পশ্চিম আফ্রিকার অশান্ত দেশ মালিতে ফের ভয়ঙ্কর ঘটনা। জঙ্গি-প্রবণ কোবরি অঞ্চলে সশস্ত্র আততায়ীদের হাতে অপহৃত হয়েছেন পাঁচজন ভারতীয় প্রকৌশলী। বৃহস্পতিবারই তাঁদের তুলে নিয়ে যায় একদল বন্দুকধারী। এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন অপহরণের দায় স্বীকার করেনি। তবে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, অপহরণের খবর সত্যি।
সূত্রের খবর, ওই পাঁচ ভারতীয় একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে মালির পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ একদল সশস্ত্র জঙ্গি তাঁদের গাড়ি ঘিরে ধরে এবং জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাঁদের কোনও খোঁজ মেলেনি। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বাকি ভারতীয় কর্মীদের আপাতত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মালির সেনাশাসিত সরকার জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এই অপহরণের পেছনে কারা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রশাসনের আশঙ্কা— আল কায়দা-ঘনিষ্ঠ Jama’at Nusrat al-Islam wal-Muslimin (JNIM) বা ইসলামিক স্টেটের কোনও গোষ্ঠী এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি ক্রমাগত জেহাদিদের কবলে। আল কায়দা ও ইসলামিক স্টেট-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলি প্রায়শই বিদেশি নাগরিকদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। সম্প্রতি সেপ্টেম্বরে দু’জন আরব ও একজন ইরানি নাগরিককে অপহরণ করেছিল জেএনআইএম জঙ্গিরা। পরে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুক্তিপণের বিনিময়ে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে প্রশাসনের ধারণা, এই অপহরণও মুক্তিপণ-লক্ষ্যেই হতে পারে।
বিদেশমন্ত্রকের তরফে এখনও কোনও সরকারি বিবৃতি জারি হয়নি। তবে নয়াদিল্লির সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় দূতাবাসের মাধ্যমে পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। ভারতীয় দফতরগুলিতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
মালিতে বিদেশিদের অপহরণের ঘটনা নতুন নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফরাসি, কানাডীয় এবং ইতালীয় নাগরিকদেরও জঙ্গিদের হাতে অপহৃত হতে দেখা গেছে। বর্তমানে সেনা জুন্টা ক্ষমতায় থাকলেও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কার্যত অচল। গ্রামের পর গ্রাম জেহাদিদের দখলে।
যদিও পাঁচ ভারতীয় প্রকৌশলীর নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ্যে আনা হয়নি, তবে প্রশাসন বলছে, তাঁরা সম্ভবত বিহার ও উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। ঘটনাটি জানাজানি হতেই তাঁদের পরিবারগুলিতে শুরু হয়েছে চরম উৎকণ্ঠা।
এখন প্রশ্ন একটাই— এই পাঁচ ভারতীয় কি মুক্তিপণের দাবিতে বন্দি, না আরও ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেছে? মালির মরুভূমিতে নিখোঁজ এই প্রকৌশলীদের খোঁজে মরিয়া প্রশাসন।

