'ছুটির সংস্কৃতি' রাজ্য তথা দেশকে কতটা এগিয়েছে!
বিআর আম্বেদকরের জন্মদিনে জাতীয় ছুটি। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে ছুটি। এমন নানা ছুটি রয়েছে এই দেশে। ঈদ-পুজো-বড়দিনে ছুটি। তাছাড়া শনি-রবিবার তো রয়েছেই। নিত্যনতুন ছুটির বাহানা তো আছে। স্থানীয় উৎসবে ছুটি। তবে এই ছুটির বহর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি স্তরে। দেশ এভাবেই এগিয়ে যাবে! না এসব নিয়ে কারও মুখে টু-শব্দটি নেই। প্রশ্ন তুললেই পাছে রেরে করে ওঠ।মাস মাইনে না বাড়লেই আন্দোলন। নিশ্চয় আন্দোলন করার হক রয়েছে। কিন্তু সরকারি স্তরের অধিকাংশ ক্ষেত্রের চাকরিজীবীরা কখনও ভেবে দেখেছেন তাঁরা বছরে কতদিন ছুটি উপভোগ করেন। আর কতদিন কাজ করেন। সরকার কখনও কি ভেবেছে? জরুরি পরিষেবায় সেই উপায় নেই। সেখানে বরং অনেক সময় একটু বেশিই ডিউটি করতে হয়। তাঁদের কিন্তু যথাযথ আর্থিক সংস্থান করা হয় না, এই অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ছুটির দেশে কখনও দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব। রাজ্যে যেভাবে ছুটির ঘোষণা হয় তাতে তো এখানে ছুটির সংস্কতি বাড়ছে।কাজের গতি বৃদ্ধির কথা চিন্তা করা প্রয়োজন কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারের। বিশেষত শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত। গবেষণার আরও প্রয়োজন রয়েছে। সবাই যে ফাঁক গলে অধ্যাপক হচ্ছেন তা নয়। রীতিমতো পড়াশুনা করে যোগ্যতার সঙ্গে অধ্যাপনা করেন এমন অধ্যাপকের সংখ্যা অনেক। কিন্তু এরই মধ্যে প্রত্যক্ষ রাজনীতি করে কোন যাদুবলে অধ্যাপক হয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ তাতেও সন্দেহ বাড়ে। ছাত্র নেতৃত্বের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে চাকরি জুটে যায়। বাম-তৃণমূল দুই আমলেই তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারওপর এদের কাজের প্রতি অনীহা থাকাই স্বাভাবিক। তৈলমর্দন বা রাজনীতিই যখন মূল পন্থা। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কত ঘন্টা ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ান, লাইব্রেরিতে কতটা সময় দেন, গবেষণায় কতটা মন দেন, এসব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক নয় কি? তাছাড়া নানা সেমিনারের কারিজুড়ি আছে। তাতে পড়াশুনা বা সমাজ ব্যাবস্থায় কতটা উপকারে লাগে তা-ও ভাবনার বিষয়। তারওপর ছুটির বন্যা।এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতির খোঁজে আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে সিবিআই। অর্থের যাদুতে শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। তাঁরাও পড়াবেন! শিক্ষাক্ষত্রে যদি এই হাল হয় আর সবাই বলবে দেশ এগোচ্ছে! সরকারি বিমান সংস্থায় খোঁজ নিয়ে দেখুন বংশপরম্পরায় চাকরি করছেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিন এই বংশপরম্পরার উদাহরণ পাবেনই। এমনকী নানা জেলা শাসকের অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে। চাকরি জুটছে ঘুরপথে, তাঁরা দেশের উন্নয়নে সামিল হবেন কী করে?সরকারি দফতরগুলিতে যেখানে সরসারি মানুষের যোগাযোগ নেই, সেখানে ফাঁকি দেওয়া অনেক সহজ। কোনও দফতরে কর্মীর অভাবে গাধার খাটুনি খাটছে কেউ কেউ, কোনও দফতরে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে লোকজন। দুয়ারে সরকার হোক আর দুয়ারে সমাধান, সরকারি দফতরে নিয়মিত কাজ করলে কি এসব শিবিরের কোনও প্রয়োজন পড়ে?আশির দশকে একবার জাপানে কলকারখানার কর্মী সংগঠন ধর্মঘট ডেকেছিল। তা স্বত্তেও একটি জুতো প্রস্তুতকারি সংস্থায় ১০০% হাজিরা ছিলো। তারা সবাই কাজে এসেছিলো। গনমাধ্যমের লোকেরা কারখানায় গিয়ে দেখে তারা সবাই কাজ করছে। কেউ বসে বা অলস সময় কাটাচ্ছে না। তাঁদের নেতাকে এটা কি ধরনের ধর্মঘট জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, কারখানার উৎপাদন থেকেই আমাদের মাসমাইনে জোটে। তাই আমরা উৎপাদন বন্ধ রাখিনি। আমাদের দাবী আমরা জানিয়ে রেখে শুধু বাম-পায়ের জুতো বানাচ্ছি। দাবী মেনে নিলে ডান পায়েরটা বানিয়ে দেবো, শুধু বাম পায়ের জুতো তো বিক্রি হবে না, আর দাবী মেনে নিলে সময়টাও বেচে যাবে।সব থেকে বড় কথা মণিষীদের জন্ম বা মৃত্যু দিনের ছুটি দিলে কি বিশাল একটা সম্মান জানানো হয়? তাঁরা তো নিজের কর্মের জন্যই খ্য়াতি পেয়েছেন। তাঁরা ছুটি নিয়ে অলস দিনযাপন করেননি। বিআর আম্বেদকর হোন বা মহাত্মাগান্ধী বা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এঁরা দিনরাত এক করে দেশের কথা ভেবেছেন। হাড়ভাঙা খেটেছেন। দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আর স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের সরকার ছুটি দিয়ে কর্মদিবস নষ্ট করছে। কর্মের মাধ্যমে এঁদের সম্মান দেওয়া যায় না? তাতে দেশের অগ্রগতি হবে না দেশ পিছিয়ে যাবে? বরং ছুটির সংখ্যা কমানো প্রয়োজন। তাহলেই মণিষীদের প্রকৃত সম্মান দেওয়া হবে। ছুটির সংস্কৃতি তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে সরকারি দফতরে ফাইলের পাহাড় হবে না। অফিস চলাকালীন ক্যারাম বা তাস খেলার এন্টারমেন্ট আর কত দিন চলবে এই অভাগা দেশে? দেশের অগ্রগতি চাইলে একমাত্র উপায় কর্ম। একেই তো নেপোটিজম করে অনেকের চাকরি জোটে, রয়েছে মন্ত্রীদের কোটা। তাঁদের কাজের নেশা আসবে কোথা থেকে। একেই তো সারা দেশ দুর্নীতির জালে জড়িয়ে গিয়েছে।