গল্পের মাঝে এসে হাজির চা আর পকোড়া। কারোর সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই,সবাই বিভোর হয়ে রয়েছে গল্পে।
মামা থেমে বললেন নে সবাই চা টা খেয়ে নে তারপর আবার শুনবি।
সবাই একসাথে বলে উঠলো চা খেতে খেতেই শুনি।তুমিও চা খেতে খেতে বলে যাও।
বেশ বাবা বেশ তাই হবে, বলে মামা হাসলেন।
আবার শুরু করলেন---
এরপর কেটে গেছে অনেক গুলো বছর, হয়েছে অনেক পরিবর্তন।জমিদার বাবু নেই,বড়ো ছেলেও নেই সব কিছু তখন আমার দাদুর ঘাড়ে। আর শক্ত হাতে হাল ধরে রয়েছেন গিন্নি মা।
একদিন হটাত ধূমকেতুর মতো একমুখ দাড়ি গোঁফ নিয়ে হাজির ছোট চন্দ্র আর ঘটনা চক্রে সেদিন গ্রামের প্রায় শেষ সীমানায় একটা মরা পুকুর থেকে পাওয়া যায় একটা কঙ্কাল। পুকুরটা এখন মজে গেছে ঠিকই কিন্তু একসময় এর গভীরতা ছিলো অনেক। গ্রামের যারা এখন মধ্যবয়স্ক তারা চাপা গুঞ্জন তুলল যে ওটা সেই ভবানী ঠাকুরের মেয়ের, যে হটাত করেই হারিয়ে গেছিল।
এ খবর জমিদার বাড়িতেও পৌঁছালো, কিন্তু সেখানে তখন ছোটোবাবুর আসার আনন্দ।তবু গিন্নিমা বলে উঠলেন মহাদেবের মনে কি আছে তিনিই জানেন আজই আমার চন্দ্রও ফিরে এলো।
চন্দ্র এসে কিন্তু চুপচাপই রয়েছে।মায়ের সঙ্গে টুকটাক কথা বলছে। এর মাঝে যখন গ্রামের পুকুরের খবরটা এলো সে হটাত অস্থির হয়ে উঠলেন। তারপর নিজের ঘরে গিয়ে সেই যে দরজা দিলেন আর খুললেন না।
হরিয়া তো ছোটো বাবু কে দেখে খুব খুশী হয়ে তাকে বললো দেখো ছোটবাবু হামি সব ঠিক রেখেছি।তুমার উয়ো ছবি সব একদম ঠিক আছে।
হরিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ঘরে ঢুকে গেছিলেন তিনি।
রাতে কিছু খায়নি সে।দরজাও খোলেনি।সকালবেলা অনেকবেলা পর্যন্ত দরজা না খোলায় আর ভিতর থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে দেখা গেলো শ্যামার ছবি বুকে নিয়ে চন্দ্রশেখরের নিথর দেহ শুয়ে আছে।
গিন্নিমা শুধু বললেন ও শান্তি পেল, ভবানী ঠাকুরের অভিশাপ ফলতে লেগেছে।
এরপর সত্যি কোনো ছেলে তিরিশ পেরোয়নি।
শুধু আমি টিকে আছি। যখন আমার চাঁদ এলো তখন আমি বুঝলাম এবার হয়তো আমাদের অপেক্ষার অবসান হবে।
কিন্তু সেটা যে উজানের বন্ধু হয়ে আমার বাড়িতে আসবে ভাবিনি।
ভাবনা একটা হতো যে কিভাবে সে আসবে।চাঁদ ও ছোটো থেকে মানে তরুন বয়স থেকে স্বপ্নে ওর মুখ আবছা দেখতে থাকে।
এবার মা রাশি আমাকে বলতো তোর এখানে এসে কি মনে হয়েছে?
রায়া বলে ওঠে ও তো এসে থেকেই বলে যাচ্ছে আমি আগে এসেছি, এখানে এটা আছে, ওখানে ওটা ছিলো।
মামা বললেন যেমন
বাগানে ঘুরতে ঘুরতে পিছন দিকে এক জায়গায় বলল এখানে একটা আম গাছ ছিলো ।
তারপর ছাদের ঘরে যাওয়া তো আমরা সবাই দেখলাম ।
এরপর আর কোনো সন্দেহ থাকার জায়গাই নেই যে ও শ্যামা।
রাশি আর চাঁদ এবার দুজনেই একে একে বলল যে আমরা তো দুজনে দুজনকে দেখেই চিনেছি এ স্বপ্ন তে দেখা সেই মুখ যা আমাদের জীবনকে রহস্যে মুড়ে রেখেছিল।
এবার মামা বললেন একবার রাশির মা বাবার সঙে কথা বলতে হবে, আমাকে ওনাদের ফোন নম্বর টা দে।
আচ্ছা রাশি তোকে ছাদে কে নিয়ে গেছিল?
একজন বয়স্ক লোক ।হ্যাঁ মনে পড়ছে না ঠিক----- হ্যাঁ হ্যাঁ হরিয়া।
হ্যাঁ হরিয়া ছাড়া আর কে হবে? ওই নাকি দীর্ঘদিন ঐ ঘর দেখে শুনে রাখত আর ঐ ঘরের সামনেই নাকি মরে পড়েছিল ।
যাক মহাদেবের অসীম কৃপায় আজ আবার যে দুজন কে পেয়েছি, এবার আর কোনো ভুল করতে চাই না। আমি আজই রাশির বাবা মা কে ফোন করবো। সেরকম হলে ওনাদের এখানে আসতে বলবো।
সবাই কিন্তু চুপচাপ হয়ে গেছে সেই সময়ের এই বেদনা বিধুর প্রেমের কাহিনী শুনে।রাশির চোখে জল, চাঁদ কখন যেন রাশির পাশে এসে বসেছে।যেন দুজনে ফিরে যেতে চাইছে সেই সুদূরে যেখানে ওদের প্রেম প্রকাশ পাওয়ার আগেই মুছে গেছিল।
সমাপ্ত
লেখিকাঃ রাখি রায়
আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- প্রথম পর্ব
আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- দ্বিতীয় পর্ব
আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- তৃতীয় পর্ব
আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- চতুর্থ পর্ব
রাখি রায়-র কলমে
আরও পড়ুনঃ বিষাক্ত গোলাপ - (ছোট গল্প)
আরও পড়ুনঃ রক্তের টান - প্রথম পর্ব
আরও পড়ুনঃ রূপু আমাকে ক্ষমা করিস
আরও পড়ুনঃ নতুন প্রভাত
- More Stories On :
- The mystery of the palace
- Serial Story
- 2nd Edition
- Birbhum