ভারত প্রথম অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছিল ১৯০০'তে, ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলেটিক্সে অংশগ্রহণ করে ক্রীড়াবিদ নরম্যান প্রিচার্ড দুটি রৌপ্য পদক লাভ করেন। ভারত প্রথম এশিয় দেশ হিসাবে অলিম্পিক পদক লাভ করে। ২০২০-র ৭টি পদক-ই এখনো অবধি কোন একটি অলিম্পিকে ভারতের প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পদক। এর আগে ২০১২-তে ভারতীয় প্রতিযোগীরা ৫টি পদক লাভ করেন। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে ভারতের হয়ে যে ৭জন পদক লাভ করেন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকাঃ

সাইখোম মীরাবাঈ চানু ভারতীয় ভারোত্তোলক। কর্ণম মালেশ্বরীকে ছাপিয়ে গেলেন মীরাবাঈ চানু। ২১ বছর পর এই ভারোত্তোলকের হাত ধরে অলিম্পিক থেকে পদক এল ভারতের। টোকিও অলিম্পিকে দেশকে প্রথম পদক এনে দিলেন মীরাবাঈ চানু। স্ন্যাচ বিভাগে ৮৭ কেজি ভার তুলেছিলেন। ক্লিন অ্যান্ড জার্ক বিভাগে ১১৫ কেজি তোলেন। মোট ২০২ কেজি ভার তুলে রুপো জেতেন মীরাবাঈ চানু। এই ইভেন্টে ২১০ কেজি ভার তুলে নতুন অলিম্পিক রেকর্ড গড়েছেন চীনের হাউ ঝিউই।। মীরাবাঈ চানু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং কমনওয়েলথ গেমসে একাধিক পদক জিতেছেন। খেলাধুলায় অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী প্রদান করে।

অবশেষে শাপমুক্তি। ৪১ বছরের খরা কাটিয়ে অলিম্পিকে পদক জিতল ভারত। ১৯৮০ মস্কো অলিম্পিকের পর টোকিও। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে জার্মানিকে ৫–৪ ব্যবধানে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতল ভারত। ভারতীয় হকির গৌরব আবার ফিরিয়ে নিয়ে এলেন মনদীপ সিংরা। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ভারতীয় হকি দলকে গোলরক্ষক: পি আর শ্রীজেশ ডিফেন্ডার: হরমনপ্রীত সিং, রূপিন্দর সিং, সুরেন্দ্র কুমার, অমিত রোহিদাস, বীরেন্দ্র লাকড়া। মিডফিল্ডার: হার্দিক সিং, মনপ্রীত সিং, বিবেক সাগর প্রসাদ, নীলকান্ত শর্মা, সুমিত। ফরোয়ার্ড: সামসের সিং, দিলপ্রীত সিং, গুরজান্ত সিং, ললিত কুমার উপাধ্যায়, মনদীপ সিং। স্ট্যান্ড-বাই: কৃষাণ পাঠক, (গোলরক্ষক) বরুণ কুমার (ডিফেন্ডার), সিমরাঞ্জিত (মিডফিল্ডার)

পুসারলা ভেঙ্কটা সিন্ধু, তিনি জ্যাং নিং এর পর দ্বিতীয় মহিলা যিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পাঁচ বা তার বেশি পদক জিতেছেন। তিনি ২০১৬ র গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে (রিও) ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন, ফাইনালে পৌঁছানো প্রথম ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হন। স্পেনের ক্যারোলিনা মারিনের কাছে হেরে যাওয়ার পর তিনি রৌপ্য পদক জিতেছিলেন। তিনি ২০২০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে (টোকিও) তার টানা দ্বিতীয় অলিম্পিক যোগদান করেন এবং মহিলা বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক জয়লাভ করেন, সিন্ধু প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে দুটি ব্যক্তিগত অলিম্পিক পদক জিতেছেন।

মেরি কম ব্যর্থ হওয়ার পর অলিম্পিকে মহিলাদের বক্সিংয়ে লাভলিনা বরগোঁহাইকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল দেশবাসী। মহিলাদের ৬৯ কেজি ওয়েল্টারওয়েট বিভাগের সেমিফাইনালে উঠে স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ফাইনালের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল লাভলিনা বরগোঁহাইয়ের কাছে। সেমিফাইনালে বিশ্বের ১ নম্বর তারকা তুরস্কের বুসেনাজ সুরমেনেলির কাছে হেরে সোনা জয়ের স্বপ্ন শেষ ভারতের এই মহিলা বক্সারের। সেমিফাইনালে হারলেও ব্রোঞ্জ জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে লাভলিনা বড়গোহাঁইকে। তিনি ২০১৮ এ আই বি এ মহিলা বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১৯ এআইবিএ মহিলা বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন। তিনি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রথম ইন্ডিয়া ওপেন ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং টুর্নামেন্টে স্বর্ণপদক এবং গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ইন্ডিয়া ওপেন আন্তর্জাতিক বক্সিং টুর্নামেন্টে রৌপ্য পদক জিতেছিলেন। লাভলিনা হলেন প্রথম মহিলা ক্রীড়াবিদ এবং আসামের দ্বিতীয় বক্সার যিনি অলিম্পিকে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০২০ সালে তিনি অর্জুন পুরস্কার পান।

অলিম্পিকের আগে প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন। ২৫ দিন অনুশীলন করতে পারেননি। তা সত্ত্বেও টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতে চমকে দিয়েছেন বজরং পুনিয়া। টোকিও অলিম্পিকের আগে পোল্যান্ডে র‌্যাঙ্কিং ইভেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন বজরং পুনিয়া। লক্ষ্য ছিল অলিম্পিকের প্রস্তুতি। পোল্যান্ড থেকে তারপর চলে যান রাশিয়ায়। ২৫ জুন রাশিয়ায় আলি আলিয়েভ নামে একটা প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন প্রস্তুতির জন্য। সেমিফাইনালে ইওরোপীয়ান অনূর্ধ্ব ২৩ চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জয়ী আবুলমাঝিদ কুদিয়েভের বিরুদ্ধে বাউটের সময় ডানপায়ের হাঁটুতে চোট পান বজরং পুনিয়া। সেই চোটের জন্য প্রায় ২৫ দিন অনুশীলন করতে পারেননি। রাশিয়ার এক ছোট গ্রামে মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসের সৌজন্যে রিহ্যাব করতে পেরেছিলেন। সেমিফাইনালে হাজি আলিয়েভের কাছে হারের পর টোকিও থেকে বাবার সঙ্গে কথা বলেছিলেন বজরং পুনিয়া। বাবা বলবন সিংকে কথা দিয়েছিলেন ব্রোঞ্জ জিতেই টোকিও থেকে দেশে ফিরবেন। কথা রাখলেন ভারতের এই কুস্তিগীর। পুরুষদের কুস্তিতে ৬৫ কেজি ফ্রিস্টাইল বিভাগে কাজাখস্তানের দাউলেত নিয়াজবেকভকে ৮–০ ব্যবধানে উড়িয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন বজরং পুনিয়া। সোনা কিংবা রুপো হাতছাড়া হলেও অবশেষে ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে সফল এই ভারতীয় কুস্তিগীর।

প্রথমবার অলিম্পিকে নেমেই বাজিমাত নীরজ চোপড়ার। টোকিওতে পুরুষদের জ্যাভেলিন থ্রো–তে সোনা জিতে ইতিহাস গড়লেন এই ভারতীয় অ্যাথলিট। ১২১ বছর পর ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে পদক এল ভারতের। ১৩ বছর পর ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতলেন কোনও ভারতীয়। টোকিও অলিম্পিকে পোস্টার বয় হলেন নীরজ চোপড়া। ২০১৬ আইএএএএফ ওয়ার্ল্ড অনুর্ধ ২০ চ্যাম্পিয়নশিপে চোপড়া ৮৬.৪৮ মিটার জ্যাভেলিন ছুঁড়ে অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন। তিনি ২০১৮ র এশিয়ান গেমসে ভারতের হয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পতাকা বহন করেছিলেন, ওটা তার প্রথম এশিয়ান গেমস ছিল। তিনি ২০১৮র এশিয়ান গেমস (৮৮.০৭ মিটার) এবং ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক জয়লাভ করেছিলেন। তিনি সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় স্বর্ণপদক জয়ী এবং একমাত্র খেলোয়াড় যে তাঁর অভিষেক অলিম্পিকেই সোনা জিতেছে।

পুরুষদের ফ্রিস্টাইল কুস্তির ৫৭ কেজি বিভাগের ফাইনালে রাশিয়ান অলিম্পিয়ান জাউর উগুয়েভের কাছে হেরে রুপো জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হল এই ভারতীয় কুস্তিগীরকে। দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জাউর উগুয়েভের কাছে ৭–৪ ব্যবধানে হারতে হয়েছে রবি কুমারকে। যদিও তাঁর হাত ধরেই টোকিও অলিম্পিকে ভারতের পঞ্চম পদকটি নিশ্চিত হয়েছে। তিনি ২০১৯ বিশ্ব রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপের ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। এবং দুবারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন। দাহিয়া কিশোর বয়সে কুস্তি শুরু করেন এবং ৫৫ কেজি ফ্রি স্টাইল বিভাগে সালভাদর ডি বাহিয়াতে ২০১৫ জুনিয়র ওয়ার্ল্ড রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পদক জিতেছিলেন। তিনি ২০১৭তে চোট পেয়েছিলেন যা তাকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিযোগিতা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। চোট সারিয়ে তার প্রত্যাবর্তন হয় বুখারেস্টে ২০১৮ বিশ্ব অনূর্ধ ২৩ রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে, সেখানে তিনি রৌপ্য পদক জিতেছিলেন।