অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই বেলা ১টা নাগাদ বেলভিউ হাসপাতালে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে পৌলমি বসুর সঙ্গে কথা বলেন। হাসপাতাল চত্বরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কন্যা পৌলমী বসু। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কান্না ধরা গলায় পৌলমী জানালেন, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ২টো নাগাদ বেরিয়ে গলফ্গ্রীনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে মার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে। এরপর টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর ৩টের পর রবীন্দ্র সদনে যাব। সেখানে ২ ঘণ্টা রাখা হবে তাঁকে। এরপর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে হবে শেষ কৃত্য। যে সম্মান ওঁর প্রাপ্য ছিল, তার থেকেও বেশি সম্মান দিয়েছেন বাবাকে। এত আপনজনের মতো ভালবাসা দেওয়ার জন্য আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। বেলভিউ নার্সিংহোমের প্রতিও কৃতজ্ঞ। অরিন্দম কর থেকে শুরু করে প্রত্যেককে অসংখ্য ধন্যবাদ যেভাবে ওনারা চেষ্টা করেছেন।তাঁর মতো চিকিৎসক আরও প্রয়োজন। বাবা চিরকাল আমাদের মধ্যে থেকে যাবেন। বাবাকে আমরা সেলিব্রেট করব হাসিমুখে।
আরও পড়ুন ঃ প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু সত্যিই বেদনাদায়ক। চলচ্চিত্র জগৎ থেকে শুরু করে নাট্যজগৎ অনেক ক্ষেত্রেই ওঁর অগাধ বিচরণ ছিল। রবীন্দ্র সদন থেকে মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পর সন্ধে ৬টা থেকে ৬:৩০-এর মধ্যে গান স্যালুট দিয়ে তাঁকে সম্মান জানানো হবে। উনি পার্থিবভাবে হয়তো চলে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। সৌমিত্রদার শূন্যস্থান কেউ পূরণ করতে পারবেন না। আপনি যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন তাঁর শোকবার্তায় লেখেন , বাংলার তথা ভারতের চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তী নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাংলার সকল মানুষের হয়ে আমি আমাদের গভীর মর্মবেদনা প্রকাশ করছি। যে প্রতিভাবান মানুষদের জন্য বিশ্বের দরবারে আমরা প্রতিনিধিত্ব পেয়েছি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন। জগৎবরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের চোদ্দটি ছবি সহ তিনি দুশতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলি হল অপুর সংসার, চারুলতা, অভিযান, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণশত্রু, গণদেবতা, ঝিন্দের বন্দী, তিন ভুবনের পারে, ক্ষুধিত পাষাণ, কোনি ইত্যাদি।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একাধারে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র ও মঞ্চাভিনেতা, পাশাপাশি অসামান্য বাচিক শিল্পী, কবি, লেখক, নাট্যকার এবং নাট্যনির্দেশক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে সারা জীবনের অবদানের জন্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, ২০১৫ সালে টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (হল অফ ফেম) ও ২০১৭ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি তাঁর অসামান্য অভিনয়ের জন্য পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি টেগোর রত্ন অ্যাওয়ার্ড সহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ফ্রান্স সরকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০১৮ সালে তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মান- লিজিয়ন দ্য অনার- এ ভূষিত করে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ও প্রীতির সম্পর্ক ছিল। আমাদের আমন্ত্রণে তিনি বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার গ্রহণ করতে নজরুল মঞ্চে যেমন আমাদের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আবার পাশাপাশি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকেছেন। তাঁর সসম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ, আন্তরিক ব্যবহারে তিনি সকল সময়ে আমাদের চিত্ত স্পর্শ করেছেন। তাঁর মৃত্যু বাংলার জনজীবনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করল। আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার-পরিজন ও অসংখ্য অনুরাগীর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি ।