পুজো। দুগ্গাপুজো।
'পুজোয় চাই নতুন জুতো।' খবরের কাগজে ইয়া বড় পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন।
সদ্য 'হড়কা বান' দেখলো শ্রীলেদার্সের নতুন আউটলেট।
প্রয়োজন! নাকি সস্তা! তাহলে কি বিজ্ঞাপনের টোপ! হুজুগ! আবেগী বাঙালি!
জানেনা হরিপদ।
পুজোর পঞ্চাশ দিনও বাকি নেই।
হরিপদ দিল্লীতে। শাস্ত্রী ভবনের কাছে এশিয়া খ্যাত মলে।
নাইকির শো রুমে। স্নিকার টেন থাউজেন্ডস অনওয়ার্ডস। প্রয়োজনে নাম লিখে দেবে নাইকি। সিগনেচার প্রোডাক্ট।
বিটেক করে সদ্য সামান্য মাইনের কাজ জুটিয়ে দিল্লীতে ভাইয়ের ছেলে। দাদা নেই। বৌদি বলেছে 'একবার দেখে এসোনা ঠাকুরপো। কেমন আছে কে জানে।'
আমরা বলি কাজ। চাকরি। 'ওরা' বলে জব।
তাই ভাইপোর কাছে দিল্লীতে হরিপদ। কিন্তু কি আর দেখবে সে !
ভাবলে, একটা কিছু কিনে দিলে হয়। পুজোয় বাড়ী ফেরা হবে না ওর। ভাইপোই কাকুকে নিয়ে এসেছে মলে।
তবে এও ঠিক ..একটা সময় হরিপদই দেখেছে।
ভাইপোর জন্মের পর পরই দুর্ঘটনা। চলে গেলো দাদা। ছ'মাসের অন্নপ্রাশনের আয়োজন থেকে স্কুল কলেজ সবটাই।
ভাইপোর প্রথম জন্মদিন।
কাগজের বক্স।
ওপরটা সেলোফেন
জিরো সাইজ।
সঙ্গে আবার ঝুমঝুমি।
জনসনের পাউডার।
বাক্স ভর্তি আনন্দ!
আজও সেই নস্টালজিক গন্ধ টের পায় হরিপদ।
তারপর ..সময় গড়ালো।
শেষ বেলায় দোকানে গুঁতোগুঁতি। কোনরকমে দোকানদার কে বুঝিয়ে বলা..
'এই ধরুন
বছর দেড়েক বয়স।
ভীষণ ভিড় তো..
ঠাকুমার কাছে রেখে এলাম।
বড্ড কান্নাকাটি করে।'
'এইটা দেখুন।
মাথায় টুপি দেওয়া।
পুজোয় বেশ ঠান্ডা পড়ে যাবে। মোজাও আছে।'
গলদঘর্ম দোকানি দেখাতে লাগলো।
সে 'মোজা'..
কি জানি কোন মন্ডপে পড়ে রইল।
কাঁধে মুখ রেখে ঘুমে কাদা।
'নাল ঝোল ঝরেনা কাঁধে আর।'
জীবনে স্কুল এলো।
এলো, এক দুই তিন।
পিঠে ফেলে মাপবো..
ওমা.. দোকানময় ছুটছে।
হরিপদর মেয়ে আর দাদার ছেলে পিঠোপিঠি। দিনে দশ বার জামাকাপড় দেখা। এটা সকালে এটা বিকেলে।
ওটা অষ্টমীর.. বেশ জমকালো!
'না না। পিসির টা পরুক।
ওটা বরং নবমীতে, ফাংশানে..'
তারপর অফিস ফেরতা
প্যাকেট টা ছিনিয়ে নিয়ে ছুট
'মা দেখো।'
বিছানায় প্যাকেট ফেলে
এক ঝটকা নাচ!
তারপর হঠাৎ কবে যেন
রঙ এলো..
খয়েরি ফুলপ্যান্ট টা ভালো না।
আরে বাবা নীল টা তো ছোটো। ফেরত দিতে হবে।
'ডেনিম'..'ডাংরি' নতুন নতুন শব্দ শিখছে হরিপদ তখন।
ক্লান্ত হয়ে রেস্টুরেন্টে
ছোলা বাটোরা
এক চামচ মুখে দেওয়াও চাই..আবার
ঝাল বলে চিত্কার ও।
এই যা: সান গ্লাস কেনা হোলো না তো!!
বাড়ী টায় মানুষ কমলো ধীরে..কার্নিসে বাড়ল বট।
বিজয়ার দিন তুঁতের ওপর মা দূর্গার মুখ আঁকা গালিচা..
হরেন কাকা ..বেতের ধামা..
নাড়ু .. ঢিপ ঢিপ প্রণাম..ফটাস করে কালি ফটকা ..কুয়োয় বালতির ঝপাং শব্দ!
আবার এসো মা।
মা আসে। মা যায়।
টিভির পরিক্রমা আসে। আসে ফ্রেন্ডশিপ ডে। ভ্যালেন্টাইনস ডে জায়গা করে নেয় টিচার্স ডের সঙ্গে।
আর্চিসের কার্ড কখন যে এলো আবার হারিয়ে গেলো মনে করতে পারেনা হরিপদ।
বাড়তে থাকে ওরা ভাই বোনে।
'এটা তো অফারে কেনা'
'সেজো পিসি কক্ষনো
ব্র্যান্ডেড ছাড়া দেয় না'
ট্রায়াল রুমও প্রয়োজনহীন। সাইজ, কালার, ডিজাইন..সিভিভি নম্বর দাও। বাড়ীর দরজায় এসে দাঁড়াবে আলাদিন...
ওটিপি টা বলুন।
'যা..ই' বলে
তরতরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায় ওরা।
পর্দার পাশ থেকে উঁকি দিয়ে ভাইপোর ট্রিম করা .. মেয়ের সঙ্গে মায়ের মাসের ক'টা দিনের গোপন কথা।
সবটাই দেখেছে হরিপদ।
'বলছিলাম না কাকু তোমায়..
এইটা সেইটা..
ইউনিক না!'
হুঁ হুঁ বাবা,
তক্কে তক্কে থাকতে হয়
কেবল একদিনের অফার ছিল'!
'অ ..তাই বুঝি'।
হরিপদর অজ্ঞানতা শোনার সময় নেই সময়ের। দুদ্দাড় ছুটে চলে যায় নতুন প্রজন্ম। মেয়ের সঙ্গে প্যাক খুলতে বসে যায় ভাই বোনে।
প্রজন্মগত তফাৎ বোঝে হরিপদ। যেটুকু বোঝে না ..আপত্তি করেনা।
বেনিফিট অফ ডাউট আরকি!
তাহলে কি করব.. কাকু!
ও কাকু!!
আনমনা হয়ে গেছিল হরিপদ। সম্বিৎ ফেরে ভাইপোর কথায়।
স্নিকার টা বিল করতে বলবো !! দারুন ওটা। ওর থেকে কমে কিছু আর দেখছি না।
হরিপদ কি করবে। দশ হাজারের জুতো!
আশকারা.. প্রশ্রয়। বৌদির অসহায় বোধ। নির্ভরতা। মুহুর্মুহু অন্তর্লীন আক্রমনের মুখে হরিপদ।
অনেক আবদার মিটিয়েছে হরিপদ। হেরে যাবে!
তাহলে কি বেনিফিট অফ ডাউট দিয়ে ক্রিজে রেখে দেবে আম্পায়ার হরিপদ!!
আউট দেবে না!!
অস্থির দোটানায় হরিপদ।
আবার মন বলছে.. কোথাও তো একটা সীমারেখার প্রয়োজন হরিপদ। দাঁড়ি টানতে হয়। অবুঝ কে বোঝাতে হয়!!
'কাকু..ও কাকু..!'
একটা তুবড়ি, হুউউউস করে শব্দ তুলে..অন্ধকার আকাশে অনেকটা উঠে,আলোর রোশনাই রেখে..
নিভলো বোধহয়..!!
আরও পড়ুনঃ মনে হচ্ছে উঠে যাচ্ছে
- More Stories On :
- Haripada
- Satire
- Current Situations
- Shoe
- Old Age
- Fire Works