বিহার মানেই রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রদেশ। আর আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে সেই অগ্নিপরীক্ষা। সকাল ৭টা বাজতেই রাজ্যের ১৮ জেলার ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। কোথাও ভোট চলবে বিকেল ৬টা পর্যন্ত, আবার নিরাপত্তার কারণে কিছু বুথে বিকেল ৫টার মধ্যেই শেষ হবে ভোট। সকাল ৯টা পর্যন্ত রাজ্যে ভোট পড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। প্রথম দফার এই ভোটেই নির্ধারিত হতে পারে এনডিএ জোটের ভবিষ্যৎ, কারণ নীতীশ সরকারের ১৫ জন মন্ত্রী আজ ভাগ্যপরীক্ষায় নেমেছেন।
এর মধ্যে রয়েছেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী (তারাপুর) ও বিজয় কুমার সিনহা (লখীসরাই)। আলিনগরে বিজেপির প্রার্থী গায়িকা মৈথিলি ঠাকুর। অন্যদিকে মোকামা থেকে জেডিইউ টিকিটে লড়ছেন বিতর্কিত ‘বাহুবলী’ প্রাক্তন এমএলএ অনন্ত সিং, যার বিরুদ্ধে রয়েছে খুনের অভিযোগ। জন সুরাজের সমর্থক দুলারচাঁদ যাদব হত্যাকাণ্ডের পরেও তাঁর প্রভাব এলাকায় এখনো অটুট।
প্রথম দফার ভোটে মুখোমুখি হয়েছেন রাজনীতির প্রায় সব তারকাই। মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তেজস্বী যাদব লড়ছেন রাঘোপুর থেকে, আর তাঁর বড় ভাই তেজপ্রতাপ যাদব লড়ছেন মহুয়া থেকে। ভোটের সকালে পটনায় ভোট দিতে যান লালুপ্রসাদ যাদব, রাবড়ী দেবী ও তাঁদের দুই পুত্র। ভোট দিয়ে বেরিয়ে লালু বলেন, “বদল হবেই।” অন্যদিকে তেজস্বী ভোটের পর সাংবাদিকদের বলেন, “জনতা এবার পরিবর্তন চায়, আমরা আশাবাদী।”
ভোটের সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লেখেন, “আজ গণতন্ত্রের উৎসব। সকল ভোটারদের অনুরোধ, উৎসাহভরে ভোট দিন। আগে ভোট, পরে আহার ও বিশ্রাম।” তাঁর সেই পোস্ট ঘিরে ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
বৃহস্পতিবারের ভোট চলছে পাটনা, দ্বারভাঙ্গা, মধেপুরা, সহরসা, মুজফ্ফরপুর, গোপালগঞ্জ, সিওয়ান, সারণ, বৈশালী, সমস্তিপুর, বেগুসরাই, লখীসরাই, মুঙ্গের, শেখপুরা, নালন্দা, বক্সার ও ভোজপুরে। এই জেলাগুলির বেশিরভাগ জায়গাতেই আরজেডির ভালো প্রভাব রয়েছে। এনডিএর হয়ে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে জেডিইউ—৫৭ জন। বিজেপি লড়ছে ৪৮ আসনে, আর চিরাগ পাসওয়ানের দল লড়ছে ১৩ আসনে। বিপরীতে মহাগঠবন্ধনের সবচেয়ে শক্তিশালী দলে লালুর আরজেডি লড়ছে ৭২ আসনে, কংগ্রেস ২৪-এ, আর লিবারেশন ১৪ আসনে।
এই দফায় ভোট দিচ্ছেন প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ ভোটার। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রাজ্যজুড়ে ৪৫ হাজার বুথে ভোট হচ্ছে, এবং প্রতিটি বুথে রয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এখনও পর্যন্ত কোনো বড় অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি।
প্রথম দফার ভোটে মাঠে নেমেছেন শুধু রাজনীতিকই নন, বিনোদন জগতের মুখরাও। আলিনগরে লড়ছেন গায়িকা মৈথিলি ঠাকুর, ছপরায় আরজেডি প্রার্থী হয়েছেন ভোজপুরী গায়ক খেসারীলাল যাদব। ফলে ভোটযুদ্ধ এখন পরিণত হয়েছে এক তারকাময় সংঘর্ষে।
আগামী ১১ নভেম্বর হবে দ্বিতীয় তথা শেষ দফার ভোট, আর গণনা হবে ১৪ নভেম্বর। বিহারের রাজনীতি এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে এক ঐতিহাসিক মোড়ে—নীতীশ- মোদি জোট কি আবার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, নাকি লালু পরিবারের ‘মহাগঠবন্ধন’ ফিরিয়ে আনবে বিহারে নতুন অধ্যায়? ভোটযুদ্ধের প্রথম দিনই তার ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবার লড়াই সহজ হবে না কারও জন্যই।
আরও পড়ুনঃ Fire Breaks Out: ধোঁয়ার ঢাকল রাস্তা, দমকল পৌঁছুতে দেরি — দাউ দাউ করে জ্বলছে ডালহৌসির ওয়ার্কশপ!
- More Stories On :
- Bihar
- Assembly elections

