফিংক্স দেখে আমাদের সকালের সফর শেষ হল। সন্ধ্যের সময় আবার স্ফিংক্স এর সামনে এলাম light and sound প্রদর্শন দেখতে। অসম্ভব সুন্দর সেই প্রদর্শনী দেখতে দেখতে যেন আমরাও ইতিহাসকে আমাদের চোখের সামনে জীবন্ত দেখতে পেতে লাগলাম। মনে হচ্ছিল আমরাও যেন সেই সময় এরই সাক্ষী। স্ফিংক্স যেন সত্যই, কথা বলছে। আমিও যেন দেখতে পাচ্ছিলাম সম্রাট নেপলিয়ান বা আলেকজান্ডার এসে স্ফিংক্সের সামনে নতজানু। ইতিহাস এর শুরুই তো এখান থেকে। আর সেই ইতিহাস সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে আজকের দিন পর্যন্ত স্ফিংক্স সব দেখেছে নিজের চোখে। সে যদি সত্যি কথা বলতে পারত তাহলে বলত গল্প, ছোটবেলার গল্প দাদুদের মত, তাহলে কত গল্পই না বলত সে। নির্বাক শ্রোতা হয়ে শুধু দেখে চলেছে সে। ভুত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান সবই যেন তার হাতের মুঠোতে। সব পরিবর্তনকে সহ্য করে সাহারা মরুভুমির বুকে দাঁড়িয়ে আছে স্ফিংক্স। আর থাকবেও আরও অনেক অনেক বছর, যখন আমরা কেউ থাকবনা। সেই দিনও সে একই ভাবে সবাইকে ইতিহাস শোনাবে স্ফিংক্স।গ্রেট স্ফিংক্সআজকের দিনের যাত্রা এখানেই শেষ করে হোটেল মুখি হলাম, সঙ্গে রইল স্ফিংক্স এর বলা গল্প আর রাতের আলোয় দেখা পিরামিড এর স্মৃতি।শ্রেয়া ঘোষ (বর্ধমান)ক্রমশ...

নভেম্বর ১৩, ২০২২
  • ‹
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • ›

ট্রেন্ডিং

খেলার দুনিয়া

রোহিতের পর বিরাটেরও টেস্ট থেকে অবসর? ঠেকাতে তৎপর বিসিসিআই

ইংল্যান্ড সফরের জন্য ভারতের দল ঘোষণা হতে পারে ২৩ মে। সেদিন নতুন টেস্ট অধিনায়কের সঙ্গে পরিচয় করাতে সাংবাদিক বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনাও আছে বিসিসিআইয়ের। শুভমান গিল দায়িত্ব পেতে পারেন। অধিনায়ক করা হতে পারে জসপ্রীত বুমরাকেও। কিন্তু তার আগে বড় চিন্তা বিরাট কোহলিকে নিয়ে।রোহিত শর্মার পথে হেঁটে টেস্ট থেকে অবসর নিতে চান। বিরাট কোহলি এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন বিসিসিআইকে। আর তাতেই শোরগোল। রোহিত, বিরাট না থাকলে ইংল্যান্ডে ভরাডুবি হতে পারে ভারতীয় দলের। যে সিরিজ দিয়ে আবার শুরু হচ্ছে ভারতের পরবর্তী আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ অভিযান।সূত্রের খবর, বিসিসিআইয়ের প্রভাবশালী এক শীর্ষকর্তা বিরাটের কাছে তাঁর এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইবেন। চেষ্টা করবেন মত বদলানোর। টেস্ট দল নির্বাচনের আগেই সেই বৈঠকের সম্ভাবনা। উল্লেখ্য, রোহিতের সঙ্গে বিরাট বিসিসিআইয়ের বার্ষিক কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এ প্লাস ক্যাটাগরিতে রয়েছেন।দুজনেই টি২০ আন্তর্জাতিক থেকে অবসর নেন গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের পর। বিরাট অনড় থাকলে দুজনেই স্রেফ ওডিআই খেলবেন দেশের হয়ে। কতদিন? সেটাই বড় প্রশ্ন।কোহলি টেস্ট থেকে অবসর নিলে অক্ষত থাকবে সচিন তেন্ডুলকরের ১০০টি আন্তর্জাতিক শতরানের রেকর্ড।বিরাট ১৪ বছরে ১২৩টি টেস্ট খেলেছেন। অধিনায়ক হিসেবে ৬৮টি।টেস্টে বিরাট ৯২৩০ রান করেছেন। গড় ৪৬.৮৫। পারথ টেস্টে গত নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ১০০ করেছিলেন। তবে তারপর ছন্দে ছিলেন না। ওই সফরের বাকি টেস্টগুলিতে তাঁর রান ছিল যথাক্রমে ৭, ১১, ৩, ৩৬, ৫, ১৭, ৬। ২০১৪ থেকে ২০২৩ অবধি বিরাট ইংল্যান্ডে ১৭টি টেস্টে ৩৩ ইনিংসে ১০৯৬ রান করেছেন। ২টি শতরান ও ৫টি অর্ধশতরান রয়েছে।

মে ১০, ২০২৫
দেশ

সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন পাকিস্তানের, শ্রীনগর জুড়ে বিষ্ফোরণ, শহরে শহরে ব্ল্যাক আউট

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ বিরতির কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার তিন ঘণ্টার মধ্যেই সেই সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান। ফের গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। শ্রীনগর, জম্মুর আকাশে ড্রোন দেখা যায়। বিষ্ফোরণের শব্দ শোনা যায় শ্রীনগরে। পাশাপাশি সীমান্তে আর্টিলারি ফায়ারের শব্দ শোনা গিয়েছে। এদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পরেই শ্রীনগর জুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে।ভারত ও পাকিস্তান সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ সময় ধরে চলা আলোচনার ফলেই এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে উভয় দেশ। শনিবার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মত হয়েছে। দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়ায় উভয় দেশকে অভিনন্দন। ট্রাম্পের পোস্টের কয়েক মিনিট পরেই, পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন পাকিস্তান এবং ভারত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকরভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। পাকিস্তান সর্বদা তার সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার সাথে আপস না করে এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে! ভারতের তরফে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রিও সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন। বিকেল ৫টা থেকে দুই দেশ আর কোন সংঘর্ষে লিপ্ত হবে না। আলোচনার পর জানিয়ে দিল ভারত। বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, সামরিক কর্মকর্তাদের স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রে সকল ধরণের তৎপরতা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমওরা ১২ মে আবার কথা বলবেন বলে শনিবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করেছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি।বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তান আজ সব ধরণের সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ভারত সর্বদা সকল ধরণের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় এবং আপোষহীন অবস্থান বজায় রেখেছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।এই সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। তিন ঘণ্টার মধ্যে ফের গুলি চালাতে শুরু করে পাক সেনা। এমনকী ড্রোন হানা আবার শুরু করে। সীমান্তে কিছুক্ষণ বিরতির পর পাকিস্তান গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। তারপরই দুই পক্ষই ফায়ারিং শুরু করে দেয়। জম্মু-কাশ্মীর, পঞ্জাব ও রাজস্থানের একাধিক শহরে ফের ব্ল্যাক আউট শুরু হয়ে যায়। শহরগুলি অন্ধকারাচ্ছন হয়ে পড়ে। এই সময়ে ড্রোন হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে ওই ড্রোনগুলি ধংস করে ভারতের সেনা।

মে ১০, ২০২৫
বিদেশ

এ এক অনবদ্য শ্রদ্ধার্ঘ! জাকির হোসেনের সমাধিস্থলে উত্তরসূরি হিন্দোল

২০২৪-র ডিসেম্বরের ১৫তে ৭৩ বছর বয়সে প্রবাদ প্রতিম তবলিয়া ওস্তাদ জাকির হুসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে পরলোক গমন করেন। তাঁর দেহ আমেরিকার ৩০১, টেনেসি ভ্যালি রোড, মিল ভ্যালি তে ফার্নউড কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। অসংখ্য গুণগ্রাহী ছাড়াও পৃথিবীর সমস্ত স্তরের সঙ্গীত শিল্পীরা শোকসন্তপ্ত হয়ে পরেন। ওস্তাদ জাকির হুসেন ১৯৫১ র ৯ই মার্চ ভারতের বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বই) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন প্রবাদ প্রতিম তবলা বাদক ওস্তাদ আল্লা রাখা। মাত্র তিন বছর বয়স থেকে জাকির হোসেন তাঁর পিতার কাছে তবলা বাজানোর তালিম নেওয়া শুরু করেন।ভারতবর্ষ থেকে কয়েক হাজার যোজন দূরে এই মহামানবের সমাধিস্থল দর্শনের সৌভাগ্য খুব কম জনেরই হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৮ মে প্রথিতযশা তবলিয়া পণ্ডিত হিন্দোল মজুমদার তাঁর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধার্ঘ জ্ঞ্যাপন করতে যান। তিনি তাঁর সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন তাতে দেখা যাচ্ছে হিন্দোল মজুমদার জাকির হোসেনের সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে তবলার বোল উচ্চাড়ন করে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ দিচ্ছেন। এই অভুতপূর্ব দৃশ্য দেখে অনেকেই আবেগ প্রবন হয়ে পরেন। প্রসঙ্গত, জাকির হোসেনের পিতা ওস্তাদ আল্লা রাখা এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, জাকিরের জন্মের পর তাঁদের প্রথা মত পিতার সন্তানের কানে আজানের বানি শোনানোর পরিবর্তে আল্লা রাখা জাকিরের কানে তিনতালের বোল শুনিয়েছিলেন। হিন্দোলের এই শ্রদ্ধার্ঘ অনেককেই সেই নাস্টালজিয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিলো।Posted by Hindole Majumdar on Thursday, May 8, 2025তিনি তাঁর সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, আজ আমি ওস্তাদ জাকির হোসেন জির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছি, কখনও ভাবিনি কিংবদন্তিকে এইভাবে দেখব, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে সঙ্গীতের জগৎ তাকে ছাড়া থাকবে - তাঁর আত্মা চির শান্তিতে বাস করুক-ওম শান্তি। হিন্দোল মজুমদার কে জাকিরজির সমাধিস্থলে নিয়ে আসার জন্য প্রতিভাবান সরোদ বাদক সৌরদীপ ভট্টাচার্যকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।পণ্ডিত হিন্দোল মজুমদার জনতার কথাকে জানান, জাকির জি আমাদের মতো তবলিয়াদের কাছে একজন পথিকৃৎ বা মশিয়াহ। তাঁকে এবং পন্ডিত স্বপন চৌধুরী জি মত তবলিয়া কে সামনে রেখেই আমাদের বেড়ে ওঠা। তিনি জানান জাকির জি ছিলেন আমার খলিফা। আমার গুরু প্রয়াত পন্ডিত শঙ্খ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ওস্তাদ আল্লা রাখার শিষ্য। তিনি আরও জানান তবলা কে যে উচ্চতায় জাকির জি নিয়ে গেছেন সেটা অনুধাবন করার মত সময় এখনো আসেনি। হিন্দোল মজুমদার আরও জানান, জাকির জি ও পণ্ডিত স্বপন চৌধুরী কে দেখেই তাঁদের সমসাময়িক তবলা শিল্পীরা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারে আমেরিকা ও ইউরোপে এসে নারা বাঁধেন। সেই পরম্পরা আজও চলছে। আমরা তাঁদের দেখানো পথই অনুসরন করে চলেছি।তিনি জানান, জাকির জি বছরের বেশীরভাগ সময়ই পরিবারের সাথে আমেরিকাতে কাটাতেন, ২-৪ মাস ভারতে এসে বিভিন্ন কনসার্টে অংশগ্রহণ করতেন। আরও জানান, জাকির জির সাথে বহুবার সাক্ষাত হয়েছে। তাঁর মত গুরু, অগ্রজ, উদারমনা মানুষ বিরল। হিন্দোল মজুমদার বলেন, জাকির জির রসিকতা বোধ ও ছিলো অসাধরণ। তিনি আরও জানান জানান, জাকির জির মৃত্যুর কয়েক মাস আগেই আমার গুরু পন্ডিত শঙ্খ চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত হন। পরপর দুটি ধাক্কা সামলানো খুব-ই কঠিন ছিলো আমার কাছে। অনেকদিন ধরেই জাকির জির সামাধি স্থল দর্শন করার ইচ্ছা ছিল, সেই সুযোগ পেলাম। তাঁকে তবলার বোল ছাড়া কি দিয়েই বা শ্রদ্ধা জানাতে পারি? তাই সমাধিস্থলের পাশে দাঁড়িয়ে ওনার পিতা ওস্তাদ আল্লা রাখা জির কম্পোজিসন করা রুপক তালের ওপর একটি বোল পাঠ করি।পণ্ডিত হিন্দোল মজুমদার জাকির হোসেনের সামাধিস্থল ঘুরে এসে কিছুটা ব্যথিত-ও। তিনি জনতার কথা কে জানান, তাঁর মত মানুষের সমাধি এতটা মলিন, এটা মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর। তিনি জানান, আমার স্থির বিশ্বাস তাঁর অগণিত গুনাগ্রাহী এই দৃশ্য দেখে ভীষণভাবে মর্মাহত হবেন। তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস এই সমাধি তাঁর জন্মস্থান ভারতে হলে সেটাই আজ একটা দর্শনীয় স্থানে পরিণত হত। তবে তিনি জানিয়েছেন জাকির জির পরিবারের সাথে কথা বলে জাকির প্রেমী মানুষজনকে নিয়ে কিছু একটা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন। অন্তত একটা সাইনেজ ও যেন লাগানো যায়, যাতে কেউ শ্রদ্ধা জানাতে এসে জায়গাটাকে সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারেন।

মে ০৯, ২০২৫
নিবন্ধ

গল্প হলেও সত্যি কি? (অন্তিম পর্ব )

ঐশী নিজের গল্প শেষ করলো, সৈকত এতক্ষন মন্ত্র মুগ্ধের মত গল্পটি শুনছিল, এবার সে বললো, ব্যাপারে, এবারের সফরটা মনে থেকে যাবে, যা একটা গল্প শোনালেন। একই গল্পে এই ধরণের অসুখ আর নরখাদক, এখনো ভাবতে পারছিনা আমি ঠিক কি শুনে নিলাম ,সেরা লেখেন আপনি। এই গল্প বেস্ট সেলার হবেই মিলিয়ে নেবেন আপনি।ঐশী: ধন্যবাদ।সৈকত: আচ্ছা । গল্পটা বই আকারে কবে পাবো ?ঐশী: আসা করি খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন।দেখতে দেখতে কেটে গেলো সেদিনের রাত, পরেরদিন বিকালে দুরন্ত এক্সপ্রেস এসে থামলো যশবন্তপুর স্টেশনে। সবার মতোই সৈকত আর ঐশীও নিজেদের লাগেজ নিয়ে ট্রেন থেকে বেরিয়ে এলো। সৈকত: আচ্ছা আপনার বোন কই ?ঐশী: চলুন দেখা করিয়ে দি, বাইরে আছে ওরা।সৈকত ঐশী স্টেশন এর বাইরে বেরোতেই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ঐশীকে। ঐশী সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললো, এই যে তিথি।সৈকত: Hi তিথি ! Nice to meet you.তিথি সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললো, same to you, আপনি ?ঐশী: আমার নতুন বন্ধু। ট্রেনে দেখা হলো, তোর গল্প বলতে বলতে এতদূর চলে এলাম।তিথি: oo wow. New friend ! নাম কি এই নতুন বন্ধুর ?সৈকত: সৈকত সেন, পেশায় সাংবাদিক।তিথি: আমি তিথি পেশায় নার্স।সৈকত: great তিথি ম্যাম।তিথি: আমাদের বাড়ি পর্যন্ত যেতে হবে কিন্তু।সৈকত কিছু একটা বলতেই যাবে এমন সময় কেও একজন বলে উঠল, আজকে হবেনা, ওনাকে অন্যদিন আসতে বলিস।সৈকত দেখলো তিথির পিছনে বছর ৩৫ এর এক মহিলা, চেহারা দেখে মনে হচ্ছে হয় তিনি খেলাধুলার সাথে যুক্ত নাহলে পুলিশ। তিথি বললো: কিন্তু দিদি কেনো?মহিলাটি বললেন: আজকে বাড়িতে একটু অসুবিধা আছে রে।সৈকত: আচ্ছা তিথি অন্য কোনো একদিন আসা যাবে নাহয়।ঐশী: ও আমাদের তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় বোন প্রিয়া। তিথির সাথে ও চলে এসেছিল এখানে। আগে পুলিশ ছিল, এখন সেচ্ছাবসর নিয়েছে।সৈকত: আচ্ছা তাহলে এবার আমি আসি, দেখি ট্যাক্সি কোথায় পাই!ঐশী: বাই।তিথি: বাই দাদা।সৈকত: বাই ঐশী, বাই তিথি।সৈকত দেখলো প্রিয়ার চোখে যেনো তার প্রতি এক রাশ অবিশ্বাস, সৈকত অবশ্য বেশি ভাবলনা, পুলিশ ছিল হয়ত সেই জন্যই শুরুতেই কাওকে বিশ্বাস করতে পারেন না নিজেকে এই সান্তনা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো সে।সৈকত বাইরে বেরিয়ে একটা টাক্সি করে নিল। একটা হোটেল আগেই বুক করে রাখা আছে, ওখানেই গিয়ে উঠবে সে। টাক্সিতে যেতে যেতে ঐশীর বলা গল্পটা তার মনে পড়তে থাকলো। কি সুন্দর গল্প লেখে আর বলে মেয়েটা, সত্যিই সে ফ্যান হয়ে গেছে ঐশীর। হটাৎ তার মনে একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো, আচ্ছা তিথী মানসিক রোগী ছিল, তিথী অনেক বছর ছিলনা এদের সাথে, সেখানে খেতেও নাকি পেতোনা ঠিক করে..... এদিকে ওর বড়দিদি একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন যিনি শ্রেয়ার মতই সেচ্চাবসর নিয়েছেন। ঐশী নিজেই গার্গীর মতই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। আজ থেকে কয়েক বছর আগে মালদায় একটা এইরকম সিরিয়াল কিলিং এর ঘটনাও ঘটেছিল, তাহলে কি ঐশী নিজের জীবনের গল্পই এইভাবে তাকে বলে দিলো?সৈকত ফোন করলো নিজের বন্ধু এবং বর্তমান লালবাজারের ACP সুবীরকে । সুবীর ফোন ধরতেই সৈকত প্রথম প্রশ্ন করলো, আচ্ছা সুবীর , মালদায় আজ থেকে ৫ বছর আগে যে মানুষ গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, সেখানে কি ACP সুদীপ সেন নিখোঁজ হয়েছিলেন না মারা গিয়েছিলেন ?সুবীর: জানা যায়নি , তবে যতদূর শুনেছি উনিও গায়েব হয়েছিলেন বডি পাওয়া যায়নি বলেই তোদের ফ্যামিলির হাতে দাদাকে তুলে দেওয়া যায়নি। আর অস্বাভাবিক ভাবেই তোর দাদার পর আর কেও গায়েব হয়নি।সৈকত: আমি জানতে পেরে গেছি সুবীর, কে ছিলো আসলে এইসব মানুষ দের গায়েব হওয়ার পিছনে?সুবীর: কি বলছিস ?সৈকত: যা বলছি ঠিক বলছি। আমি পেয়ে গেছি ওই রাক্ষুসী তার ঠিকানা, ও মানুষ নয়, নরখাদক যে বেচেঁ গেছে তার দুই বোনের জন্য কিন্তু আমার দাদার মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি নেবোই।হটাৎ এইসময় সৈকতের ট্যাক্সি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গিয়ে ধাক্কা মারে আর একটা গাড়িকে, সৈকত বুঝে ওঠার আগেই গাড়ির ফ্রন্ট সিটে সজোরে ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে।২ মাস পর:আদ্রিতা: ডক্টর কি বুঝছেন ? ও ঠিক হয়ে যাবে তো?ডক্টর চৌধুরী: দেখুন ম্যাম সৈকতের শারীরিক সমস্যা সমাধান তো ডক্টর উদয়ন দাস করেই দিয়েছেন কিন্তু সৈকতের মানসিক সমস্যার সমাধান হতে আরো সময় লাগবে।আদ্রিতা: ওর schizophrenia আবার ফিরে এসেছে?ডক্টর চৌধুরী: ফিরে আসার জন্য কোনোদিন সে যায়নি এইরোগ থেকে মুক্তি নেই আদ্রিতা । সে থেকেই গিয়েছিল সবার অজান্তে শুধু সময় পেতেই আবার নিজের খেলা দেখিয়েছে।আদ্রিতা: কিছু কি করা যায়না? ওকে যে এই কষ্টে আর দেখতে পারিনা আমি।ডক্টর চৌধুরী: ওর দাদাই ছিল ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, ওর জীবনের যেকোনো সমস্যা ওর দাদাই সমাধান করে দিত, সুদীপ এর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থেকেই ও নানারকম গল্প ভাবতে থাকে নিজের মাথায়, ভেবে নিতে থাকে সেই সমস্ত চরিত্র যারা হয়ত সত্যি নেই এই দুনিয়ায় কোথাও । ও সেই চরিত্রগুলোকে মেরে নিজের দাদার মৃত্যুর প্রতিশোধ তোলে। এর আগেও বহুবার ও এইরকম করেছে, এবারেও একই কাজ করলো আর ওর মধ্যে এই জিনিষ তখনই দেখা যায় যখন ও নিজেকে একা মনে করে। যেমন এবারের ট্রেন জার্নি র সময় ওই বার্থে যার আসার কথা ছিল সে আসেইনি, পুরো রাস্তা সৈকত একা একা কাটিয়েছে আর ভেবে নিয়েছে একটা গল্প। এখন ও আবার ঠিক আছে কিন্তু যখনই ও আবার নিজেকে একা মনে করবে তখনই আবার এই রোগ জাকিয়ে বসবে, আদ্রিতা, তুমি ওর স্ত্রী তোমাকেই দায়িত্ত্ব নিতে হবে যাতে ও কোনোদিন নিজেকে একা অনুভব না করে, সবসময় ওর সাথে থাকতে হবে তোমাকে। পারলে তুমিই পারবে ওকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে।আদ্রিতা: আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো স্যার, আমি চেষ্টা করবো যাতে সৈকতের মনে বেড়ে ওঠা এই মিথ্যা গল্প গুলো দূর হয়ে যায় আর ও সত্যি দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে পারে।এমনসময় কেবিনে এলো সৈকত, আদ্রিতা, তুমি আমায় যে এখানে কেন আনো, সেই সিডেটিভ দিয়ে কি কি বলিয়ে নেয় আমাকে দিয়ে।সৈকত আরো কিছু বলতেই যাচ্ছিলো, কিন্তু আদ্রিতা সুযোগ দিলো, উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে আর কানের মধ্যে বললো, শান্ত হও সৈকত, আমি আছি তো তোমার সাথে সবসময়, তোমার বেস্টফ্রেন্ড। ~সমাপ্ত~লেখকঃ সায়ন্তন গোস্বামী। (Sayantan Goswami)

মে ০৯, ২০২৫
দেশ

পাকিস্থানে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধবংস, জম্মু সহ দেশের বহু শহরে ব্ল্যাক আউট, ৩টে পাক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত

অপারেশন সিন্দুরের পর লাহোরে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করে পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে ভারত। পহেলগাঁওয়ে বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার জবাবে ভারত অপারেশন সিন্দুর-এর মাধ্যমে তার যোগ্য জবাব দিয়েছে। ভারত গতকাল পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়। সন্ধ্যের পর থেকে জম্মু-কাশ্মীর ও গুজরাটের বহু শহর ব্ল্যাক আউট করা হয়েছে। জম্মুতে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তান। দুটি যুদ্ধ বিমান গুলি করে ধ্বংস করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ৭ ও ৮ মে মধ্য রাতে পাকিস্তান ভারতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করে। অবন্তীপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, জলন্ধর, লুধিয়ানা, আদমপুর, চণ্ডীগড়, ভুজ সহ ১৫টি শহরে এই হামলার চেষ্টা করা হয়। তবে, ভারতের কাউন্টার ইউএএস (Unmanned Aerial System) ও এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা সফলভাবে এই আক্রমণগুলিকে প্রতিহত করে। এদিকে ভারতের পাল্টা পদক্ষেপে লাহোরে পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লাহোরে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করে। অন্যান্য সীমান্তবর্তী এলাকাতেও বিস্ফোরণের খবর আসে। লাহোরে এয়ার ডিসেন্স সিস্টেম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কুপওয়ারা, বারামুল্লা, উরি, পুঞ্চ, মেন্ধার ও রাজৌরি সেক্টরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মর্টার শেল নিক্ষেপে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জন নিরীহ নাগরিকের। তাদের মধ্যে রয়েছেন ৩ জন মহিলা ও ৫ জন শিশু। পাশাপাশি সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান ৭ মে রাতে অবন্তীপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, কাপুরথালা, জলন্ধর, লুধিয়ানা, বাথিন্ডা, চণ্ডীগড়, এবং ভুজ-এর মতো উত্তর ও পশ্চিম ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থান লক্ষ্য করে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করে। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী সেই হামলাগুলি সফলভাবে প্রতিহত করে।

মে ০৮, ২০২৫
রাজ্য

উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম বর্ধমানের রুপায়ন পাল, জয়জয়কার পূর্ব বর্ধমানের

ভারতীয় সেনাারা অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে গুড়িয়ে দিয়েছে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি। মঙ্গলবার ভোররাতের ওই ঘটনায় বেজায় খশি এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম স্থান পাওয়া বর্ধমান সিএমএস হাই স্কুলের ছাত্র রুপায়ন পাল। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৭ (৯৯.৪ শতাংশ)। বুধবার ফল প্রকাশের পর কৃতী ছাত্র রুপায়ন সাংবাদিকদের বলে, ভারতীয় সেনারা যে প্রত্যাঘাত করেছে সেটা যথেষ্টই প্রশংসনীয়। প্রত্যেক ভারতীয় জন্য এটা গর্বের। উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার আরও ছয় কৃতী ছাত্র ছাত্রী।রুপায়ন পালেদের আদি বাড়ি ভাতারের খেড়ুর গ্রামে। তবে এখন তাঁরা থাকেন বর্ধমান শহরের সুভাষপল্লী কালীতলায়। রূপায়ণের বাবা রবীন্দ্রনাথ পাল জামালপুর থানার জৌগ্রাম হাই স্কুলের শিক্ষক। মা জয়শ্রী পাল ভাতারের ভাটাকুল স্বর্ণময়ী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।রুপায়ন জানিয়েছে, মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় আমি পঞ্চম স্থানে ছিলাম।উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা ভাল হলেও মেধা তালিকার একেবারে প্রথম স্থানে আমি থাকব, এতটা আমি আশা করিনি।রুপায়ন জানিয়েছে, তাঁর এই সাফল্যের পিছনে সবথেকে বড় অবদান রয়েছে তাঁর বাবা ও মায়ের।পাঠ্য পুস্তক পড়ার পাশাপাশি গল্পের বই পড়ার প্রতিও যথেষ্ট ঝোকঁ রয়েছে রুপায়নের। তাঁর প্রিয় লেখক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রিয় চরিত্র ব্যোমকেশ। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করার জন্য দৈনিক ১২-১৩ ঘন্টা পড়াশুনা করেছে রুপায়ন। কৃতী এই ছাত্র ডাক্তার হতে চায়। তার জন্য সে জয়েন্ট পরীক্ষাও দিয়েছে বলে জানিয়েছে। ডাক্তার হতে চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যাও করেছে রুপায়ন।তবে শুধু রুপায়ন পালই নয়, মাধ্যমিকের মতই উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকাতে পূর্ব বর্ধমান জেলার একাধীক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা জায়গা করে নিয়েছে। মেধা তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে জেলার কাটোয়া কাশীরাম দাস ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ঋদ্ধিত পাল এবং ভাতার এম পি হাইস্কুলের ছাত্র কুন্তল চৌধুরী। তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৩ (৯৮.৬ শতাংশ)। এছাড়াও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে কাটোয়া ডি ডি সি গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী দেবদত্তা মাঝি ও মেমারির ভি এম ইনস্টিটিউশন (শাখা ১) এর ছাত্র জয়দীপ পাল। তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর-৪৯২ (৯৮.৪ শতাংশ)। ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় দেবদত্তা ৭০০ নম্বরে মাধ্যম ৬৯৭ নম্বর পেয়ে রাজ্যে প্রথম হয়েছিল।ইতিমধ্যেই এবছর জয়েন্ট এন্ট্রান্সের (JEE মেন) প্রথম সেশনের পর দ্বিতীয় সেশনেও ১০০-য় ১০০ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে কাটোয়ার দেবদত্তা মাঝি। এবছরের উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকার সপ্তম স্থানে এবং দশম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলে দুই কৃতী ছাত্র শুভম পাল ও অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সপ্তম স্থানাধিকারী শুভমের প্রাপ্ত নম্বর - ৪৯১ (৯৮.২ শতাংশ)। আর দশম স্থান থাকা অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৮ (৯৭.৬ শতাংশ)।

মে ০৭, ২০২৫
দেশ

জৈশ এ মহম্মদের মাথা মাসুদ আজহারের ডেরায় আক্রমণ, তাঁর পরিবারের ১৪ জন নিহত

অপারেশন সিন্দুরের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যবস্তু ছিল বাহাওয়ালপুরে অবস্থিত জইশ-ই-মোহাম্মদের সদর দপ্তর, যার নেতৃত্বে ছিলেন কুখ্যাত সন্ত্রাসী মাসুদ আজহার। আজহারকে শেষবার বাহাওয়ালপুরে সংগঠনটির মাদ্রাসার কাছে দেখা গিয়েছিল, যেখানে ওই মাদ্রাসাটি একটি নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত, পাশাপাশি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য তহবিল সংগ্রহের উৎসও ছিল। ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হাফিজ সাইদের লস্কর-ই-তৈয়বার সাথে সম্পর্কিত মুরিদকেতে সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ এই মাদ্রাসাটি ধ্বংস করে দিয়েছে। সূত্রের খবর, মাসুদ আজহারের পরিবারের ১৪জন সদস্য নিহত হয়েছেন। তাঁর ভাই এি হামলায় মারা গেছেন বলে খবর। প্রাথমিক অনুমান অনুসারে প্রায় ৭০ জন জঙ্গিকে নির্মূল করা হয়েছে এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে আক্রমণ চালানোর জন্য ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীও পাকিস্তানের বিমান হামলার প্রতিশোধমূলক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে, পাকিস্তানি F-16 এবং JF-17 যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে, যার মধ্যে একটি JF-17 ,আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করে ভূপাতিত করা হয়েছে।প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন অনুসারে, এই হামলার আকার এবং নির্ভুলতা ভারতের নিরাপত্তা নীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এটি প্রথমবারের মতো অভিযানগুলিকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সীমাবদ্ধ রাখার পরিবর্তে ভারত পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডের গভীরে, পাঞ্জাব প্রদেশে, আক্রমণ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে এই পদক্ষেপটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ভারত সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদকে মেনে নেবে না এবং তার নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

মে ০৭, ২০২৫
দেশ

পহেলগাঁওয়ের বদলা নিল ভারত, পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা

অবশেষে চরম বদলা নিল ভারত। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পাল্টা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে গুড়িয়ে দিল ভারতীয় সেনা। একেবারে বেছে বেছে নির্দষ্ট ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে বিধ্বংসী হামলা চালানো হয়েছে। ভারত এই অপারেশনের নাম দিয়েছে অপারেশন সিন্দুর। এই বদলার খবর ভারতীয় সেনার তরফেই প্রকাশ করা হয়েছে।ভারত পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে তার মধ্যে ৪টি পাকিস্তানের পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুর এবং মুরিদকে এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে মুজাফফরাবাদ এবং কোটলিতে। এই সমস্ত এলাকাই সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি। এদিকে জম্মু বিভাগের কমিশনারের জারি করা নির্দেশ অনুযায়ী, আজ, ৭ মে (বুধবার) জম্মু, সাম্বা, কাঠুয়া, রাজৌরি এবং পুঞ্চ জেলায় সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে পুঞ্চ জেলায় নিরাপত্তা সতর্কতা জারি হওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পুঞ্চ জেলার সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় আজ, ৭ মে ২০২৫, বন্ধ থাকবে।আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গর্বিত।OperationSindoor হল পহেলগামে আমাদের নিরীহ ভাইদের নৃশংস হত্যার প্রতি ভারতের প্রতিক্রিয়া। ভারত এবং তার জনগণের উপর যে কোনও আক্রমণের উপযুক্ত জবাব দিতে মোদী সরকার বদ্ধপরিকর। ভারত সন্ত্রাসবাদকে তার মূল থেকে নির্মূল করতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।এদিকে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গিঘাঁটিতে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তানি বাহিনীর আন্তঃসীমান্ত গোলাবর্ষণে জম্মু ও কাশ্মীরে কমপক্ষে সাতজন নাগরিক নিহত এবং ৩৮ জন আহত হয়েছেন। পাক গোলাবর্ষণে মেন্ধরে একজন এবং পুঞ্চে ৬ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৫ সালের ৬-৭ মে রাতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বিপরীতে আন্তর্জাতিক সীমান্তের পোস্ট থেকে কামান থেকে গোলাবর্ষণ সহ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এই তথ্য জানিয়েছেন উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা (প্রতিরক্ষা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুনীল বারাতওয়াল।

মে ০৭, ২০২৫

Ads

You May Like

Gallery

265-year-old "Mukhopadhyay House" in Bhavanandpur, Kalnar, played vermilion on Dasami during Durga Puja
BJP candidate Locket Chatterjee campaigned on the banks of the Ganges from Chandannagar Ranighat to Triveni Ghat wishing New Year.
A living depiction of history with a touch of color, everyone is enthralled by the initiative of the Eastern Railway
Sucharita Biswas actress and model on Durga Puja
Lord Kalabau came up in palanquin; Navapatrika walked towards the mandap - the puja started
On Sunday, the 'Hilsa festival' is celebrated in the city with great joy.
Check out who has joined Mamata's new cabinet
Take a look at the list of recipients at the Bangabibhushan award ceremony
If you are grassroots, you will get ration for free. Lakshmi Bhandar, Kanyashree, Swastha Sathi, Krishakbandhu, Oikyashree, Sabujsathi — you will get all.

Categories

  • কলকাতা
  • রাজ্য
  • দেশ
  • বিদেশ
  • রাজনীতি
  • খেলার দুনিয়া
  • বিনোদুনিয়া
  • সম্পাদকীয়
  • নিবন্ধ
  • ভ্রমণ
  • রাশিফল
  • টুকিটাকি
  • চিত্রহার
  • বিবিধ
  • ভিডিও

Company

  • About Us
  • Advertise
  • Privacy
  • Terms of Use
  • Contact Us
Copyright © 2025 Janatar Katha News Portal