আফগানিস্থানে তালিবানদের আধিপত্য কায়েম হয়েছে আবার। ফের আদিমতার পদচিহ্নের সূত্রপাত। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্থানে যে তালিবানি শাসন কায়েম ছিল তা পুনরায় ফিরে এলো। এই দেশের বেশির ভাগ অংশই এখন তালিবানিদের দখলে। শরিয়ত আইন স্থাপন এবং ইসলামিক রাষ্ট্র সামরিক শক্তির আশ্রয়ে গঠন করাই তালিবানদের লক্ষ্য। হঠাৎ করে আবার কেন তালিবানি শাসন বিস্তার? এই প্রশ্নের সম্মুখীন গোটা বিশ্ব, এই উত্থানের পেছনে কাদের মদত রয়েছে - এই প্রশ্ন জাগছে মানুষের মনে। মধ্যযুগীয় বর্বরতা, গণতন্ত্রের হত্যা, সামরিক বাহিনীর কড়া নজরদারি, যেখানে সেখানে মানুষের ন্যুনতম আধিকারে হস্তক্ষেপ, স্বাধীনতা খর্ব করাই হচ্ছে তালিবানদের প্রধান উদ্দেশ্য। কুড়ি বছর পর ফের আফগানিস্থানে তালিবানি শাসন কায়েম আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাচ্ছে - দাবী বিশেষজ্ঞদের।আরও পড়ুনঃ ফাঁকা পড়ে থাকা ভারতীয় দূতাবাসে কী খুঁজছে তালিবান?বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, আফগানিস্থানের সাধারণ মানুষ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে, মহিলারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছেন, স্কুল কলেজ সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সব বন্ধ। যদিও তালিবানদের মুখপাত্র ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, আফগানিস্থানে সমস্ত অফিসের কার্যকলাপ স্বাভাবিক নিয়মে শুরু করার কথা। এছাড়াও তিনি আরও জানান, নারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রয়েছে এবং নারীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে তাঁদের কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন কথা বলছে। আফগানিস্থান থেকে মহিলারা সোশাল মিডিয়াতে জানিয়েছেন, তাঁরা নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ ভাবে ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছেন। সরকারি টেলিভিশনের মহিলা অ্যাঙ্করকে ছাটাই করেছে কাবুল দখল করেই। হাত পিছমোড়া করে বেঁধে এক মহিলার কপালে গুলি করা হচ্ছে, সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।এরপরও কি তালিবানদের ওপরে কোনও ভরসা করা যায়? নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফা তিনিও উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন নারী এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে।আরও পড়ুনঃ তালিবানি আতঙ্কের মাঝেই কেঁপে উঠল আফগানিস্তানমার্কিন সামরিক বাহিনী আফগানদের মাটি ছাড়ার পরই তালিবান শক্তি আফগানিস্থান দখল করেছে। এই ঘটনায় হতবাক বিশেষজ্ঞরা। এখানেই বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে আমেরিকার সংবাদ মাধ্যমেও প্রশ্ন উঠেছে সে দেশের প্রশাসনের কাছে কি আগাম খবর ছিল? একদল আমেরিকান সরকারি কর্মী এমন আভাসের কথাও নাকি জানিয়েছিলেন সে দেশের প্রশাসনকে। আমেরিকান সৈন্য আফগানিস্তানের মাটি ছাড়তেই তালিবানরা প্রবল শক্তিতে দখল নিতে শুরু করে। অস্ত্রের ঝনঝনানি শব্দ যে অনেক দিন বিশ্ববাসী শোনেনি। অস্ত্র ব্যবসাও তলানিতে। অর্থাৎ যুদ্ধ বা গৃহযুদ্ধের দামামা শুরু!আরও পড়ুনঃ টাকা চুরি করে নয়, চটি পড়ে দেশ ছেড়েছি, মুখ খুললেন আসরাফঅন্যদিকে, পাকিস্তান, চীন এবং মধ্য প্রাচ্য-এর দেশগুলো তালিবানদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনটাই দেখা গিয়েছে। কমিউনিস্টরাও সমর্থন করছে ধর্মান্ধদের! রাজনীতির স্বার্থে সবই সম্ভব। তানিবানদের আফগানিস্থানে প্রথম সরকার গঠনের পরবর্তী ঘটনার ইতিহাস সারা বিশ্ব আজও ভুলতে পারেনি। সেই স্মৃতির আতঙ্ক ফের মনে করিয়ে দিচ্ছে তালিবানরা। একবিংশ শতাব্দীতেও গণতন্ত্র বাদ দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনায় বন্দুকের নল যদি ক্ষমতার উৎস হয় তা ভয়াবহ হতে বাধ্য। ফের হত্যালীলা, অত্যাচার শুরু করে দিয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের অফিসগুলোতে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালিয়েছে তারা। এই সভ্যতার যুগে মানুষ উড়োজাহাজের চাকায় ও ছাদে চেপে বসেছে। মাঝ আকাশ থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু- আতঙ্কের ভয়াবহতা এতেই স্পষ্ট। আফগান নারীরা সন্তানদের প্রাণ বাঁচাতে এয়ারপোর্টে আমেরিকান সৈন্যদের হাতে তুলে দিয়েছে। এভাবেই এগোচ্ছে বিশ্বের সভ্যতা! রাস্ট্রসংঘ, উন্নয়নশীল দেশগুলো টিভির পর্দায় বর্বরতা দেখছে। কী কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জ গঠন করা হয় তা-ও এখন প্রশ্নের মুখে। তালিবানদের বর্বরতা কোনও দেশের অভ্যন্তরীন বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় কি? এদেশের বিদ্বজনেরাও কিম্তু চোখে ঠুলি লাগিয়েছেন। তাঁদের মুখেও কিম্তু লিউকেপ্লাস্টার লাগিয়ে নিয়েছেন। কানে গুঁজেছেন তুলো। এসব বিষয় নিয়ে আলেচনা নৈব নব চ।আরও পড়ুনঃ তালিবানি অন্ধকারের মধ্যেই কী আশার আলো? মহিলা সঞ্চালককে সাক্ষাৎকার তালিবান নেতারজানা যাচ্ছে, আফগানিস্তানের পঞ্জশিরে এখনও তালিবানরা প্রবেশ করতে পারেনি। নর্দার্ন অ্যালায়েন্স প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। দেখা যাচ্ছে আফগান মহিলারাও হাতে অস্ত্র তুলে নিচ্ছে। এবার দখলদারির শুরুতে প্রতিরোধ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগের তালিবান জমানায় একাধিক শিল্প-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ধ্বংস করেছে তালিবান গোষ্ঠী। এবারও যে কী করবে তা শীঘ্রই প্রত্যক্ষ করা যাবে।আরও পড়ুনঃ কাবুল বিমাবন্দরে প্রাণ বাঁচানোর লড়াইয়ে ম্লান একরত্তির অকাতর কান্নাএকবিংশ শতাব্দীতে এসেও মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হচ্ছে মানুষ - কেনও? সেই প্রশ্নই ঘুরে-ফিরে আসে। বিশ্বায়ন তথা আধুনিকতার যুগে এই বর্বরতার ছবি পুনরায় ঘটবে। অন্যদিকে বাকি বিশ্বের মানুষ তামাসা দেখবে? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।ডঃ অপর্ণা দেবনাথ