কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক পরামর্শ দিয়েছে যে শিশুদের অনুষ্ঠানের সময় কোনও জাঙ্ক ফুডের বিজ্ঞাপন প্রচার করা উচিত নয়। এ বিষয় একটি বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। আর সেই সভায় ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের সচিব রহিত কুমার সিং সভাপতিত্ব করেন।
রহিত কুমার সিং ছাড়াও সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র , স্বাস্থ্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সচিবরা। আর সেখানেই শিশুদের অনুষ্ঠানের মাঝে জাঙ্ক ফুডের বিজ্ঞাপন নিষেধ করার প্রস্তাব দেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক। পাশাপাশি শিশুদের জন্য সম্প্রচারিত নানা অনুষ্ঠানে 'ডিএইচএ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড'-এর বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ করার প্রস্তাব দেন ওই অফিসার। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে জানান সম্প্রতি শিশুদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
১৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত বৈঠকে, ডব্লিউসিডি মন্ত্রকের এক আধিকারিক পরামর্শ দিয়েছিলেন যে শিশুদের অনুষ্ঠানের সময় জাঙ্ক ফুডের বিজ্ঞাপনগুলিকে অনুমতি দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। আধিকারিকরা আরও পর্যবেক্ষণ করেছেন যে কার্বনেটেড পানীয়ের বিজ্ঞাপনগুলি একেবারেই দেখানো উচিত নয়, এই ধরনের বেশীরভাগ বিজ্ঞাপণেই সেলিব্রিটিদের "বিপজ্জনক স্টান্ট" করতে দেখা যায়। ডব্লিউসিডি মন্ত্রকের আধিকারিকরা আরও জানিয়েছেন যে, কিছু সংস্থা আছেন যারা তাঁদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে 'ডিএইচএ ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের' মতো স্বাস্থ্য পরিপূরক এর প্রচার করেন এবং তারা দাবি করেন এতে 'মস্তিষ্কের বিকাশ হবে'। মন্ত্রক এই ধরনের প্রচার একেবারেই সমর্থন করে না। পাশাপাশি ওই বৈঠকে ২০২১ সালের কেন্দ্ৰীয় ক্রেতা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা নিয়েও আলোচনা করা হয়। মূলত শিশুদের উদ্দেশ্যে যে বিজ্ঞাপনগুলি তৈরি করা হয়, তাদের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। ২০১৯ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইন অনুযায়ী ওই নির্দেশিকা তৈরি করা হয়।
শিশুদের অনুষ্ঠানে স্টান্ট এ নিশেধাজ্ঞা
এই নির্দেশিকাগুলির প্রথম খসড়াটি ২০২০ তে ক্রেতা সুরক্ষা বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এতে জাঙ্ক ফুডের বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত নির্দিষ্ট বিধান ছিল না। এই খসড়ায়, সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞাপনগুলিতে সেই সমস্ত "আচরণ" নিষিদ্ধ করা যেগুলি শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
খসড়া-র নির্দেশিকাতে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে বাচ্চাদের ব্যবহারযোগ্য পণ্য গুলিতে কোনও ভাবেই উল্লেখ করা যাবে না যে "সেই পণ্য ব্যবহার না করলে তার বিশেষ ক্ষতি হয়ে যাবে"। এবং তাঁদের অনভিজ্ঞতা, বিশ্বাসযোগ্যতা বা বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে ভুল ভাবে কোনও পরিষেবার বৈশিষ্ট্যগুলিকে অতিরঞ্জিত করবে না যা শিশুদের অবাস্তব প্রত্যাশার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
খসড়া নির্দেশিকাতে আরও বলা হয়েছে যে, বিজ্ঞাপনগুলি কোনভাবেই শিশুদের উদ্দেশ্য করে ইঙ্গিত করবে না যে তারা নির্দিষ্ট পণ্য ব্যাবহার না করলে অন্য শিশুরা তাঁকে দেখে উপহাস করবে, অন্যদের থেকে তারা নিকৃষ্ট হয়ে যাবে বা কম জনপ্রিয় হবে। এবং শিশুদের একটি পণ্য বা পরিষেবা কেনার জন্য বা তাদের পিতামাতা, অভিভাবক বা অন্যান্য ব্যক্তিদের প্ররোচিত করার জন্য সরাসরি পরামর্শ যাতে সেই বিজ্ঞাপনে না থাকে। তামাক বা অ্যালকোহল-ভিত্তিক কোনও পণ্য-র প্রচারকারী বিজ্ঞাপনগুলিতে শিশুদের দেখানোর উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ১০ নং ধারায়, কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষকে উপভোক্তাদের অধিকার লঙ্ঘন, অন্যায্য ব্যবসায়িক অভ্যাস, এবং জনসাধারণ এবং উপভোক্তাদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ক্ষতিকর মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত বিষয়গুলি "নিয়ন্ত্রিত" করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের এই আইনে জন্য জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে, যা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া যেতে পারে। এবং বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের সমর্থনকারীদেরকে তিন বছর পর্যন্ত হাজত বাস হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ সম্প্রীতির অন্য ছবি, ছোট্ট ফাতিমা মিলিয়ে দিল ভারত–পাকিস্তানকে
আরও পড়ুনঃ বিধানসভায় নজিরবিহীন ঘটনা, বিজেপির বিক্ষোভের মুখে রাজ্যপাল
- More Stories On :
- Advertisement
- Harassments
- Child
- Omega-3
- Stunt
- Television